১৮০তম অধ্যায়
কর্ণ-ঘটোৎকচযুদ্ধে কৌরবাত্রাস
সঞ্জয় কহিলেন, “হে মহারাজ। এইরূপে রাক্ষসরাজ ঘটোৎকচ অলায়ুধকে বিনাশ করিয়া হৃষ্টমনে সেনামুখে অবস্থানপূর্ব্বক সিংহনাদ পরিত্যাগ করিতে লাগিলেন। সৃঞ্জয়গণ সেই ভয়ঙ্কর শব্দশ্রবণে কম্পিত হইয়া উঠিল। আপনার পক্ষীয় বীরগণ সেই ভীমতনয়ের ভীষণ শব্দ শ্রবণ করিয়া সাতিশয় ভীত হইল। অনন্তর ঐ সময় মহাবীর কর্ণ পাঞ্চালগণের প্রতি ধাবমান হইয়া ধৃষ্টদ্যুম্ন, ও শিখণ্ডীকে লক্ষ্য করিয়া আকর্ণপূর্ণ নতপর্ব্ব দশ দশ বাণে বিদ্ধ করিলেন এবং নারাচনিকর বিস্তারপূর্ব্বক যুধামন্যু, উত্তমৌজা ও সাত্যকিকে বিকশিত করিতে লাগিলেন। তখন তাঁহারাও দক্ষিণ ও বামহস্তে শরনিকর পরিত্যাগ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তৎকালে তাঁহাদিগের কার্মুকসকল কেবল মণ্ডলাকারে লক্ষিত হইতে লাগিল। তাহাদের জ্যানির্ঘোষ, তলধ্বনি ও রথচক্রের ঘর্ঘরশব্দ বর্ষাকালীন মেঘগর্জ্জনের ন্যায় নিতান্ত তুমুল হইয়া উঠিল। ঐ সময় রণস্থল জলদের ন্যায় শোভমান হইল। জ্যা ও চক্রের ধ্বনি উহার গভীর নিঃস্বন, কার্মুক বিদ্যুদ্দাম ও শরজাল বারিধারাতুল্য প্রতীয়মান হইতে লাগিল। তখন আপনার পুত্রগণের হিতানুষ্ঠানে নিরত মহাবীর কর্ণ সমরাঙ্গনে শৈলের ন্যায় অপ্রকম্পিতভাবে অবস্থানপূর্ব্বক সেই অদ্ভুত শরবর্ষণ করিয়া অশনিসদৃশ তোমর ও শাণিতশরনিকরে শত্রুগণকে সমাহত করিতে আরম্ভ করিলেন। তাঁহার শরাঘাতে কাহারও ধ্বজদণ্ড খণ্ড খণ্ড, কাহারও কলেবর ছিন্নভিন্ন, কেহ সারথিশূন্য, কেহ বা অশ্বশূন্য হইল। এইরূপে সেই বীরগণ সূতপুত্রের ভীষণশরে সমাহত ও নিতান্ত অসুস্থ হইয়া ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠিরের সৈন্যমধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন। ঐ সময় মহাবীর ঘটোৎকচ তাঁহাদিগকে ছিন্নভিন্ন ও সমরপরাঙ্মুখ দেখিয়া ক্রোধে একান্ত অধীর হইয়া উঠিলেন এবং সিংহনাদ পরিত্যাগপূর্ব্বক সেই সুবর্ণ ও রত্নখচিত রথারোহণে কর্ণসন্নিধানে সমুপস্থিত হইয়া তাঁহাকে বজ্রসঙ্কাশ শরনিকরে বিদ্ধ করিতে লাগিলেন। তৎপরে সেই দুই মহাবীর কর্ণি, নারাচ, নালীক, দণ্ড, অশনি, বৎসদন্ত, বরাহকৰ্ণ, বিপাট, শৃঙ্গ ও ক্ষুরদ্বারা নভোমণ্ডল সমাচ্ছন্ন করিয়া ফেলিলেন। সেই তিয্যগ্গত সুবর্ণপুঙ্খ শরজাল গগনমণ্ডলে বিচিত্র কুসুমমালার ন্যায় সুশোভিত হইতে লাগিল। এইরূপে সেই অপ্রতিমপ্রভাব বীরদ্বয় অস্ত্রজাল বিস্তারপূর্ব্বক সমভাবে পরস্পরকে প্রহার করিতে প্রবৃত্ত হইলেন। তৎকালে তাঁহাদিগের কিছুমাত্র ইতরবিশেষ লক্ষিত হইল না। তখন রাহু ও ভাস্করের ন্যায় সেই বীরদ্বয়ের শরনিকরসঙ্কুল অদ্ভুত ভয়ঙ্কর সংগ্রাম হইতে লাগিল। হে মহারাজ! ঐ সময় রাক্ষসরাজ ঘটোৎকচ কর্ণকে কোনক্রমে অতিক্রম করিতে না পারিয়া এক সুতীক্ষ্ণ অস্ত্র আবিষ্কৃত করিয়া তাঁহার অশ্ব ও সারথিকে বিনাশপূর্ব্বক অবিলম্বে অন্তর্হিত হইলেন।”
ধৃতরাষ্ট্র কহিলেন, “হে সঞ্জয়! সেই কূটযোধী [অপরের অবোধ্য যুদ্ধকারী] নিশাচর অন্তর্হিত হইলে আমার পক্ষীয় বীরগণ তৎকালে কিরূপ বিবেচনা করিলেন, তুমি উহা কীৰ্ত্তন কর।”
সঞ্জয় কহিলেন, “মহারাজ! কৌরবগণ রাক্ষসরাজ ঘটোৎকচকে অন্তর্হিত অবলোকন করিয়া মুক্তকণ্ঠে কহিতে লাগিলেন, এইবার কূটযোধী ঘটোৎকচ নিঃসন্দেহে কর্ণকে সংহার করিবে। কৌরবগণ এই কথা কহিলে কর্ণ লঘুহস্ততা প্রদর্শনপূর্ব্বক শরজালে চতুর্দ্দিক সমাচ্ছন্ন করিলেন। তন্নিক্ষিপ্ত শরনিকরে নভোমণ্ডল গাঢ়তর তিমিরে পরিবৃত হইলে সকল জীবজন্তুই অদৃশ্য হইল। ঐ সময় মহাবীর কর্ণ যে কখন শরগ্রহণ, কখন শরসন্ধান ও কখন বা তৃণীর স্পর্শ করিতে লাগিলেন, তাহা কিছুই দৃষ্টিগোচর হইল না। অনন্তর রাক্ষসরাজ ঘটোৎকচ অন্তরীক্ষে ভয়ঙ্কর রাক্ষসীমায়া প্রকাশ করিলেন। সেই মায়াপ্রভাবে নভোমণ্ডলে দেদীপ্যমান অগ্নিশিখাসদৃশ লোহিত মেঘ সমুত্থিত হইল। সেই মেঘ হইতে সহস্র দুন্দুভিনিনাদসদৃশ নির্ঘোষসম্পন্ন অসংখ্য বিদ্যুৎ ও প্রজ্বলিত মহোঙ্কাসকল প্রাদুর্ভূত এবং নিশিত শর, শক্তি, প্রাস, মুষল, পরশু, খড়্গ, পট্টিশ, তোমর, পরিঘ, লৌহবদ্ধ গদা, শাণিত শূল, শতঘ্নী, প্রকাণ্ড শিলাখণ্ড, সহস্র সহস্র অশনি, বজ্র, চক্র ও বহুসংখ্য ক্ষুর চতুর্দ্দিকে নিপতিত হইতে লাগিল। মহাবীর কর্ণ শরনিকর বর্ষণপূর্ব্বক সেই শস্ত্রবৃষ্টি নিবারণ করিতে সমর্থ হইলেন না। তখন কৌরবপক্ষীয় অশ্বসকল শরাহত, মাতঙ্গগণ বজ্রাহত ও রথসমুদয় শস্ত্রাহত হইয়া