১৬৪তম অধ্যায়
নির্দ্দয়দিগের দোষপ্রদর্শন
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! আমি সৰ্ব্বদা সাধুসহবাস নিবন্ধন অনৃশংসতা বিশেষ অবগত আছি, নৃশংস ব্যক্তিদিগের আচারব্যবহার কিছুই অবগত নহি। সাধু ব্যক্তিরা কূপ, অগ্নি ও কণ্টকের ন্যায় নৃশংস ব্যক্তিদিগকে নিয়ত পরিত্যাগ করিয়া থাকেন। নিষ্ঠুর ব্যক্তিকে উভয়লোকেই অশেষ দুঃখ ভোগ করিতে হয়। এক্ষণে বিশেষরূপে নৃশংস ব্যক্তিদিগের বিষয় কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! নৃশংস ব্যক্তিদিগকে সততই কুকর্ম্মে প্রবৃত্ত হইতে ও কুকৰ্ম্ম করিবার বাসনা করিতে দেখা যায়। উহারা নিরন্তর পরের নিন্দা করে, জনসমাজে নিন্দনীয় হয় এবং আপনাকে দৈবপ্রভাবে বঞ্চিত বলিয়া বোধ করিয়া থাকে। উহাদের ন্যায় নীচাশয় আর কেহই নাই, উহারা সতত আত্মাভিমান, আত্মশ্লাঘা ও আপনার বদান্যতা প্রকাশ করে। উহারা যারপরনাই শঙ্কিতচিত্ত, ছলগ্রাহী[ছলকারী], কৃপণ, মিথ্যাপরায়ণ, লুব্ধ, আশ্রমবাসীদিগের দ্বেষ্টা ও হিংসাবিহার[শিকার]নিরত। উহারা নিরন্তর আশ্রমসঙ্কর করিবার চেষ্টা ও স্বীয় সহযোগীদিগের প্রশংসা করিয়া থাকে। উহাদিগের গুণাগুণ কিছুমাত্র নাই। উহারা গুণশালী ধার্ম্মিক লোককে পাপাত্মা বলিয়া বিবেচনা করে এবং আপনার স্বভাবের ন্যায় সকলের স্বভাব বিবেচনা করিয়া। কাহাকেও বিশ্বাস করে না; অন্যের অণুমাত্র দোষ দর্শন করিলে তৎক্ষণাৎ তাহা প্রকাশ করিয়া দেয়; অন্যের দোষ আপনার দোষের সমান হইলে কখনই তাহা উল্লেখ করে না; উপকারী ব্যক্তিকে শত্রু জ্ঞান করে এবং তাহার কাৰ্য্যকালে তাহাকে অর্থদান করিয়া যারপরনাই পরিতাপিত হয়। যে ব্যক্তি সকলের সমক্ষে একাকী সুস্বাদু বিবিধ ভক্ষ্যসামগ্রী ভোজন করে, তাহাকেও নিষ্ঠুর বলিয়া পরিগণিত করা যায়; কিন্তু যিনি অগ্রভাগ ব্রাহ্মণগণকে অৰ্পণ করিয়া অবশিষ্ট ভাগ সুহৃদগণসমভিব্যাহারে ভোজন করেন, তিনি ইহলোকে অনন্ত সুখ ও পরলোকে স্বর্গলাভ করিতে সমর্থ হয়েন।
“হে ধৰ্ম্মরাজ! এই আমি তোমার নিকট নৃশংসদিগের বৃত্তান্ত কীৰ্ত্তন করিলাম। উহাদিগের সংসর্গ পরিত্যাগ করা জ্ঞানবান ব্যক্তিমাত্রেরই অবশ্য কর্ত্তব্য।”