১৪৩তম অধ্যায়
কুন্তীর কর্ণকে স্বপক্ষে আনয়নচেষ্টা
কৰ্ণ কহিলেন, “ভদ্রে। রাধাগর্ভসম্ভূত অধিরথের ঔরসজাত কৰ্ণ আপনাকে অভিবাদন করিতেছে, আপনি কি নিমিত্ত এ স্থানে আগমন করিয়াছেন? আজ্ঞা করুন, কি করিতে হইবে?”
কুন্তী কহিলেন, “বৎস! তুমি কুন্তীনন্দন, রাধাগর্ভসম্ভূত নও, অধিরথও তোমার পিতা নহেন, সূতকূলে তোমার জন্ম হয় নাই। তুমি আমার কানীনপুত্র; আমি কন্যাবস্থায় সর্ব্বাগ্রে কুন্তীরাজভবনে তোমাকে প্রসব করিয়াছি। ভুবনপ্রকাশক ভগবান দিনকর আমার গৰ্ভে তোমাকে উৎপাদন করিয়াছেন। তুমি সহজাতকবচকুণ্ডলধারী দেবপুত্রসদৃশ ও দুৰ্দ্ধৰ্ষ হইয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছ। হে বৎস! তুমি আমার গৃহে, আমার গর্ভে জন্মগ্রহণপূর্ব্বক মোহবশতঃ স্বীয় ভ্রাতৃগণের সহিত সৌহার্দ না করিয়া এক্ষণে যে দুৰ্য্যোধনের সেবা করিতেছ, ইহা কি তোমার সমুচিত কাৰ্য্য? মহাত্মাগণ ধর্ম্মবিনিশ্চয়বিষয়ে পিতামাতাকে সন্তুষ্ট করা পুত্রের প্রধান ধর্ম্ম বলিয়া কীর্ত্তন করিয়াছেন; মহাবীর ধনঞ্জয় পূর্ব্বে যুধিষ্ঠিরের নিমিত্ত যে সম্পত্তি আহরণ করিয়াছিলেন, দুৰ্য্যোধনপ্রভৃতি দুরাত্মাগণ ছলপূর্ব্বক তাহা অপহরণ করিয়াছে; এক্ষণে তুমি ধৃতরাষ্ট্রতনয়গণের নিকট হইতে উহা গ্রহণপূর্ব্বক স্বচ্ছন্দে ভোগ কর। আজি কৌরবসকল কর্ণার্জ্জুনসমাগম অবলোকন করুন ও দুরাত্মাগণ তোমাদের সৌভ্রাত্ৰ সন্দর্শন করিয়া অবনত হউক। অর্জ্জুন ও তুমি তোমরা দুইজন বলদেব ও কৃষ্ণের সদৃশ, তোমরা একত্র হইলে কোন কাৰ্য্য সম্পাদন না। করিতে পার? হে কর্ণ! তুমি স্বীয় পঞ্চভ্রাতার সহিত মিলিত হইলে মহাযজ্ঞে বেদীর উপরিস্থ দেবগণপরিবৃত ব্ৰহ্মার ন্যায় শোভা পাইবে। তুমি সর্ব্বগুণসম্পন্ন সর্ব্বশ্রেষ্ঠ ভ্রাতৃগণের অগ্রজ ও পৃথ্যসূত; অতএব তোমার সূতপুত্রসংজ্ঞা তিরোহিত হওয়াই উচিত।”