১৫৯তম অধ্যায়
অজ্ঞান-উৎপত্তির স্থান—অজ্ঞান-লোভের সম্বন্ধ
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! আপনি অনর্থের অধিষ্ঠানস্বরূপ লোভের বিষয় নির্দেশ করিলেন, এক্ষণে অজ্ঞানের বিষয় সবিস্তর কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! অজ্ঞান অতি অনিষ্টকর পদার্থ। যে ব্যক্তি অজ্ঞানের বশীভূত হইয়া পাপকাৰ্য্যের অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হয়, আপনার অবনতি বুঝিতে না পারে এবং সতত সাধুদিগের দ্বেষ করে, তাহাকে নিশ্চয়ই জনসমাজে নিন্দনীয় হইতে হয়। অজ্ঞানপ্রভাবকেই লোক নিরয়গামী [নরকগামী], দুর্গতিবিশিষ্ট, ক্লিষ্ট ও আপদে নিমগ্ন হইয়া থাকে।”
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! অজ্ঞান হইতেই লোকের দুঃখ সমুৎপন্ন হইয়া থাকে; এই নিমিত্ত অজ্ঞানের উৎপত্তি, স্থিতি, বৃদ্ধি, ক্ষয়, উদয়, মূল, সংযোগ, গতি, কাল, কারণ ও ফল শ্রবণ করিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ হইতেছে, আপনি তৎসমুদয় সবিস্তর কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! অনুরাগ, দ্বেষ, মোহ, হর্ষ, শোক, অভিমান, কাম, ক্রোধ, দর্প, তন্দ্রা, আলস্য, ইচ্ছা, সন্তাপ, পরশ্রীকাতরতা ও পাপকার্য্যের অনুষ্ঠান একমাত্র অজ্ঞান হইতেই উৎপন্ন হয়; সুতরাং উহাদিগকে অজ্ঞানের স্বরূপ বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। এক্ষণে তুমি অজ্ঞানের উৎপত্তি ও বৃদ্ধি প্রভৃতি যাহা যাহা জিজ্ঞাসা করিলে, তৎসমুদয় সবিস্তর কীৰ্ত্তন করিতেছি, শ্রবণ কর। অজ্ঞান ও অতিলোভ এই উভয়ই তুল্যফলপ্রদ ও সমদোষাক্রান্ত, অতএব ঐ উভয়কেই এক পদার্থ বলিয়া বিবেচনা করা উচিত। লোভ হইতেই অজ্ঞানের উৎপত্তি হইয়া থাকে এবং লোভের স্থিতিতে অজ্ঞানের স্থিতি, লোভের ক্ষয়েই অজ্ঞানের ক্ষয়, লোভের বৃদ্ধিতে অজ্ঞানের বৃদ্ধি ও লোভের উদয়ে অজ্ঞানের উদয় হয়। মোহ অজ্ঞানের মূল এবং মোহের সংযোগে অজ্ঞানের সংযোগ হইয়া থাকে। কাম অজ্ঞানের গতি। যে সময় লোকের লোভজনিত আশা বিফল হয়, সেই কালই অজ্ঞানোৎপত্তির কাল। আর লোভ হইতে অজ্ঞান ও অজ্ঞান হইতে লোভ উৎপন্ন হয়, সুতরাং লোভই সকল দোষের আকর, অতএব লোভকে পরিত্যাগ করা অবশ্য কর্ত্তব্য। মহারাজ জনক, যুবনাশ্ব, বৃষাদর্ভি, প্রসেনজিৎ ও অন্যান্য মহীপালগণ লোভ পরিত্যাগ করিয়াই স্বর্গলাভ করিয়াছেন। এক্ষণে তুমিও তাঁহাদের ন্যায় লোভবিহীন হও। লোভ পরিত্যাগ করিলেই ইহলোকে সুখভোগ করিতে পারিবে।”