১৬৯. পাণ্ডবসমীপে ব্যাসের পুনরাগমন, ব্যাস কর্তৃক দ্রৌপদীর পূর্বজন্ম ব্যাখ্যা
ঊনসপ্তত্যধিকশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন,-মহারাজ! মহাত্ম। পাণ্ডবগণ প্রছন্নভাবে বাস করিতেছেন, এই অবসরে সত্যবতীনন্দন ব্যাস, তাহাদিগের দর্শনার্থ তথায় আগমন করিলেন। পাণ্ডবের। তাঁহাকে অভ্যাগত দেখিয়া প্রত্যুদগমন-পুর্বক প্রণাম ও অভিবাদন করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে দণ্ডায়মান রহিলেন। তখন মহর্ষি ব্যাস তাহাদিগকে উপবেশনার্থে অনুমতি প্রদান করিয়া প্রীতিপ্রফুল্লমনে জিজ্ঞাসা করিলেন, হে পাণ্ডবগণ! তোমরা শাস্ত্র ও ধর্মানুসারে জীবিকা নির্বাহ করিতেছ? এবং পূজাৰ্হ অতিথি ব্রাহ্মণকে সৎকার করিয়া থাক? ব্যাস তাহাদিগকে এরূপ ধৰ্মার্থ-সম্বন্ধ বহুবিধ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিয়া প্রসঙ্গক্রমে একটি উপাখ্যান কহিতে আরম্ভ করিলেন।
কোন তপোবনে সৰ্বাঙ্গসুন্দরী সৰ্বগুণসম্পন্না এক ঋষিকন্যা বাস করিতেন। সেই রমণী স্বীয় কর্মদোষে নিতান্ত দুরদৃষ্টভাগিনী হইয়াছিলেন, এই কারণে অনুরূপ ভর্তৃলাভে কৃতকার্য হইতে পারেন নাই। তখন তিনি সাতিশয়দুঃখিত হইয়া পতিলাভার্থে তপস্যায় মনোনিবেশ করিলেন এবং অতি কঠোর তপোনুষ্ঠানদ্বারা অনতিকালমধ্যে ভগবান্ মহাদেবকে প্রীত ও প্রসন্ন করিলেন। দেবাদিদেব মহাদেব তাঁহার প্রতি অতিশয় সন্তুষ্ট হইয়া তথায় আবির্ভূত হইলেন এবং কহিলেন, হে সুন্দরি! তুমি কুশলে থাক, আমি মহাদেব, তোমাকে বর দান করিবার নিমিত্ত উপস্থিত হইয়াছি; বর প্রার্থনা কর। তখন তপস্বিকন্যা আপনার অভিলাষানুরূপ বর লাভ করিবার নিমিত্ত তাহাকে কহিলেন, ভগবন্! যদি প্রসন্ন হইয়া থাকেন, তবে যাহাতে আমি সৰ্বগুণসম্পন্ন পতিলাভে চরিতার্থ হইতে পারি, এইরূপ বর প্রদান করুন। এই বলিয়া বারম্বার তাহার নিকটে প্রার্থনা করিতে লাগিলেন। তৎপরে মহাদেব তাঁহাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, হে ঋষিকন্য। আমার বরপ্রভাবে তোমার পঞ্চ স্বামী লাভ হইবে। তখন তাপনদুহিতা। বরদ দেবতাকে পুনর্বার কহিলেন, ভগব! আপনার নিকটে আমি সর্বগুণেপেত একমাত্র পতি লাভের বাসনা করি। ঈশ্বর কহিলেন, হে কন্যে। তুমি পাঁচ বার পতি প্রদান করুন বলিয়া আমার নিকট প্রার্থনা করিয়াছ, অতএব তোমার প্রার্থনামত পরজন্মে পঞ্চ পতি লাভ করিবে। সেই দেবরূপিণী রমণী দ্রুপদবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। তিনি তোমাদিগেরই সহধর্মিণী হইবেন; অতএব এক্ষণে তোমরা পাঞ্চাল নগরে গিয়া অবস্থান কর। আমি নিশ্চয় কৃহিতেছি, সেই কষ্ট লাভ করিয়া তোমরা ভবিষ্যতে সুখী হইবে। এই বলিয়া মহাতপাঃ মহর্ষি ব্যাস, কুন্তী ও পাণ্ডবগণকে সাদর সম্ভাষণশীঃ-প্রয়োগপূর্বক প্রস্থান করিলেন।