১৬৮তম অধ্যায়
ইন্দ্রকর্ত্তৃক অর্জ্জুনের দিব্যাস্ত্রলাভ
অর্জ্জুন কহিলেন, মহারাজ । অনন্তর আমি দেবাদিদেব মহাদেবের অনুগ্রহে সেই স্থলে প্রতি ও প্রসন্ন চিত্তে এক রজনী অবস্থিতি করিলাম। পর দিন প্রভাতে প্রাতঃকৃত্য সমাধান-পূৰ্ব্বক সেই দৃষ্টপূর্ব্ব দ্বিজশ্রেষ্ঠকে সন্দর্শন ও আদ্যোপান্ত সমুদায় বৃত্তান্ত নিবেদন করিয়া কহিলাম, হে ব্ৰহ্মন্! আমি ভগবান্ ভবানীপতির সাক্ষাৎকার লাভ করিয়াছি। ব্রাহ্মণ এই কথা শ্রবণ করিয়া প্রীত মনে কহিলেন, হে অর্জ্জুন! তুমি যেরূপে ভগবান ভবানীপতিকে সন্দর্শন করিয়াছ, তাহা অন্যের অদৃষ্টে কদাচ সম্ভবে না; এক্ষণে বৈবস্বতপ্রমুখ লোকপালবর্গের সহিত সমবেত হইয়া দেবরাজ ইন্দ্রকে সন্দর্শন করিলে, তিনিও তোমাকে অস্ত্র প্রদান করিবেন। এই বলিয়া ব্রাহ্মণ আমাকে বারংবার আলিঙ্গন-পূৰ্ব্বক যদৃচ্ছাক্রমে গমন করিলেন।
অনন্তর সেই দিন অপরাহ্ণে সুশীতল সমীরণ পৃথিবীস্থ সমস্থ লোককে নবীকৃত করিয়া হিমালয়ের প্রত্যন্ত পর্ব্বতে প্রাদুর্ভূত হইল, সুগন্ধি দিব্য মাল্য সকল নয়নগোচর হইতে লাগিল, এবং ঘোরতর দিব্য বাদ্য ও ইন্দ্রবিষয়ক অতি মনোহর স্তুতিবাদ শ্রুতি, গোচর হইয়া উঠিল। গন্ধৰ্ব্ব ও অপ্সরাগণ মহাদেবের সম্মুখে সঙ্গীত আরম্ভ করিল। মহেন্দ্রানুচর, তন্নিলয়নিবাসী স্ত্রী, বাল, বৃদ্ধ ও দেবগণ দিব্য বিমানে আরোহণপূর্ব্বক তথায় আগমন করিলেন। পরে দেবরাজ ইন্দ্র অলঙ্কৃত অশ্বগণ-যোজিত রথে আরোহণ করিয়া শচীদেবীর সহিত তথায় উপস্থিত হইলেন। ইত্যবসরে অসাধারণ রাজশ্রীসম্পন্ন নরবাহন কুবের ও তথায় আগমন করিলেন। পরে দক্ষিণ দিগ্বিভাগে অবস্থিত যমরাজ এবং যথাস্থানস্থ বরুণ ও দেবরাজ ইন্দ্রকে নিরীক্ষণ করিলাম। অনন্তর লোকপালগণ আমাকে সান্ত্ববাদ প্রয়োগপূর্ব্বক কহিলেন, হে অর্জ্জুন। তুমি সুরকার্য্য নির্ব্বাহার্থ ভগবান্ ত্রিলোকচনকে নেত্রগোচর করিয়াছ। এক্ষণে আমাদিগকে অবলোকন কর; আমরা প্রসন্ন হইয়া তোমাকে দিব্যাস্ত্র সকল প্রদান করিতেছি, যথা বিধানে প্রগণ কর। আমি এই কথা শ্রবণ করিয়া তাঁহাদিগকে অভিবাদনপূর্ব্বক প্রযতমনে মহাস্ত্র সকল বিধিবৎ গ্রহণ করিলাম। তখন দেবগণ আমাকে গমন করিতে অনুমিত প্রদানপূর্ব্বক স্বস্থানে প্রস্থান করিলেন। অনন্তর দেবরাজ ইন্দ্র রাথারোহন পূর্ব্বক আমাকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, হে অর্জ্জুন! আমি এস্থানে আগমন করিবার পূর্ব্বেই তোমাকে অবগত হইয়াছি, কিন্তু পরে তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিলাম। পূর্ব্বে তুমি বহুতর তীর্থে বারংবার স্নান ও অতি কঠোর তপানুষ্ঠান করিয়াছ, তন্নিমিত্ত দেবগণ ও মহাত্মা মুনিগণ তোমার প্রভাব বিদিত হইয়াছেন; এক্ষণে পুনর্ব্বার তপানুষ্ঠান করিয়া সুরলোকে গমন করিতে হইবে। মাতলি আমার আদেশানুসারে তৎকালে সেই স্থানে আগমনপূর্ব্বক তোমাকে লইয়া দেবলোকে গমন করিবে।”
“অনন্তর আমি কহিলাম, ‘ভগবন! আমি অস্ত্ৰলাভার্থ আপনাকে আচাৰ্য্যরূপে বরণ করিতেছি, আপনি আমার প্রতি প্ৰসন্ন হউন।”
ইন্দ্ৰ কহিলেন, “বৎস! তুমি অস্ত্রশিক্ষা করিতে নিতান্ত ক্রুরকর্ম্ম হইবে; অতএব অস্ত্রশিক্ষা করিবার প্রয়োজন নাই; এক্ষণে যে কারণে অস্ত্রশিক্ষা করিতে উদ্যত হইয়াছ, তোমার সে মনোরথ অচিরাৎ সম্পূর্ণ হইবে।” আমি কহিলাম, “হে দেবরাজ! আমি শক্ৰপ্ৰযুক্ত অস্ত্ৰসমূহ নিবারণ ব্যতিরেকে কদাচ মনুষ্যের প্রতি দিব্যাস্ত্ৰজাল প্রয়োগ করিব না। আপনি এক্ষণে প্ৰসন্ন হইয়া সেই সমস্ত অস্ত্ৰ প্ৰদান করুন; পরে আমি তাহার প্রভাবে নিখিল লোক লাভ করিব।”
“ইন্দ্ৰ কহিলেন, ‘বৎস! আমি তোমার পরীক্ষার নিমিত্ত এইরূপ কহিতেছিলাম; ফলতঃ আমার পুত্ৰ হইয়া যেরূপ কহিতে হয়, তুমি তাঁহাই কহিয়াছ, এক্ষণে মন্নিকেতনে গমন করিয়া বায়ু, অগ্নি, অষ্টবসু, বরুণ ও মরুদগণ হইতে সর্ব্বপ্রকার অস্ত্ৰ-শিক্ষা কর এবং সাধ্য, পৈতামহ, গান্ধর্ব্ব, ঔরঙ্গ, রাক্ষস, বৈষ্ণব, নৈঋত ও ঐন্দ্ৰ অস্ত্ৰ-সমুদয়ও তথায় অবগত হইতে সমর্থ হইবে।” এই বলিয়া দেবরাজ ইন্দ্ৰ সেই স্থানেই অন্তর্হিত হইলেন এবং লোকপাল সকল স্ব স্ব স্থানে প্রস্থান করিলেন।
“অনন্তর মাতলি ইন্দ্রের অধিকৃত অতিপবিত্ৰ মায়াময় এক রথ আনয়ন করিয়া সাক্ষাৎ করিতে নিতান্ত অভিলাষী হইয়াছেন; আপনার সহিত সাক্ষাৎ করিতে নিতান্ত অভিলাষী হইয়াছেন; অতএব আপনি কাৰ্য্যবিশেষ সংসাধন করিয়া সত্বর প্রস্তুত হউন। অদ্যই সশরীরে সুরলোকে যাইয়া অতিপবিত্ৰ লোকসকল অবলোকন করিবেন।”
