১২৩তম অধ্যায়
অশ্বিনীকুমারের প্রক্রিয়ায় চ্যবনের যুবত্বলাভ
লোমশ কহিলেন, “এইরূপে কিয়ৎকাল অতীত হইলে একদা অশ্বিনীকুমারযুগল কৃতস্নাতা বিবৃতাঙ্গী লাবণ্যবতী সুকন্যাকে নিরীক্ষণ করিয়া তৎসন্নিধানে গমনপূর্ব্বক কহিলেন, ভদ্রে! তুমি কে? কাহার পরিগ্রহ? কি নিমিত্ত কাননে আগমন করিয়াছ? যথার্থ করিয়া বল; আমরা শ্রবণ করিতে নিতান্ত সমুৎসুক হইয়াছি।”
সুকন্যা লজ্জাবনতমুখী হইয়া কহিলেন, “হে সুরোত্তমযুগল! আমি রাজা শৰ্য্যাতির দুহিতা, মহাত্মা চ্যবনের ভাৰ্য্যা।” অশ্বিনীকুমারেরা সহাস্য-বদনে কহিলেন, “কল্যাণি! পিতা তোমাকে কি নিমিত্ত এই অত অল্পবয়স্ক ঋষিকে প্ৰদান করিলেন? তুমি এই অরণ্যমধ্যে সৌদামিনীর ন্যায় শোভমানা হইতেছ, তোমার ন্যায় কামিনী দেবলোকেও প্রত্যক্ষ হয় না; তুমি বস্ত্রাভরণবিহীন হইয়াও এই বনস্থলী অলঙ্কৃত করিয়া আছ। নানা আভরণ ও মনোহর বসন পরিধান করিলে তোমার ভূয়সী শ্ৰীবৃদ্ধি হয়; অতএব এইরূপ মলপঙ্কিনী হওয়া কি উচিত? তুমি কি নিমিত্ত দীনহীনের ন্যায় হইয়া এই জরা-জর্জ্জরিত কামভোগবহিষ্কৃত পতির উপাসনা করিতেছ? ইনি পরিত্রাণ ও ভরণ-পোষণে অসমর্থ; অতএব তুমি চ্যবনকে পরিত্যাগপূর্ব্বক আমাদিগের অন্যতরকে বরমাল্য প্ৰদান কর। এই অকর্ম্মণ্য স্বামীর নিমিত্ত ঈদৃশ সুললিত মনোহর নবযৌবন বিফল করিও না।”
“সুকন্যা এইরূপ অভিহিত হইয়া কহিলেন, “হে অমরযুগল! আমি স্বামীর প্রতি সাতিশয় অনুরক্ত, আমার মন বিচলিত হইবার নহে; আপনারা কদাচা এরূপ বিবেচনা করিবেন না।” তখন দেববৈদ্য অশ্বিনীকুমারযুগল কহিলেন, ভদ্রে! আমরা তোমার পতিকে রূপযৌবনসম্পন্ন করিব, তাহাতে সন্দেহ নাই। পরে তুমি আমাদিগের অন্যতমকে পতিত্বে বরণ করিবে। অধুনা এই নিয়মবৃত্তান্ত তোমার পতিকে নিবেদন কর।” সুকন্যা তাহাদিগের বাক্যশ্রবণানন্তর ভার্গবের নিকট উপনীত হইয়া অশ্বিনীকুমারোক্ত নিয়ম-বৃত্তান্ত কীর্ত্তন করিলে, তিনি তদ্বিষয়ে অনুমতি প্রদান করিলেন। সুকন্যা স্বামীকর্ত্তৃক অনুজ্ঞাত হইয়া উল্লিখিত কাৰ্য্যসম্পাদনার্থ অশ্বিনীকুমারযুগলকে নিবেদন করিলে তাঁহারা কহিলেন, “তোমার পতি এই জলমধ্যে প্রবেশ করুন।” মহর্ষি চ্যবন রূপার্থী হইয়া অবিলম্বে সলিল মধ্যে প্রবেশ করিলেন ও অশ্বিনীকুমারযুগলও সেই সরোবরে প্রবিষ্ট হইলেন।
“অনন্তর মুহুর্ত্তকালমধ্যে তাঁহারা সকলেই সরোবর হইতে গাত্ৰোস্থান করিলেন। তিনজনই দিব্যাকৃতি, যুবা, তুল্য-বেশভূষায় বিভূষিত এবং সাতিশয় প্রীতিবৰ্দ্ধন। তাঁহারা মিলিত হইয়া কহিলেন, “বারবর্ণিনি! আমাদিগের মধ্যে তোমার যাঁহাকে অভিরুচি হয়, পতিত্বে বরণ কর।” সুকন্যা সকলকেই একাকৃতি নিরীক্ষণ করিয়া সবিশেষ পৰ্য্যালোচনাপূর্ব্বক আপন পতিকে বরণ করিলেন। মহর্ষি চ্যবন অভিলষিত যৌবন, মনোহর রূপলাবণ্য ও প্রিয়তমা ভাৰ্য্যালাভে পরামগ্ৰীত হইয়া দেবযুগলকে কহিলেন, “ভগবন! আমি বৃদ্ধ ও জরাগ্রস্ত ছিলাম; আপনারা আমাকে রূপযৌবনসম্পন্ন করিলেন এবং আমি আপন ভাৰ্য্যাকেও প্রাপ্ত হইলাম; অতএব সত্য কহিতেছি যে, প্ৰীতি-প্ৰফুল্লচিত্তে দেবরাজ সমক্ষে আপনাদিগকে সোমপীথী করিব।” ইহা শ্রবণ করিয়া অশ্বিনীকুমারযুগল প্রীতমনে সুরধামে গমন করিলেন; মহর্ষি চ্যবন এবং সুকন্যা দেবতার ন্যায় সেই অরণ্যে সুখ-স্বচ্ছন্দে বিহার করিতে লাগিলেন।