শ্রীরামে নোঙায়ে মাথা, অঙ্গদ কহিছে কথা,
হরষিত সকল বানর।
রঘুমণি হরষিত, সুগ্রীব সু-আনন্দিত,
লক্ষ্মণের হর্ষ বহুতর।।
তোমার আরতি পেয়ে, লঙ্কায় গেলাম ধেয়ে,
প্রবেশিনু গড়ের ভিতর।
সুবর্ণের আওয়াস, যেন চন্দ্র পরকাশ,
তথি শোভে প্রবাল পাথর।।
বিশ্বকর্ম্মাকৃত ঘর, দেখি অতি মনোহর,
চারিভিতে কাঞ্চন-দেয়াল।
শ্বেত রক্ত নীল পীত, প্রস্তরেতে সুশোভিত,
তাহে শোভে রতন মিশাল।।
গেলাম রাজার ঘর, দেখি সৈন্য বহুতর,
খাণ্ডা জাঠি বিচিত্র নির্ম্মাণ।
সোণার পাটের পড়া, নানাবর্ণে দেখি ঘোড়া,
হস্তী সব পর্ব্বত প্রমাণ।।
দেকিলাম সরোবরে, হংস হংসী কেলি করে,
ঘাট সব বিচিত্র নির্ম্মাণ।
কমল কুমুদোপরে, কেলি করে মধুকরে,
রূপসী রাক্ষসী করে স্নান।।
দেখিলাম নারীগণ, রূপে মোহে ত্রিভুবন,
দুই কর্ণে রত্নের কুণ্ডল।
পারিজাতমালা হারে, শোভে নানা অলঙ্কারে,
যেন চন্দ্র গগন-মণ্ডল।।
বীণা বাঁশী বাজে তায়ষ কেহ বা সঙ্গীত গায়,
গানে করে মোহিত সংসার।
নানা আভরণ পরি, যেন স্বর্গ বিদ্যাধরী,
রূপে যেন দেব-অবতার।।
দেখিলাম পুষ্পবন, ময়ূর ময়ূরীগণ,
ক্রীড়া করে মুগ্ধ কামরসে।
প্রতি গাছে পিকধ্বনি, বড়ই মধুর শুনি,
ভ্রমর ভ্রমরী রসে ভাষে।।
গেলাম রাজার পাশ, চতুর্দ্দিকে মহোল্লাস,
রাবণেরে ভৎসিনু বিস্তর।
যতেক বলিলে তুমি, দ্বিগুণ শুনাই আমি,
কোপে জ্বলে রাজা লঙ্কেশ্বর।।
আজ্ঞা দিল লঙ্কেশ্বর, ধরে চারি নিশাচর,
লাফ দিনু প্রাচীর উপরে।
চারিজনে সংহারিয়া রাবণেরে গালি দিয়া,
শূন্যপথে আইনু সত্বরে।।
শুনিয়া অঙ্গদ-বাণী, হরষিত রঘুমণি,
অঙ্গদেরে দিলেন প্রসাদ।
সরস্বতী পরকাশ, বিরচিল কৃত্তিবাস,
বানরের জয় জয় নাদ।।
শ্রীরাম বলেন, হে অঙ্গদ যুবরাজ।
তোমার পিতাকে মারি পাইলাম লাজ।।
সে সকল দুঃখ কিছু না করিহ মনে।
তোমাকে বাড়াব আমি অশেষ সম্মানে।।
দক্ষিণের দ্বারে যাও আপনার থানা।
তব কোপে দশানন পাছে দেয় হানা।
বিদায় হইয়া যায় দক্ষিণের দ্বার।
কৃত্তিবাস রচিল অঙ্গদ-রায়বার।।