“আমি মাতলিকর্ত্তৃক এইরূপ অভিহিত হইয়া হিমাচলকে আমন্ত্ৰণ করিয়া প্ৰদক্ষিণপূর্ব্বক দিব্য-রথে আরোহণ করিলাম। অশ্ববিজ্ঞানবিৎ মহাত্মা মাতলি মনোমারুতগামী তুরঙ্গম-সকলকে মহাবেগে চালনা করাতে রথবির বায়ুবেগে গমন করিতে লাগিল। ইত্যবসরে মাতলি বিস্ময়বিস্ফরিত-লোচনে আমার প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া কহিলেন, “কি আশ্চৰ্য্য! আমি প্রতিদিনই প্রত্যক্ষ করিয়াছি যে, অশ্বগণ ধাবমান হইবামাত্র দেবরাজ বিচলিত হইয়া থাকেন, কিন্তু আপনি অনুমাত্রও বিচলিত বা চকিত হইলেন না; প্রত্যুত রথমধ্যে স্থিরভাবেই অবস্থান করিয়া রহিলেন। বলিতে কি, আপনার এই সমস্ত কাৰ্য্য দেবরাজের কাৰ্য্য-সকল অতিক্রম করিয়াছে, এই বলিয়া মাতলি নভোমণ্ডলে উত্থিত হইয়া বিমান ও দেবালয়সকল দর্শন করাইলেন। ঐন্দ্ররথ ক্ৰমে ক্ৰমে উৰ্দ্ধে উত্থিত হইলে দেখিলাম যে, তথায় মহর্ষিগণ ও দেবতারা সকলে স্বীয় স্বীয় অভীষ্টদেবের অৰ্চনা করিতেছেন। অনন্তর দেবর্ষিদিগের কাম্য লোকসমুদয় এবং গন্ধর্ব্ব ও অপ্সরাগণের প্রভাব আমার নয়নপথে নিপতিত হইল। পরে ইন্দ্ৰ-সারথি মাতলি নন্দন প্রভৃতি দিব্যবন ও উপবনসকল অবলোকন করাইলেন।
“পরিশেষে কল্পপাদপশোভিত দিব্যরত্নবিভূষিত ইন্দ্রনগরী অমরাবতী নিরীক্ষণ করিলাম; যেস্থানে সূৰ্য্যের উত্তাপ নাই, শীত নাই, গ্ৰীষ্ম নাই, ক্লান্তি নাই ও ধূলিজালজনিত কেশের লেশ নাই; যেস্থানে জরা নাই, শোক নাই এবং দৈন্য ও দৌর্ব্বল্যের প্রাদুর্ভাব নাই; যেস্থানে গ্লানি, ক্রোধ ও লোভের অনুভব হয় না ও সকল প্ৰাণী নিত্যসন্তুষ্ট; যেস্থানে হরিদ্বর্ণপলাশালঙ্কৃত পাদপাবলী সততই ফলপুষ্পে সুশোভিত রহিয়াছে; যেস্থানে বিকশিত পদ্মগন্ধমোদিত স্বচ্ছসলিল সরোবর-সকল শোভা পাইতেছে; সুশীতল পরিশুদ্ধ জগৎপ্ৰাণ সমীরণ অনবরত মন্দ মন্দ সঞ্চরণ করিতেছে; যেস্থানে ভূমি-সকল নানাবিধ রত্নরাগে রঞ্জিত ও কুসুমসমূহে সুশোভিত হইতেছে; যেস্থানে বহুতর মনোহর পক্ষিকুল মধুরস্বরে গান ও মৃগগণ সঞ্চরণ করিতেছে এবং যেস্থানে বহুবিধ বিমানগামী প্ৰাণীসকল সতত পরিদৃশ্যমান হইতেছে।
