১২৫তম অধ্যায়
সন্ধিবিষয়ে ভীষ্ম-দ্রোণের উপদেশ
বৈশম্পায়ন বলিলেন, সমদুঃখসুখ [সুখেদুঃখে] ভীষ্ম ও দ্ৰোণ ধৃতরাষ্ট্রের বাক্য শ্রবণ করিয়া অশিষ্টস্বভাব [শাসনের অযোগ্য—অসাধু চরিত্র]। দুৰ্য্যোধনকে কহিলেন, “হে দুৰ্য্যোধন! এখনও অর্জ্জুন ও বাসুদেব কবচ পরিধান করেন নাই, এখনও গাণ্ডীবাশরাসনে জ্যা আরোপিত হয় নাই, এখনও পুরোহিত ধৌম্য শত্রুসেনাদিগকে যাজ্ঞাগ্নিতে আহুতি প্রদান করেন নাই, এখনও মহাধনুৰ্দ্ধর লজ্জাশীল যুধিষ্ঠির তোমার সেনাগণের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন নাই, এখনও কেহ বীরবার ধনঞ্জয় ও মহাধনুৰ্দ্ধর বৃকোদরকে তাঁহাদের সেনাগণের মধ্যে নয়নগোচর করেন নাই, এখনও গদাপাণি ভীমসেন সেনাগণকে পরাভব করিয়া পথে পথে বিচরণ করেন নাই ও বনস্পতি [বৃক্ষপুম্পোদগম ব্যতিরেকে একবারেই যাহাদের ফল হয়, যেমন বট প্রভৃতি বড় বড় বৃক্ষ] হইতে ফলপাতনের ন্যায় বীরঘাতিনী গদাদ্বারা গজযোধি[গজারোহণে যুদ্ধকারী]-গণের কালপরিণত [মরণকালপ্রাপ্ত, বৃক্ষফল পক্ষে-পক্ক] মস্তকসকল রণক্ষেত্রে নিপাতিত করেন নাই, এখনও কৃত্রাস্ত্র [অস্ত্ৰে বিশেষ শিক্ষিত] ক্ষিপ্রকারী নকুল, সহদেব, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট, শিখণ্ডী ও শিশুপালনন্দন কবচমণ্ডিত হইয়া মহাসমুদ্রে কুম্ভীরের প্রবেশের ন্যায় যুদ্ধক্ষেত্রে সমাগত হন নাই, এখনও ভুমিপালগণের সুকুমার কলেবরে অত্যুগ্র শরনিকর নিপতিত হয় নাই এবং এখনও কৃতাস্ত্র লঘুহস্ত দূরঘাতী [দুরস্থ প্ৰতিপক্ষহন্তা] বীরগণ তোমার যোদ্ধৃগণের চন্দনাগুরুচৰ্চিত হারনিষ্কবিভূষিত বক্ষঃস্থলে লৌহময় মহাস্ত্ৰসকল প্রবেশিত করেন নাই; এই অবসরে সেই ভাবী অতি বিষম হত্যাকাণ্ড [বধব্যাপার] শান্ত হউক। তুমি মস্তকদ্বারা রাজকুঞ্জর [নৃপতিশ্রেষ্ঠ] যুধিষ্ঠিরকে অভিবাদন কর; তিনিও করদ্ধারা তোমাকে প্রতিগ্ৰহ [স্নেহালিঙ্গনে আবদ্ধ] করুন, শান্তির নিমিত্ত ধ্বজ, অঙ্কুশ ও পতাকাচিহ্নিত দক্ষিণবাহু তোমার স্কন্ধে নিক্ষেপ করুন এবং তোমার উপবেশনান্তে রত্নৌষধিসমেত রক্তবর্ণ অঙ্গুলিতলসুশোভিত পাণিতলে তোমার পৃষ্ঠদেশ পরিমার্জিত করুন; উন্নতস্কন্ধ মহাবাহু বৃকোদরও শান্তির নিমিত্ত কুশলসম্ভাষণ করুন এবং অর্জ্জুন, নকুল ও সহদেব ইঁহারাও তোমাকে অভিবাদন করুন। তুমি স্নেহসহকারে তাঁহাদিগের মস্তক আঘ্রণ ও তাঁহাদিগের সহিত প্রণয়সম্ভাষণ কর। এই সমস্ত নরাধিপ তোমাকে স্বীয় ভ্রাতা পাণ্ডবগণের সহিত সম্মিলিত দেখিয়া আনন্দাশ্রু বিসর্জ্জন করুন। তুমি সকল [বিভিন্ন] রাজধানীতে কুশলসংবাদ ঘোষণা কর এবং বিগতসন্তাপ হইয়া সৌভ্রাত্রসহকারে এই পৃথিবী ভোগ কর।”