১৮৮তম অধ্যায়
শিখণ্ডীর জন্মবৃত্তান্ত
দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে পিতামহ! শিখণ্ডী প্রথমতঃ কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করিয়া কি প্রকারে পুরুষত্বপ্রাপ্ত হইলেন, এক্ষণে আপনি ইহা কীর্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “হে রাজন! দ্রুপদরাজের প্রিয়মহিষী অপুত্রা ছিলেন। দ্রুপদরাজ পুত্ৰলাভ ও আমাদিগের বন্ধসাধনাৰ্থ অতি কঠোর তপস্যার অনুষ্ঠান করিয়া ভগবান ভবানীপতিকে সন্তুষ্ট করিয়া কহিলেন, “ভগবন! ভীষ্মকে বিনাশ করিবার নিমিত্ত আমার এক পুত্র উৎপন্ন হউক।”
“শঙ্কর কহিলেন, “হে মহারাজ! তোমার এক কন্যা উৎপন্ন হইয়া পরিণামে পুত্ৰত্বপ্রাপ্ত হইবে। তুমি এক্ষণে নিবৃত্ত হও; আমি যাহা কহিলাম, কদাচ ইহার অন্যথা হইবে না।”
“তখন দ্রুপদরাজ নগর প্রবেশ করিয়া স্বীয় মহিষীকে কহিলেন, “প্রিয়ে! আমি পরম যত্নসহকারে ভগবান শঙ্করকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করিলে তিনি কহিলেন-“হে দ্রুপদরাজ! তোমার এক কন্যা জন্মগ্রহণ করিয়া পশ্চাৎ পুত্ৰত্বপ্রাপ্ত হইবে।” আমি পুনর্ব্বার তাহার নিকট প্রার্থনা করিলে তিনি কহিলেন “আমি যাহা কহিলাম, কখনো তাহার অন্যথা হইবে না।”
“অনন্তর মহিষী ঋতুকাল উপস্থিত হইলে পবিত্র হইয়া দ্রুপদরাজসন্নিধানে গমন ও বিধি অনুসারে গর্ভধারণ করিলেন। গৰ্ভ ক্ৰমশঃ পরিবর্দ্ধিত হইতে লাগিল। রাজা পুত্ৰস্নেহপরবশ হইয়া পরমসুখে তাঁহার পরিচর্য্যা করিতে প্ৰবৃত্ত হইলেন এবং মহিষী যখন যেরূপ অভিলাষ করিতেন, তিনি অবিলম্বেই তাহা সম্পাদনা করিতে লাগিলেন।
“অনন্তর রাজমহিষী যথাকলে এক সর্ব্বাঙ্গসুন্দরী কন্যা প্রসব করিয়া সেই কন্যাকে পুত্ৰ বলিয়া সর্ব্বত্র প্রচার করিতে লাগিলেন। অপুত্ৰক রাজা দ্রুপদ রুদ্রদেবের বাক্যে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিয়া পুত্রের ন্যায় সেই প্রচ্ছন্ন [পুত্র বলিয়া প্রচারিত] কন্যার সমুদয় জাতকর্ম্ম অনুষ্ঠান করিলেন। রাজমহিষী কন্যাকে পুত্ররূপে প্রচার করিয়া এই অদ্ভুত বৃত্তান্ত এরূপ গোপনে রক্ষা করিতে লাগিলেন যে দ্রুপদরাজ ব্যতিরেকে নগরে কোন ব্যক্তিই এই বিষয়ের বিন্দুবিসর্গও অবগত হইতে সমর্থ হয় নাই। ঐ কন্যার নাম শিখন্ডী। হে রাজন! আমি চরবাক্য, দেববাক্য ও অম্বার তপানুষ্ঠানের দ্বারা এই বিষয় বিদিত হইয়াছি।”