“আমি তথায় বসু, রুদ্র, সাধ্য, মরুদগণ, আদিত্য ও অশ্বিনীতনয়দ্বয়কে অর্চনা করিলে তাঁহারা আমাকে ‘তোমার বল, বীৰ্য্য, তেজ, যশ ও অস্ত্র অক্ষয় এবং সমরে জয়লাভ হইবে।’ বলিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন। পরে আমি অমরপুরী-প্রবেশ করিয়া কৃতাঞ্জলিপুটে দেবরাজকে নমস্কার করিলে তিনি প্রীতমনে আমাকে নিজ আসনাৰ্দ্ধ প্ৰদান করিলেন এবং স্নেহবশতঃ স্বকীয় করকমলদ্বারা বারংবার আমার গাত্ৰস্পৰ্শ করিতে লাগিলেন। আমি তখন অস্ত্রশিক্ষার নিমিত্ত মহাত্মা দেব ও গন্ধৰ্ব্বগণের সহিত সুরলোকে বাস করিতে লাগিলাম। অস্ত্ৰশিক্ষা-প্রসঙ্গে বিশ্বাবসুর পুত্র চিত্ৰসেনের সহিত আমার সাতিশয় সৌহার্দ্য জন্মিল। তিনি আমাকে সমস্ত নৃত্য-গীত ও বাদ্যশিক্ষা করাইলেন। হে মহারাজ! এইরূপে আমি পূৰ্ণমনোরথ হইয়া পরম সুখসমাদরে পাকশাসনপুরে অবস্থিতি করিতে লাগিলাম। তথায় প্রতিদিন সুমধুর গীত ও তুৰ্য্যঘোষ শ্রবণ এবং অপ্সরাগণের নৃত্য সন্দর্শনপূর্ব্বক তাহাতে অবজ্ঞা বা অশ্রদ্ধা প্রদর্শন না করিয়া বরং তাহার তত্ত্বানুসন্ধানে রত থাকিতাম; এদিকে আবার পুরুষাৰ্থবোধে অস্ত্ৰশিক্ষা বিষয়েও সবিশ্লষ মনোনিবেশ করিয়া তাহার পৰ্য্যালোচনা করিতাম, এই কারণে দেবরাজ ইন্দ্র আমার প্রতি সাতিশয় সন্তুষ্ট হইলেন।
“হে মহারাজ! এইরূপে কিছুকাল অতিক্রান্ত হইলে একদা সুররাজ আমার মস্তকে পাণিপ্রদান করিয়া কহিলেন, বৎস! মানব দূরে থাকুক, অদ্যাবধি দেবগণও তোমাকে পরাজয় করিতে সমর্থ হইবেন না। তুমি সংগ্রামে অপ্রমেয় অধৃষ্য ও অপ্রতিম হইবে, অস্ত্ৰযুদ্ধে কেহই তোমার সমকক্ষ হইতে পরিবে না, তুমি সকল বিষয়েই দক্ষ, সর্ব্বদাই অপ্ৰমত্ত, সত্যবাদী, জিতেন্দ্ৰিয়, বেদবেত্তা ও মহাবীর, তুমি আমার নিকট পঞ্চদশ অস্ত্ৰলাভ করিয়াছ এবং অস্ত্রের প্রয়োগ, সংহার, আবৃত্তি [পুনঃ পুনঃ প্রয়োগ ও সংহার—বাণনিক্ষেপ ও নিক্ষিপ্ত বাণের সংহার—ফিরাইয়া আনা], প্ৰায়শ্চিত্ত [অনবধানতাবশতঃ নিরপরাধ ব্যক্তিকে বাণদ্বারা দগ্ধ করিয়া পুনঃ শুশ্রূষাদিদ্বারা তাহার শান্তি করা] ও প্রতিঘাত [বিপক্ষের অন্ত্রে অভিভূত যোদ্ধার তৎপ্রতিকারার্থ নিজাস্ত্ৰ উদ্দীপন— তত্তুল্য অস্ত্ৰক্ষেপণ] এই পঞ্চবিধ বিধিবিজ্ঞানবিষয়েও আর কেহ তোমার সহিত তুল্যরূপে পরিগণিত হইবে না। এক্ষণে তোমার গুরুদক্ষিণার কাল সমুপস্থিত হইয়াছে; অতএব তুমি প্রথমতঃ অঙ্গীকার কর; পশ্চাৎ আমি দক্ষিণা নিরূপণ করিয়া দিব।”
