১৭৫তম অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরাদিসমীপে অর্জ্জুনের দৈবলব্ধ অস্ত্ৰপ্ৰদৰ্শন
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে জনমেজয়! রজনী প্ৰভাত হইলে রাজা যুধিষ্ঠির ভ্রাতৃগণের সহিত গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক কর্ত্তব্যকর্ম্ম-সকল সম্পাদন করিয়া মাতৃ-আনন্দবর্দ্ধন অর্জ্জুনকে দানবঘাতন
দিব্য-অস্ত্ৰ
সকল প্ৰদৰ্শন করিতে কহিলেন। ধনঞ্জয় শুচি ও দেবরাজদত্ত দিব্যকবচ আবৃত হইয়া দেবদত্ত অস্ত্র-সমুদয় প্রদর্শন করিতে লাগিলেন। তখন ধরাতল রথস্থানীয়, গিরিসকল যুগন্ধর, চক্র ও অক্ষম্বরূপ এবং তত্ৰত্য বশসকল ত্ৰিবেণুকল্প হইল। তিনি এইরূপ পার্থিবরথে আরোহণ, দেবদত্ত শঙ্খ-ধারণ ও গাণ্ডীব শরাসন আকর্ষণপূর্ব্বক যখন অস্ত্ৰ-সমুদয় প্রয়োগ করিতে উদ্যত হইলেন, তখন তাঁহার পদভরে সক্ৰমা পৃথিবী কম্পমান হইতে লাগিল, নদী-সকল স্তব্ধ ও মহাসাগর ক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল, পর্ব্বতসকল বিদীর্ণ ও বায়ুপ্রবাহ রুদ্ধ হইয়া গেল, প্রভাকর প্রভাবিহীন, হুতাশন নির্ব্বাণ এবং দ্বিজাতিগণের বেদ-সকল প্রতিভাশূন্য হইয়া উঠিল।
পৃথিবীর অভ্যস্তরবাসী প্রাণী-সকল তাঁহার অস্ত্ৰপ্ৰভাবে পীড্যমান ও বিকৃতানন হইয়া তথা হইতে উত্থানপূর্ব্বক পাণ্ডবগণকে পরিবেষ্টন করিয়া বেপমান-কলেবরে ধনঞ্জয়ের নিকটে অস্ত্রের প্রতিসংহার প্রার্থনা করিতে লাগিল। দেব, দেবর্ষি, ব্রহ্মর্ষি, মহর্ষি, যক্ষ, রক্ষ, গন্ধর্ব্ব ও পক্ষী প্রভৃতি আকাশচর অন্যান্য জঙ্গম প্রাণীগণ তৎক্ষণাৎ তথায় উপস্থিত হইল। পিতামহ, লোকপালগণ ও ভগবান ভূতপতি ভূতগণ-সমভিব্যাহারে তথায় আগমন করিলেন। সমীরণ বিচিত্ৰ দিব্যমাল্যে পাণ্ডুপুত্র পার্থকে পরিকীর্ণ করিল। গন্ধর্ব্বনিবহ সুরগণের অনুমতিক্রমে বিবিধ গাথা গান করিতে আরম্ভ করিল; অপ্সরা-সকল বহুবিধ বিভ্রমসহকারে নৃত্য করিতে লাগিল।
এমন সময়ে দেবর্ষি নারদ সুরগণের আজ্ঞাক্ৰমে পাণ্ডবগণের সমীপে সমুপস্থিত হইয়া কহিলেন, “অর্জ্জুন!! অর্জ্জুন! তুমি দিব্যাস্ত্রের উপসংহার কর। এই সকল দিব্য-অস্ত্ৰ কোনক্রমেই অলক্ষ্যে নিক্ষেপ করিবে না, অথবা উৎপীড়িত না হইলে কাহারও প্রতি প্রয়োগ করা কদাচি উচিত নহে, ইহা নিরর্থক প্রয়োগ করিলে সাতিশয় অনিষ্টঘটনার সম্ভাবনা। এই সকল অস্ত্ৰ শাস্ত্রানুসারে রক্ষা করিলে তেজস্বী ও সুখজনক হয়, সন্দেহ নাই; কিন্তু রক্ষা করিতে না পারিলে সচরাচর ত্ৰৈলোক্য এককালে বিনষ্ট হইয়া যায়। হে অজাতশত্রু! যখন অর্জ্জুন এই সকল অস্ত্ৰদ্বারা সমরে অরাতিগণকে অবমর্দ্দন করিবে, তখন উহাদিগের প্রভাব তোমার নয়নগোচর হইবে।”
অর্জ্জুন এই প্রকারে নিবারিত হইলে, দেব, গন্ধর্ব্ব প্রভৃতি সকলেই স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিলেন, পাণ্ডবগণও সেই বনে হৃষ্টচিত্তে কৃষ্ণার সহিত বাস করিতে লাগিলেন।
নিবাতকবচযুদ্ধপর্ব্বাধ্যায় সমাপ্ত।