বাপের স্থানে বিদায় লয়ে ইন্দ্রজিৎ।
ত্রিজটা রাক্ষসী বলি ডাকিল ত্বরিত।।
রাবণ বলে ত্রিজটা গো যাহ একবার।
চূর্ণ বলে আইস সীতার অহঙ্কার।।
পুষ্পক বিমানে লহ সীতারে তুলিয়া।
ক্ষণেক আইস তুমি আকাশে ভ্রমিয়া।।
রাম লক্ষ্মণ পড়েছেন বন্ধন নাগপাশে।
স্বচক্ষে দেখুক সীতা থাকিয়া আকাশে।।
রাম লক্ষ্মণ মৈলে সীতা হইবে নৈরাশ।
আমারে ভজিবে সীতা মনে পেয়ে ত্রাস।।
রাবণের আজ্ঞা যদি ত্রিজটা পাইল।
রাম লক্ষ্মণের কথা সীতাকে কহিল।।
রাম লক্ষ্মণ পড়িয়াছে ইন্দ্রজিতের বাণে।
স্বামী দেবর দেখ যদি আইস মোর সনে।।
চলিলেন সীতাদেবী ত্রিজটা সংহতি।
রথে চড়ি দুই জন যান শীঘ্রগতি।।
রাম লক্ষ্মণ পড়ে নাগপাশে-বন্ধন।
মাথায় হাত সীতাদেবী করিছে রোদন।।
মোর পোহাইল বুঝি আজি কালরাতি।
অভাগিনী হারালাম তোমা হেন পতি।।
শিশুকালে ছিলাম যখন পিতৃ-ঘরে।
অবিধবা বলে লোকে কহিত আমারে।।
সকলের বাক্য মোর হৈল বিপরীত।
ধূলাতে পড়িলে প্রভু হয়ে অসম্বিত।।
বধিয়া তাড়কাসুর, তুষ্ট কৈলে তিন পুর,
জনকের পর পূর্ণ করি।
হরের ধনুকখান, ভাঙ্গি কৈলা খান খান,
ধন্য কৈলা জনকের পুরী।।
বিবিধ বিলাপ করি, শ্রীরামের গুণ স্মরি,
কান্দে সীতা নহে নিবারণ।
কৈকেয়ী সহাই দোষে, আসিয়া কানন বাসে,
বিপাকেতে হারালে জীবন।।
ভতর করিল স্তুতি, না করিলে অনুমতি,
বনে আইলে সত্যে করি ভর।
রত্নময় সিংহাসন, পরিহরি কি কারণ,
কোমলাঙ্গ ধূলাতে ধূসর।।
অযোধ্যার ছত্রধর, আজ্ঞাকারী চরাচর,
সাগর বান্ধিয়া হৈলা পার।
আমি কি অভাগ্যবতী, হারালাম রাম-পতি,
তব মুখ না দেখিব আর।।
আমা অন্বেষণ করি, এলে প্রভু লঙ্কাপুরী,
দুঃখ মোর না হৈল মোচন।
দুরাচার ইন্দ্রজিত, কৈল যুদ্ধ বিপরীত,
তাহে প্রভু হারালে জীবন।।
ত্রিজটার হাতে ধরি, বিস্তর বিনয় করি,
বলিছেন করুণ বচন।
তোমায় সহায় গুণে, যাব আমি স্বামী সনে,
রথ রাখ না কর গমন।।
সীতার রোদন শুনি, হইল আকাশবাণী,
কভু রামের নাহিক বিনাশ।
তোমারে উদ্ধার করি, যাইবেন অযোধ্যাপুরী,
রচিল পণ্ডিত কৃত্তিবাস।।