“এই কথা শ্রবণ করিয়া আমি সুররাজকে কহিলাম, ‘হে দেবাধিপ! যে কাৰ্য্য আমার কৃতিসাধ্যে সম্পন্ন হইবার যোগ্য, তাহার সংসাধনে কোনমতেই ত্রুটি করিব না, আপনি নিশ্চয় বোধ করিবেন, উহা সম্পন্ন হইয়াছে।” তখন ভগবান পাকশাসন স্মিতমুখে আমাকে কহিলেন, “হে অর্জ্জুন! ত্ৰিভুবনে তোমার অসাধ্য কিছুই নাই। এক্ষণে নিবাতকবচ-নামক কতকগুলি দুৰ্দান্ত দানব আমার পরমশত্ৰু, তাহারা সাগরগর্ভে দুর্গ নির্ম্মাণপূর্ব্বক অবস্থান করিতেছে, তাহাদিগের রূপ, বল ও প্রভা একই প্রকার, সংখ্যা তিন কোটি, তুমি তাহাদিগকে বিনাশ কর, তাহা হইলে তোমার গুণদক্ষিণাদান সম্পাদিত হইবে।”
গুরুদক্ষিণা-প্ৰদান জন্য অর্জ্জুনের নিবাতকবচাদি দৈত্যবধার্থ যাত্ৰা
অনন্তর দেবরাজ পূর্ব্বে যে রথে আরোহণ করিয়া বিরোচননন্দন বলিকে পরাজয় করিয়াছিলেন, ময়ুরপক্ষসদৃশ রোমপরিবৃত অশ্বযোজিত, মাতলি-পরিচালিত, প্রভাসসম্পন্ন সেই দিব্যরথ প্রদান করিয়া আমার মস্তকে স্বহস্তে কিরীট বন্ধন করিয়া দিলেন এবং লাবণ্যানুরূপ তাঁহার অঙ্গের অলঙ্কার-সকল ও অভেদ্য সুখস্পর্শ কবচ প্ৰদানপূর্ব্বক গাণ্ডীবে অজরা জ্যা যোজনা করিলেন। আমি সেই রথবরে অধিরূঢ় হইয়া যাত্ৰা করিলাম। তখন দেবগণ রথের ঘর্ঘরশব্দে প্রতিবোধিত হইয়া ইন্দ্ৰ-বোধে আমাকে অবলোকন করিতে আগমন করিলেন; পরে নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “হে ফাল্গুন! তুমি কোন কাৰ্য্যসাধনাৰ্থে গমন করিতেছ?” আমি কহিলাম, “হে দেবগণ! আমি নিবাতকবচগণকে যুদ্ধে বিনাশ করিবার নিমিত্ত গমন করিতেছি। এক্ষণে আপনারা আশীর্ব্বাদ করুন।” তখন দেবগণ সন্তুষ্ট হইয়া দেবরাজের ন্যায় আমারও স্তুতিবাদ করিতে লাগিলেন, “হে অর্জ্জুন! এই রথে আরোহণ করিয়া দেবরাজ রণস্থলে শম্বর, নমুচি, বল, বৃত্ৰ, প্ৰহ্লাদ ও নরক প্রভৃতি শতসহস্ৰ অসুরগণকে সংহার করিয়াছেন; তুমিও তদ্রূপ ইহাতে অধিরূঢ় হইয়া নিবাতকবচগণকে বিনাশ করিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই। আর আমরা তোমাকে এই এক পরমোৎকৃষ্ট শঙ্খ প্ৰদান করিতেছি, তুমি ইহাদ্বারা দানবগণকে অনায়াসে পরাজয় করিতে সমর্থ হইবে; বলিতে কি, ত্ৰিদশনাথ এই শঙ্খপ্রভাবেই দেব, দানব প্রভৃতি সমস্ত লোক বিজয় করিয়াছিলেন।”
“তখন আমি জললাভার্থ সেই দেবদত্ত শঙ্খ গ্ৰহণ করিয়া অমরগণকর্ত্তৃক ম্ভূয়মান হইয়া শঙ্খ, কবচ, বাণ ও শরাসন ধারণপূর্ব্বক সংগ্রামাভিলাষে দানবগণোদ্দেশে সাগরগর্ভে গমন করিলাম।”