১২৬তম অধ্যায়
মুনিসমীপে সুমিত্রের আশাক্লেশবিষয়ক প্রশ্ন
ভীষ্ম কহিলেন, “এইরূপে মহারাজ সুমিত্র নিবিড় অরণ্যমধ্যে প্রবেশপূৰ্ব্বক নিতান্ত পরিশ্রান্ত হইয়া এক তপস্বীর আশ্রম অবলোকন করিয়া তথায় উপবেশন করিলেন। তাপসগণ তাঁহাকে নিতান্ত পরিশ্রান্ত ও ক্ষুধার্ত্ত অবলোকনপূৰ্ব্বক সকলে সমাগত হইয়া তাঁহাকে যথাবিধি পূজা করিতে লাগিলেন; মহারাজ সুমিত্রও তাপসদত্ত পূজা গ্রহণপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে তপোবৃদ্ধির বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করিলেন। তখন মহর্ষিগণ তাঁহার বাক্যে প্রত্যুত্তর প্রদানপূর্ব্বক কহিলেন, ‘রাজন! আপনি কোন বংশে জন্ম-পরিগ্রহ করিয়াছেন? আপনার নাম কি? আর কি নিমিত্তই বা খড়্গ ও ধনুৰ্ব্বাণ ধারণপূৰ্ব্বক পাদচারে এই তপোবনে উপস্থিত হইলেন, তাহা কীৰ্ত্তন করুন, শ্রবণ করিতে আমাদিগের নিতান্ত কৌতূহল হইতেছে।’
“তখন নরপতি ব্রাহ্মণগণকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক কহিলেন, ‘মহর্ষিগণ! আমি হৈহয়বংশে মিত্ররাজের ঔরসে জন্মপরিগ্রহ করিয়াছি। আমার নাম সুমিত্র। আমি মৃগয়ার্থ শরনিকরে অসংখ্য মৃগের প্রাণসংহার করিয়া বনমধ্যে পর্য্যটন করিতেছিলাম। আমার সঙ্গে স্ত্রী, অমাত্য ও অনেক সৈন্যসামন্ত ছিল। আমি ইতিপূৰ্ব্বে এক মহাবলপরাক্রান্ত মৃগকে বাণবিদ্ধ করিয়াছিলাম। ঐ মৃগ আমার শরে সমাহত হইয়া সেই বাণ লইয়া পলায়ন করাতে আমি তাহার অনুসরণক্রমে সহসা এই তপোবনে আপনাদিগের সমীপে সমুপস্থিত হইয়াছি। এক্ষণে শ্রীবিহীন, পরিশ্রান্ত ও হতাশ হওয়াতে আমার যারপরনাই দুঃখ হইতেছে। বিশেষতঃ আমি আশায় বঞ্চিত হইয়া যেরূপ নিদারুণ দুঃখ ভোগ করিতেছি, আমার বেশবৈলক্ষণ্য বা নগরপরিত্যাগনিবন্ধন তাদৃশ কষ্ট হইতেছে না। পৰ্ব্বতপ্রধান হিমালয় ও সুবিস্তীর্ণ মহোদধি যেমন ঔন্নত্য ও বিস্তৃতিদ্বারা নভোমণ্ডলের অন্তঃসীমা গমন করিতে পারে না, তদ্রূপ আমিও আশার অবধি-দর্শনে সমর্থ হইলাম না। হে তপোধনগণ! আপনারা সৰ্ব্বজ্ঞ; আপনাদিগের অবিদিত কিছুই নাই। অতএব আপনাদিগের নিকট জিজ্ঞাসা করি, আশাসম্পন্ন পুরুষ ও অন্তরীক্ষ এই উভয়ের মধ্যে কাহাকে মহত্ত্বনিবন্ধন শ্রেষ্ঠ বলিয়া গণনা করা যায়? এই বিষয় শ্রবণ করিতে আমার নিতান্ত কৌতূহল হইতেছে। অতএব যদি ইহা আপনাদিগের গুহ্য অথবা তপোবিঘ্নজনক হয়, তাহা হইলে আমি শ্রবণ করিতে অভিলাষ করি না। এক্ষণে আমি যে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলাম, যদি উহা কর্ত্তব্য হয়, তাহা হইলে আপনারা একত্র সমবেত হইয়া কীৰ্ত্তন করুন।”