১৫৬তম অধ্যায়
পাণ্ডবগণের প্রতি দৈববাণীর সুগম পথ-নির্দেশ
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে রাজন! একদা রাজা যুধিষ্ঠির সকলের সমক্ষে ভমিসেনকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “হে বৃকোদর! পূর্ব্বে দেব ও মাহাত্মা মুণিগণ যে যে স্থানে বিচরণ করিতেন, আমরা সেই সকল পবিত্র তীর্থ ও পৃথক পৃথক মনোহর বন অবলোকন করিয়াছি; ঋষি ও রাজর্ষিগণের পূর্ব্বচরিত এবং বিবিধ শুভাবহ কথা শ্রবণ করিয়াছি। সেই সকল আশ্রমে দ্বিজগণের সহিত স্নান, সলিল ও পুষ্পে দেবগণের তর্পণ এবং যথালব্ধ ফলমূলে পিতৃগণের অর্চনা করিয়াছি; রমণীয় পর্ব্বত, সরোবর, সাগর ও ইলা, সরস্বতী, সিন্ধু, যমুনা, নর্ম্মদা প্রভৃতি নানাতীর্থে ব্রাহ্মণগণের সহিত অবগাহন করিয়াছি; গঙ্গাদ্বার অতিক্রম করিয়া ভূরি ভূরি পর্ব্বত, হিমালয়, নরনারায়ণাশ্রম, বিশাল বন্দরী, সিদ্ধদেবর্ষি-সেবিত দিব্যপুষ্করিণী দর্শন করিয়াছি; ফলতঃ মহাত্মা লোমশের প্রসাদে কোন পুণ্যায়তন দর্শন করিতে অবশিষ্ট নাই। এক্ষণে ঐ সিদ্ধগণসেবিত পবিত্র বৈশ্রবণাবাসে গমন করিব, তাহার উপায় অন্বেষণ কর।”
রাজা যুধিষ্ঠির এইরূপ কহিতেছেন, এমত সময়ে আকাশবাণী আবির্ভূত হইল, “হে রাজেন্দ্ৰ! এই বৈশ্রবণের আশ্রম হইতে সেই দুৰ্গম-দেশে গমন করিতে সমর্থ হইবে না, অতএব যে পথ আশ্রয় করিয়া আগমন করিয়াছ, সেই পথ অবলম্বন করিয়া পুনরায় বদরিকাশ্রমে প্ৰতি গমন কর। তথা হইতে সিদ্ধচারণসেবিত ফলকুসুমশোভিত বৃষপর্ব্বার আশ্রমে অধিবাস করিবে। সেই আশ্রমে অতিবর্ত্তনপূর্ব্বক আর্ষ্টিষেণাশ্রমে গমন করিবে। তৎপরে ধনেশ্বরের নিবেশস্থান নয়নগোচর হইবে।” এই সময়েই সুখস্পর্শ সুশীতল সুগন্ধ গন্ধবহ কুসুমরাশি বর্ষণ করিতে লাগিল ও ব্রাহ্মণ প্রভৃতি সকলে ঐ দৈববাণী শ্রবণ করিয়া বিস্ময়াপন্ন হইলেন। তখন মহাত্মা ধৌম্য যুধিষ্ঠিরকে কহিলেন, “মহারাজা! আর কি প্রত্যুত্তর করিব, এক্ষণে দৈববাণী অনুসারে কাৰ্য্য করুন।”
অনন্তর রাজা যুধিষ্ঠির তাঁহার বাক্য অঙ্গীকার করিয়া ভীমসেন প্রভৃতি ভ্রাতৃগণ, প্রিয়তমা পাঞ্চালী ও ব্রাহ্মণগণের সহিত বদরিকাশ্রমে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া পরমসুখে কালযাপন করিতে লাগিলেন।
তীর্থযাত্রাপর্ব্বাধ্যায় সম্পূর্ণ।