ভূতলে নিপতিত হইতে লাগিল। উহাদের পতনকালে ঘোরতর শব্দ সমুত্থিত হইল। রাজা দুর্য্যোধনের সৈন্যগণ সেই নানাবিধ আয়ুধের আঘাতে নিতান্ত নিপীড়িত হইয়া ইতস্ততঃ ভ্রমণ করিতে লাগিল এবং একান্ত বিষণ্ন ও মৃত্যুদশায় উপনীত হইয়া হাহাকার করিতে আরম্ভ করিল; কিন্তু মহাবীরগণ আৰ্য্যস্বভাববশতঃ তৎকালে সমর পরিত্যাগ করিলেন না।
“হে মহারাজ! তখন আপনার পুত্রগণ সেই রাক্ষসকৃত ঘোরতর শরবৃষ্টি নিপতিত ও সৈন্যগণকে বিনষ্ট দেখিয়া নিতান্ত ভীত হইলেন। যোদ্ধৃগণ হুতাশনের ন্যায় প্রদীপ্তজিহ্ শত শত শিবাগণকে ঘোর চীৎকার ও রাক্ষসগণকে ভীষণ সিংহনাদ করিতে দেখিয়া সাতিশয় ব্যথিত হইতে লাগিলেন। তখন সেই দীপ্তানন, দীপ্তজিহ্, তীক্ষ্ণদংষ্ট্র, শৈলসদৃশকলেবর, নিতান্ত ভয়ঙ্কর রাক্ষসগণ নভোমণ্ডলে আরোহণ ও শক্তিগ্রহণপূর্ব্বক বারিধারাবর্ষী জলধরের ন্যায় শোভা ধারণ করিল। আপনার সৈন্যগণ সেই রাক্ষসগণের শর, শক্তি, শূল, গদা, পরিঘ, বজ্র, পিনাক, অশনি, চক্র ও শতক্ষ্মীদ্বারা বিমথিত হইয়া ভূতলে নিপতিত হইতে লাগিল। রাক্ষসগণ আপনার সৈন্যগণের প্রতি অনবরত শূল, অংশু, শুণ্ড, অশ্ব, গুড়, শতঘ্নী এবং লৌহ ও পট্টসন্নদ্ধ স্থূণাসকল [কাপড়ে মোড়া খুটা] পরিত্যাগ করিতে আরম্ভ করিল। তখন সকলেই মোহে একান্ত আক্রান্ত ও অভিভূত হইল। বীরগণ বিশীর্ণ অস্ত্র, ঘূর্ণমস্তক ও চূর্ণকলেবর হইয়া ভূতলে শয়ন করিতে লাগিলেন। অশ্বগণ ছিন্ন, কুঞ্জরগণ প্ৰমথিত ও রথসমুদয় শিলাঘাতে নিষ্পিষ্ট হইয়া গেল। হে মহারাজ! ঘোররূপ নিশাচরগণ এইরূপে অনবরত অস্ত্রবর্ষণ করিতে আরম্ভ করিলে ভীত বা প্রাণরক্ষার্থ প্রার্থনাপরত ব্যক্তিগণও নিষ্কৃতিলাভ করিতে সমর্থ হইলেন না। এইরূপে সেই কালকৃত কুরুকুলক্ষয় ও ক্ষত্রিয়গণের অভাবকাল সমুপস্থিত হইলে কৌরবগণ ছিন্নভিন্ন ও পলায়নপরায়ণ হইয়া মুক্তকণ্ঠে কহিতে লাগিলেন, ‘হে কৌরবগণ! তোমরা এক্ষণে পলায়ন কর; আর নিস্তার নাই। দেবরাজ ইন্দ্র দেবগণের সহিত সমবেত হইয়া পাণ্ডবগণের উপকারসাধনাৰ্থে আমাদিগকে সংহার করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছেন।’ হে মহারাজ! কৌরবগণ এইরূপ ঘোরতর বিপদসাগরে নিমগ্ন হইলে কোন ব্যক্তিই দ্বীপস্বরূপ হইয়া তাঁহাদিগকে আশ্রয় প্রদান করিতে সমর্থ হইলেন না। এইরূপে সেই তুমুল সংগ্রাম সমুপস্থিত এবং কৌরবসৈন্যগণ ছিন্নভিন্ন হইয়া চতুর্দ্দিকে ধাবমান হইলে রণস্থলে কে কৌরবপক্ষীয় আর কে-ই বা পাণ্ডবপক্ষীয়, কিছুই অবগত হইতে পারিলাম না। চতুর্দ্দিক শূন্যময় বোধ হইতে লাগিল। তৎকালে কেবল একমাত্র কর্ণ অস্ত্রজালে সমাচ্ছন্ন হইয়া রণস্থলে অবস্থান করিতে লাগিলেন। তিনি সেই রাক্ষসের মায়া প্রতিহত করিবার নিমিত্ত ঘোরতর যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়া অন্তরীক্ষ শরনিকরে সমাচ্ছন্ন করিয়া দুষ্কর ক্ষত্রিয়োচিত কাৰ্য্য অনুষ্ঠান করিলেন। তিনি তৎকালে কিছুতেই বিমোহিত হইলেন না। তখন সৈন্ধব ও বাহ্লীকগণ ভীতচিত্তে কর্ণকে অবিমোহিত নিরীক্ষণ করিয়া অসঙ্কুচিতচিত্তে তাঁহার প্রশংসাপূর্ব্বক রাক্ষসরাজ ঘটোৎকচের বিজয়ব্যাপার অবলোকন করিতে লাগিলেন।
‘ইত্যবসরে মহাবীর ঘটোৎকচ একচক্ৰযুক্ত শতঘ্নী নিক্ষেপ করিয়া এককালে কর্ণের চারি অশ্ব বিনষ্ট করিলেন, অশ্বগণ গতাসু এবং দশন, অক্ষি ও জিহ্বাশূন্য হইয়া জানুদ্বয় সঙ্কুচিত করিয়া ভূতলে নিপতিত হইল। তখন মহাবীর কর্ণ সেই হতাশ্ব রথ হইতে অবতরণপূর্ব্বক কৌরবগণকে পলায়মান এবং ঘটোৎকচের মায়াপ্রভাবে স্বীয় দিব্যাস্ত্র নিষ্প্রভ নিরীক্ষণ করিয়াও অবিচলিতচিত্তে তত্ত্বালোচিত কাৰ্য্য চিন্তা করিতে লাগিলেন। ঐ সময় সমস্ত কৌরবগণ সেই ভয়ঙ্কর মায়া দর্শন করিয়া কর্ণকে কহিলেন, ‘হে সূতনন্দন! এই সমস্ত কৌরবসৈন্য বিনষ্ট হইতেছে; অতএব তুমি সত্বর এই নিশীথসময়ে সেই বাসবদত্ত শক্তিদ্বারা নিশাচরকে সংহার কর। ভীমসেন ও অর্জ্জুন আমাদের কি করিবে? আজি বীরগণ এই ঘোর সংগ্রামে নিশাচরের হস্ত হইতে মুক্ত হইলে অনায়াসে পাণ্ডবগণের সহিত যুদ্ধ করিতে পারিবেন। অতএব তুমি অবিলম্বে শক্তিদ্বারা এই দুরাশয় রাক্ষসের প্রাণসংহার কর। ইন্দ্রতুল্য কৌরবগণ যেন এই রাত্রিযুদ্ধে সৈন্যগণসমভিব্যাহারে বিনষ্ট না হয়েন।’
কর্ণশরে ঘটোৎকচবধ
