১৭৪তম অধ্যায়
যুধিষ্ঠিরের অর্জ্জুনাভিনন্দন
অর্জ্জুন কহিলেন, “হে রাজন্ অনন্তর দেবরাজ অবসরক্রমে আমাকে অভিনন্দন করিয়া কহিলেন, ‘ভারত! সমুদয় দিব্যাস্ত্র তোমাতেই সন্নিবেশিত রহিল, কোন মানব তোমাকে পরাভব করিতে সমর্থ হইবে না। তুমি যখন সমরক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইবে তখন ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, শকুনি ও অন্যান্য ভূপতিগণ তোমার ষোড়শাংশের একাংশেরও যোগ্য হইতে পরিবে না।” তিনি এবম্প্রকার আশ্বাসপ্রদানপূর্ব্বক আমাকে এই অভেদ্য তনুত্ৰাণ, হিরন্ময়ী মালা, দেবদত্ত শঙ্খ, দিব্যবস্ত্র ও রুচির আভরণ প্ৰদান করিলেন এবং স্বহস্তে এই দিব্যকিরীটি গ্রহণ করিয়া আমার মস্তকে বিন্যস্ত করিয়া দিলেন। আমি ইন্দ্রভবনে এইরূপে পূজিত হইয়া গন্ধর্ব্বদারকগণের সহিত পরমসুখে বাস করিতেছিলাম।
“আমি তথায় দ্যূতজনিত বিপত্তি স্মরণপূর্ব্বক পঞ্চবর্ষ অতিবাহন করিলে, দেবরাজ ও সুরগণ। আমাকে কহিলেন, ‘অর্জ্জুন! তোমার ভ্রাতৃগণ এক্ষণে তোমাকে স্মরণ করিতেছেন। অতএব তোমার গমনের সময় সমুপস্থিত হইয়াছে।’ অনন্তর আমি তাঁহাদিগের বাক্যানুসারে এই গন্ধমাদনের প্রত্যন্তপর্ব্বতের শিখরদেশে আগমনপূর্ব্বক আপনাকে ও অন্যান্য ভ্রাতৃগণকে নয়নগােচর করিলাম।”
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “ধনঞ্জয়! তুমি ভাগ্যবলে দিব্যাস্ত্ৰসমূহ প্রাপ্ত হইয়াছ, তুমি ভাগ্যবলে দেবরাজকে আরাধনা করিয়াছ, তুমি ভাগ্যবলে সাক্ষাৎ ভবানী ও ভবানীপতিকে সন্দর্শন করিয়াছ, তুমি ভাগ্যবলে যুদ্ধে আশুতোষকে পরিতুষ্ট করিয়াছ। তুমি ভাগ্যবলে লোকপালগণের সহিত সমাগমলাভ করিয়াছ। আমরাও ভাগ্যবলে এতদিন কুশলে ছিলাম এবং তোমাকে পুনরায় প্রাপ্ত হইলাম। বোধ হয়, আজি বহুবিধাপুরমালিনী ভগবতী অবনীদেবী হস্তগত হইলেন এবং ধৃতরাষ্ট্রের পুত্ৰগণও পরাজিত হইল। এক্ষণে যাহা দ্বারা তাদৃশ বীৰ্য্যবান, নিবাতকবচগণকে সংহার করিয়াছ, সেই সমুদয় দিব্য-অস্ত্ৰ-দৰ্শন করিবার নিমিত্ত কৌতুকাবিষ্ট হইয়াছি।”
অর্জ্জুন কহিলেন, “মহারাজ! যাহা দ্বারা নিবাতকবচগণকে নিপাতিত করিয়াছি, কল্য প্রভাতে সেই সমুদয় অস্ত্র অবলোকন করিবেন।” এইরূপে ধনঞ্জয় ভ্রাতৃগণের সমক্ষে আগমন-বৃত্তান্ত নিবেদন করিয়া তাঁহাদিগের সহিত তথায় সেই রাত্রি অতিবাহিত করিলেন।