১৬৫তম অধ্যায়
নিবাতকবচযুদ্ধপর্ব্বাধ্যায়-অর্জ্জুনের গন্ধমাদনে ভ্ৰাতৃগণসহ মিলন
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! মহাবীর অর্জ্জুন মস্তকে কিরীট, গলদেশে মাল্য ও অঙ্গে নানাবিধ অভিনব আভরণ ধারণ করিয়া ক্ষণপ্রভার ন্যায় প্রভাবসম্পন্ন মাতলিপরিচালিত ইন্দ্ররথে আরোহণপূর্ব্বক জলদের অভ্যন্তরবর্ত্তিনী মহতী উল্কার ন্যায় ধূমসম্পর্কশূন্য প্রজুলিত অগ্নিশিখাসদৃশ স্বীয় দীপ্যমান মূর্ত্তিতে নভোমণ্ডল উদ্ভাসিত করিয়া সহসা গন্ধমাদন-পর্ব্বতে আগমন করিলেন। নিতান্ত চিন্তাপরায়ণ পাণ্ডবগণ সেই ইন্দ্ররথ অবলোকন করিয়া অসীম আনন্দপ্রাপ্ত হইলেন। কিরীটিমালী ইন্দ্ৰনন্দন রথ হইতে আরোহণপূর্ব্বক অতি নম্রভাবে তাঁহাদের সমীপে সমুপস্থিত হইলেন ও যথাক্রমে ধৌম্য, যুধিষ্ঠির ও বৃকোদরের পাদবিন্দন করিয়া স্বীয় প্রণয়িনীকে সান্ত্বনা করিতে লাগিলেন; পরে নকুল ও সহদেব উভয়ে আসিয়া তাহাকে অভিবাদন করিলেন। পাণ্ডবগণ ধনঞ্জয়কে প্রাপ্ত হইয়া যেরূপ পরমানন্দলাভ করিয়াছিলেন, ধনঞ্জয়ও তাহাদিগকে অবলোকন করিয়া সেইরূপ আনন্দিত হইলেন।
নমুচিনিসূদন যাহাতে আরোহণ করিয়া দলবদ্ধ সপ্ত দানবকুলের প্রাণসংহার করিয়াছিলেন, সত্ত্বশালী পাণ্ডবগণ সেই ইন্দ্ররথের সমীপবর্ত্তী হইয়া তাহাকে প্ৰদক্ষিণ করিলেন এবং মাতলির প্রতি সুরেন্দ্ৰোচিত সমাদর প্রদর্শনপূর্ব্বক যথাক্রমে দেবগণের কুশল জিজ্ঞাসা করিতে লাগিলেন; মাতলিও পিতার ন্যায় পাণ্ডবগণকে উপদেশসহকারে অভিনন্দন করিয়া সেই অপ্রতিম রথে আরোহণপূর্ব্বক পুনরায় ত্ৰিদিবনাথের সকাশে প্রস্থান করিলেন। মাতলি প্রস্থান করিলে পর শত্রুরিপুপ্রমার্থী শত্ৰুনন্দন শক্রদত্ত মহামূল্য আভরণসকল প্রিয়তমা পাঞ্চালনন্দিনীকে প্রদান করিলেন।
অনন্তর মহাত্মা ধনঞ্জয় কুরুকুলতিলক পাণ্ডবগণ ও সূৰ্য্যাগ্নিসদৃশ প্রভাসম্পন্ন ব্রহ্মর্ষিগণের মধ্যে উপবেশনপূর্ব্বক ‘আমি এইপ্রকারে ইন্দ্ৰ, বায়ু ও মহাদেবের নিকট অস্ত্ৰশিক্ষা করিয়াছি, দেবগণ আমার চরিত্র ও সমাধিতে পরম পরিতুষ্ট হইয়াছেন’, ইত্যাদি সমুদয় স্বৰ্গবাসবৃত্তান্ত সংক্ষেপে বর্ণনা করিয়া সানন্দচিত্তে নকুল ও সহদেবের সহিত সেই আশ্রমে শয়ন করিলেন।