“হে মহারাজ! তখন মহাবীর কর্ণ সেই নিশীথসময়ে সৈন্যগণকে শঙ্কিত দর্শন ও কৌরবগণের ভয়ঙ্কর কোলাহল শ্রবণ করিয়া ঘটোৎকচের বিনাশার্থ সেই ইন্দ্রপ্রদত্ত শক্তি পরিত্যাগ করিতে অভিলাষী হইলেন। পূর্ব্বে সুররাজ ইন্দ্র কর্ণের কুণ্ডলদ্বয় গ্রহণপূর্ব্বক উঁহাকে ঐ শক্তি প্রদান করেন। মহাবীর কর্ণ অর্জ্জুনকে বিনাশ করিবার নিমিত্ত বহুদিন অতি যত্নসহকারে উহা রক্ষা করিয়াছিলেন। এক্ষণে তিনি ঘটোৎকচের অমিতপরাক্রম সহ্য করিতে অসমর্থ হইয়া তাঁহার বিনাশবাসনায় সেই পাশযুক্ত যমের ভগিনীর ন্যায়, অন্তকের জিহ্বার ন্যায়, প্রদীপ্ত ভীষণ শক্তি গ্রহণ করিলেন। ভীমসেনকুমার সেই কর্ণবহুস্থিত অরাতিনিপাতন প্রজ্বলিত শক্তি সন্দর্শনে ভীত হইয়া বিন্ধ্যপর্ব্বতের পাদপসদৃশ কলেবর ধারণপূর্ব্বক পলায়ন করিতে লাগিলেন। অন্তরীক্ষস্থিত প্রাণীগণ সেই ভয়ঙ্কর শক্তি দর্শন করিয়া ভীষণ শব্দ করিতে আরম্ভ করিল। ঐ সময় প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহিত ও সনির্ঘাত অশনি নিপতিত হইতে লাগিল। হে মহারাজ! মহাবীর সূতপুত্র সেই শত্রুঘাতিনী শক্তি নিক্ষেপ করিবামাত্র উহা ঘটোৎকচের মায়া ভস্মীকৃত করিয়া তাঁহার হৃদয় ভেদপূর্ব্বক উৰ্দ্ধমুখে নক্ষত্রমালার অন্তর্গত হইল।
“এইরূপে ভীমসেনকুমার মহাবীর ঘটোৎকচ বিচিত্র বিবিধাস্ত্ৰদ্বারা মহাবলপরাক্রান্ত রাক্ষস ও মনুষ্যগণের সহিত সংগ্রাম ও অন্যান্য বিবিধ আশ্চৰ্য্য কাৰ্য্যের অনুষ্ঠান করিয়া অসংখ্য শত্ৰু সংহারপূর্ব্বক পরিশেষে বাসবদত্ত শক্তির আঘাতে অতি ভীষণ চীৎকারপূর্ব্বক প্রাণত্যাগ করিলেন। ভীমকর্ম্মা ভীমতনয় সূতপুত্রের ভীষণ শক্তির আঘাতে মর্ম্মাহত হইয়া যে স্থানে নিপতিত হইলেন, তত্ৰত্য এক-অক্ষৌহিণী কৌরবসৈন্য তাঁহার দেহভরে বিপ্রোথিত হইয়া গেল। হে মহারাজ: নিশাচর এইরূপে হতজীবিত হইয়াও স্বীয় প্রকাণ্ড শরীরদ্বারা আপনার বহুসংখ্যক সৈন্য সংহার করিয়া পাণ্ডবগণের প্রিয়কাৰ্য্য সাধন করিলেন। অনন্তর কৌরবগণ মহাবীর ঘটোৎকচকে নিহত ও তাঁহার মায়া বিনষ্ট অবলোকন করিয়া পরমাত্মাদে সিংহনাদ, শঙ্খনিঃস্বন এবং ভেরী, মুরজ ও আনকের নিনাদ করিতে লাগিলেন। পূর্ব্বে দেবরাজ যেমন বৃত্রাসুরকে সংহার করিয়া সুরগণকর্ত্তৃক পূজিত হইয়াছিলেন, তদ্রূপ কর্ণ ঘটোৎকচের প্রাণসংহারপূর্ব্বক কৌরবগণকর্ত্তৃক পূজিত হইয়া দুর্য্যোধনের রথে আরোহণ করিয়া স্বীয় সৈন্যমধ্যে প্রবিষ্ট হইলেন।”