শ্রীরাম বলেন, হে বশিষ্ঠ পুরোহিত।
আজ্ঞা কর পিতৃশ্রাদ্ধ করি যে বিহিত।।
শ্রীরাম লক্ষ্মণ সীতা চলেন ত্বরিত।
হইলেন ফল্গুনদী-তীরে উপনীত।।
সকলে সলিলে স্নান করিয়া তখন।
করিলেন নাম গোত্র লইয়া তর্পণ।।
স্নান করি তীরেতে বসেন তিন জন।
তখন বসিল সবে আত্ন-বন্ধুগণ।।
যথা রাম তথা হয় অযোধ্যানগরী।
রামচন্দ্রে ঘেরিয়া বসিল সব পুরী।।
শ্রীরাম বলেন, মুনি জিজ্ঞাসি কারণ।
আয়ু সত্বে পিতা মরিলেন কি কারণ।।
অযুত বৎসর লোক সূর্য্যবংশে জীয়ে।
কাল পূর্ণ না হইতে মৃত্যু কি লাগিয়ে।।
বশিষ্ঠ বলেন, রাজা গিয়া পরলোকে।
রক্ষা পাইলেন রাম তোমা পুত্রশোকে।।
সুমন্ত্র কহিল গিয়া, তুমি গেলা বন।
হা রাম বলিয়া রাজা ত্যজিল জীবন।।
পিতৃকথা শুনিয়া কান্দেন তিন জন।
এদিকে শ্রাদ্ধের দ্রব্য হয় আয়োজন।।
তপোবনে ছিলেন যতেক মুনিগণ।
পিতৃশ্রাদ্ধ শ্রীরাম করেন নিমন্ত্রণ।।
পিতৃশ্রাদ্ধ করিলেন ফল্গুনদী-তীরে।
পিতৃপিণ্ড সমর্পণ করেন সে নীরে।।
মুনিগণ কহে, কি রাজার পরিণাম।
তিনি পিণ্ড দেন, যিনি নিজে মোক্ষধাম।।
শ্রীরামেরে বলেন, বশিষ্ঠ মহাশয়।
ভরতের প্রতি রাম কি অনুজ্ঞা হয়।।
তোমা বিনা ভরতের আর নাহি গতি।
বুঝিয়া ভরতে রাম কর অনুমতি।।
শ্রীরাম বলেন, মুনি হইলাম সুখী।
প্রাণের অধিক আমি ভরতেরে দেখি।।
ভরতে আমাতে নাহি করি অন্যভাব।
ভরতেরে রাজত্বে আমার রাজ্যলাভ।।
যাও ভাই ভরত ত্বরিত অযোধ্যায়।
মন্ত্রিগণ লয়ে রাজ্য করহ তথায়।।
সিংহাসন শূন্য আছে ভয় করি মনে।
কোন্ শত্রু আপদ ঘটাবে কোন্ ক্ষণে।।
তোমারে জানাব কত, আছ যে বিদিত।
বিবেচনা করিবে সর্ব্বদা হিতাহিত।।
চতুর্দ্দশ বৎসর জানহ গত প্রায়।
চারি ভাই একত্র হইব অযোধ্যায়।।