১৮৫তম অধ্যায়
শরীরস্থ অগ্নিবায়ুর বিবরণ
“ভরদ্বাজ কহিলেন, “ভগবন্! অগ্নি পাঞ্চভৌতিক দেহ লাভপূৰ্ব্বক কিরূপে প্রাণীগণের দেহে রহিয়াছে এবং বায়ুই বা ঐরূপ শরীর লাভ করিয়া কি প্রকারে জীবগণের দেহের চেষ্টা সমাধান করিতেছে?
“ভৃগু কহিলেন, ‘ব্ৰহ্মণ! আমি অগ্রে অগ্নির বিষয় কীৰ্ত্তন করিয়া, বলবান অনিল প্রাণীগণের দেহে যেরূপে বিচরণ করিতেছে, তাহা কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। অগ্নি প্রাণীগণের মস্তকে অবস্থানপূৰ্ব্বক শরীররক্ষা এবং প্রাণবায়ু সেই মস্তকস্থিত অগ্নিসমভিব্যাহারে সমুদয় শরীরে ব্যাপ্ত হইয়া বিচরণ করিতেছে। প্রাণ ভূতগণের আত্মা, সনাতন পুরুষ, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার ও রূপাদি বিষয়স্বরূপ। প্রাণ দেহমধ্যে অবস্থানপূৰ্ব্বক অগ্নিকে সৰ্ব্বত্র পরিচালিত করিতেছে এবং সমানবায়ু উহাকে পৃষ্ঠদেশে লইয়া যাইতেছে। অপানবায়ু বস্তিমূল [লিঙ্গমূল] ও গুহ্যদেশে বহ্নিকে আশ্রয় করিয়া মূত্র ও পুরীষকে বহন করিতেছে। যাহা একমাত্র হইয়া লোকে প্রযত্ন, কৰ্ম্ম ও বল এই তিন বিষয়ে অবস্থিত আছে, অধ্যাত্নবিৎ [সূক্ষ্ম—সার-ধৰ্ম্মজ্ঞ] পণ্ডিতেরা তাহাকে উদানবায়ু বলিয়া নির্দেশ করিয়া থাকেন। ব্যানবায়ু মনুষ্যের শরীরসন্ধিতে অবস্থিত রহিয়াছে। অগ্নি শরীরমধ্যে বিস্তীর্ণ ও সমানবায়ুদ্বারা সঞ্চালিত হইয়া লোকের রস, ত্বগাদি [চর্ম্ম-আদি] ও পিত্তাদি দোষ পরিপাক এবং নাভির অধোভাগে অবস্থিত অপান ও উৰ্দ্ধগত প্রাণের মধ্যস্থলে নাভিমণ্ডলে অবস্থিতি করিয়া উহাদের সাহায্যে অন্নাদি পরিপাক করিতেছে। আস্য-দেশ হইতে পায়ু পৰ্য্যন্ত একটি স্রোত আছে, ঐ স্রোতের অন্তভাগেই গুহ্য। সেই স্রোতের চতুর্দ্দিক হইতে দেহমধ্যে অসংখ্য নাড়ী বিস্তীর্ণ রহিয়াছে। জঠরানল শরীরস্থ প্রাণাদি পঞ্চবায়ুর সাহচর্য্যে ঐ সমুদয় শিরাদ্বারা সমুদয় শরীরে বিস্তীর্ণ হইতেছে। ঐ অনলের নাম উম্মা; ইহাই প্রাণীগণের ভুক্ত অন্ন পরিপাক করিয়া থাকে। প্রাণবায়ু অগ্নিবেগপ্রভাবে গুহ্যদেশ পৰ্য্যন্ত গমন করে এবং-তথা হইতে প্রতিহত হইয়া পুনরায় মস্তকে আগমনপূৰ্ব্বক অগ্নিকে উৎক্ষিপ্ত করিয়া থাকে। নাভির অধোভাগে পক্কশয় [পাকস্থলী], ঊদ্ধভাগে আমাশয় [আমাধার—আহার করা মাত্র ভুক্তদ্রব্য অবিকল অবস্থায় যে স্থানে জমা হয়। ঐ স্থলে আম অর্থাৎ কাঁচা অবস্থায় থাকিয়া অগ্নিতে পক হইয়া বায়ুসাহায্যে পাক্কাশয়ে যায়। এইজন্য একটির নাম আমাশয় ও অপরটির নাম পক্কাশয়] এবং জঠরানলে সমুদয় ইন্দ্রিয় অবস্থান করিতেছে। প্রাণীগণের ভুক্ত অন্নের রস প্রাণাদি পাঁচ ও নাগকৰ্ম্মাদি পাঁচ এই দশবিধ বায়ু প্রভাবে নাড়ীসমুদয়দ্বারা শরীরমধ্যে উৰ্দ্ধ, অধঃ ও তিৰ্য্যগভাবে পরিচালিত হয়। আস্যদেশ হইতে পায়ু পৰ্য্যন্ত যে স্রোত বিদ্যমান আছে, উহা যোগীদিগের পথ। যে মহাত্মারা ঐ পথদ্বারা আত্মাকে মস্তকে সমানীত করিতে পারেন, তাঁহাদেরই ব্রহ্মপদ লাভ হইয়া থাকে। হে ব্ৰহ্ম! এইরূপে অগ্নি প্রাণ, অপান প্রভৃতি পঞ্চবিধ বায়ুর সহযোগে শরীরমধ্যে প্রদীপ্ত হইয়া বিচরণ করিতেছ। ”