যুধিষ্ঠিরাদির ধনদানে অনুমতি
বৈশম্পায়ন বলিলেন, ঐ সময় অর্জ্জুন বৃকোদরকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “মহাশয়! আপনি আমার জ্যেষ্ঠভ্রাতা ও গুরু। আপনাকে আর অধিক বলা আমার কর্ত্তব্য নহে। এক্ষণে আপনার নিকট আমার এইমাত্র বক্তব্য যে রাজা ধৃতরাষ্ট্র সর্ব্বতোভাবে আমাদিগের পূজ্য। বিশেষতঃ সাধু ব্যক্তিরা অন্যকৃত অপকার স্মরণ না করিয়া উপকারই স্মরণ করিয়া থাকেন।”
ধর্ম্মাত্মা অৰ্জ্জুন এই কথা কহিলে, ধৰ্ম্মনন্দন তাঁহার বাক্য শ্রবণ করিয়া বিদুরকে সম্বোধনপুৰ্ব্বক কহিলেন, “ক্ষত্তঃ [হে বিদুর]। তুমি আমার আদেশানুসারে কৌরবেন্দ্র ধৃতরাষ্ট্রকে কহিবে যে, তিনি পুত্র ও ভীষ্মাদি বন্ধুবর্গের শ্রাদ্ধার্থ যে পরিমাণ ধনদান করিতে বাসনা করেন, তাহা আমার কোষ হইতে গ্রহণ করুন। ভীমসেন তাহাতে বিরক্ত হইবে না।”
ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির এই কথা কহিয়া অৰ্জ্জুনকে যথেষ্ট প্রশংসা করিলেন। তখন ভীমসেন ধনঞ্জয়ের প্রতি কটাক্ষ নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন। ঐ সময় রাজা যুধিষ্ঠির পুনরায় বিদুরকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন, “মহাত্মন্! যেন নরপতি ধৃতরাষ্ট্র বৃকোদরের প্রতি কোপ প্রকাশ না করেন। বৃকোদর অরণ্যমধ্যে শীত, গ্রীষ্ম ও বৃষ্টিনিবন্ধন অনেক কষ্টভোগ করিয়াছে, তাহা আপনার অবিদিত নাই। আপনি আমার বচনানুসারে জ্যেষ্ঠতাতকে কহিবেন যে, তাঁহার যে যে দ্রব্য যে পরিমাণে গ্রহণ করিতে বাসনা হয়, তিনি তৎসমুদয়ই যেন আমার গৃহ হইতে গ্রহণ করেন। বৃকোদর অত্যন্ত দুঃখিত হইয়া যে অহঙ্কার প্রকাশ করিলেন, তাহা যেন তিনি হৃদয়মধ্যে স্থানদান না করেন। অর্জ্জুনের ও আমার যেসমুদয় ধন আছে, তিনি সেই সমুদয় ধনেরই অধিকারী। তাঁহার যাহা ইচ্ছা হয়, ব্রাহ্মণগণকে তাহা দান ও অন্যান্য ব্যয় করিয়া পুত্র ও বান্ধবগণের নিকট ঋণশুন্য হউন। আমার ধনের কথা দূরে থাকুক, আমার এই শরীরও তাঁহার একান্ত অধীন।”