১৪৮তম অধ্যায়
পতির উদ্দেশে কপোতর অগ্নিপ্রবেশ—দিব্যগতি
ভীষ্ম কহিলেন, “ব্যাধ প্রস্থান করিলে পর কপোতী স্বীয় ভৰ্ত্তাকে স্মরণ করিয়া নিতান্ত শোকার্ত্তচিত্তে রোদন করিতে করিতে কহিল, ‘হা নাথ! আমি কখন তোমার অমঙ্গল স্মরণ করি নাই। রমণীগণ অনেক পুত্ৰসত্ত্বেও পতিবিহীন হইলে সতত শোকসাগরে মগ্ন হইয়া থাকে। বন্ধুবান্ধবগণও তাহাকে দেখিয়া যারপরনাই শোকপ্রকাশ করেন। তুমি নিয়ত আমাকে পরমসমাদরে প্রতিপালন করিতে কেমন মনোহর মৃদুমধুরবচনে সম্ভাষণ করিতে। পূৰ্বে তোমার সহিত পর্ব্বতগুহা, নদী, নির্ঝর, রমণীয় বৃক্ষাগ্র ও আকাশমণ্ডল প্রভৃতি কতস্থানে সুখে বিহার করিয়াছি, আজ আমার সে সুখসম্পত্তি কোথায়? পিতা, পুত্র ও ভ্রাতা ইহারা পরিমিত সুখপ্রদান করিয়া থাকেন; স্বামী ভিন্ন রমণীগণের অপরিমিত সুখদাতা আর কেহই নাই। ভর্ত্তাই স্ত্রীজাতির একমাত্র অবলম্বন। ভর্ত্তার নিমিত্ত সমুদয় সম্পত্তি পরিত্যাগ করাও বিধেয়। এক্ষণে তোমার বিরহে ক্ষণকালও আমার জীবনধারণ করা কর্ত্তব্য নহে। পতিব্রতা নারী পতিহীনা হইয়া কখনই প্রাণধারণে সমর্থ হয় না।
“পতিপরায়ণা কপোতী করুণস্বরে এইরূপে নানাপ্রকার বিলাপ করিয়া পরিশেষে সেই প্রজ্বলিত হুতাশনমধ্যে প্রবেশ করিয়া দেখিল যে, তাহার ভর্ত্তা বিচিত্র মাল্য, পরিধেয় বস্ত্র ও কেয়ুর প্রভৃতি অলঙ্কারসমুদয়ে বিভূষিত হইয়া পুস্পকরথে অধিরূঢ় হইয়াছে। পুণ্যকর্ম্মপরায়ণ মহাত্মারা তাহার চতুর্দ্দিকে অবস্থানপূর্ব্বক স্তবস্তুতি করিতেছেন। অনন্তর ঐ কপোত স্বীয় পত্নীর সহিত সেই বিমানে আরোহণপূৰ্ব্বক স্বর্গে গমন করিয়া তত্ৰত্য দেবগণের নিকট স্বীয় কৰ্ম্মানুরূপ সম্মানভাজন হইয়া পরমসুখে বিহার করিতে লাগিল।”