১৬৪. বকরাক্ষস বধ
চতুঃষষ্ট্যধিকশততম অধ্যায়।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে মহারাজ। তদনন্তর বকনিশাচর ভীমসেনের দারুণ প্রহারে সাতিশয় ব্যথিত হইয়া ভয়ানক স্বরে চীৎকারপূর্বক প্রকাণ্ড পর্বতের ন্যায় ধরাতলে পতিত হইল। বরাক্ষসের চীৎকারধ্বনি শ্রবণে তাহার আত্মীয়বর্গ সাতিশয় ত্রাসযুক্ত হইয়া পরিচারকগণ সমভিব্যাহারে গৃহ হইতে বহির্গত হইল। ভীমসেন তাহাদিগকে ভীত ও জ্ঞানশূন্য দেখিয়া সান্ত্বনা করিতে লাগিলেন এবং কহিলেন, তোমরা প্রতিজ্ঞা কর, অদ্যাবধি আর নরহত্যা করিবে না। যে রাক্ষস মনুষ্যহিংসায় প্রবৃত্ত হইবে তাহাকে এইরূপে সংহার করিব। রাক্ষসগণ যে আজ্ঞা বলিয়া ভামের বচনে সম্মত হইল এবং তদবধি শান্তমূৰ্ত্ত হইয়া নগরবাসী জনগণ সমাপে বিচরণ করিতে লাগিল।
তদনন্তর ভীমসেন সেই বকনিশাচরের মৃতদেহ লইয়া তাহার দ্বারদেশে নিক্ষেপপূর্বক অলক্ষিতরূপে তথা হইতে প্রস্থান করিলেন। বকের জ্ঞাতিবর্গ তাহাকে মৃত দেখিয়া ভয়াকুলিতচিতে ইতস্ততঃ পলায়ন করিতে লাগিল। এ দিকে ভীমসেন রাক্ষসবধ সমাপনানন্তর ব্রাহ্মণভবনে প্রত্যাগমন করিয়া যুধিষ্ঠিরের নিকট আদ্যোপান্ত সমুদায় বৃত্তান্ত বৰ্ণন করিলেন।
রজনী প্রভাত হইলে নগরস্থ জনগণ নগর হইতে বহির্গত হইয়া দেখিল যে, বরাক্ষস পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হইয়া রুধিয়োক্ষিত কলেবরে ধরাতলে পতিত রহিয়াছে। তাহারা সেই ভুধরোপম ভূমিনিহিত ভয়ানক বকরাক্ষসকে দেখিয়া রোমাঞ্চিত কলেবরে পুনৰ্বার একচক্ৰায়, গমন করিয়া তথায় ঐ সমস্ত বার্তা প্রচার করিল। তখন একচক্ৰানিবাসী আবালবৃদ্ধবনিতাগণ মৃত বক: রাক্ষসকে দেখিতে গমন করিল। তাহারা সেই বকবধরূপ অতিমানুষ ব্যাপার দর্শনে চমৎকৃত হইয়া দেবাচ্চনা করিতে আরম্ভ করিল। তদনন্তর তাহার “কল্য কাহার পর্যায় গিয়াছে” এই পৰ্যালোচনা করিতে করিতে জানিতে পারিল যে, ব্রাহ্মণের পৰ্য্যায় গিয়াছে। তখন সকলে একত্র হইয়া ব্রাহ্মণের সমীপে গমনপূর্বক উক্ত ব্যাপারের কারণ জিজ্ঞাসা করিল। ব্রাহ্মণ পৌরগণ কর্তৃক এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইয়া পাণ্ডবদিগকে রক্ষা করিবার মানসে যাথার্থ্য গোপনপূর্বক কহিলেন, হে পৌরগণ! আমি পৰ্যায়ক্রমে রাক্ষসের আহার প্রদানার্থ আদিষ্ট হইয়া সপরিবারে ক্রন্দন করিতেছিলাম, এমত সময়ে এক মহামনাঃ মন্ত্রসিদ্ধ ব্রাহ্মণ আমার সমীপে সমুপস্থিত হইলেন। তিনি আমার ও পৌরবর্গের দুঃখের বিষয় অবগত হইয়া দয়াদ্রচিত্তে আমাকে কহিলেন, হে ব্ৰহ্মন্! অদ্য আমি অন্ন লইয়া সেই দুরাত্মা রাক্ষসের নিকট গমন করিব, আমার নিমিত্ত তোমার কিছুমাত্র ভয় নাই। তিনি আমাকে এই কথা বলিয়া অগ্রহণপূর্বক বকভবনে গমন করিলেন। নিশ্চয়ই বোধ হইতেছে, ইহা সেই ব্রাহ্মণের কাৰ্য। পুরবাসী ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রগণ ব্রাহ্মণের ঐ কথা শুনিয়া পরমহ্লাদে উৎসব করিতে লাগিল। এইরূপে সমস্ত জানপদগণ সেই অদ্ভুত ব্যাপার দর্শন করিয়া নগরে আগমন করিল। পাণ্ডবগণ ব্রাহ্মণ নিকেতনেই বাস করিতে লাগিলেন।
বকবধ পর্ব সমাপ্ত।