১২১তম অধ্যায়
যযাতির পুনঃ স্বৰ্গপ্রাপ্তি
“মহারাজ যযাতি সেই সমুদয় মহাত্মাগণকর্ত্তৃক প্রত্যভিজ্ঞাত [বিশ্বস্তভাব বিদিত] হইবামাত্ৰ দিব্য-বসন পরিধান, দিব্য-আভরণ ধারণ, দিব্যগন্ধমাল্য গ্রহণ ও দিব্যস্থানে উপবেশনপূর্ব্বক পৃথিবী পরিত্যাগ করিয়া উৰ্দ্ধে সমুত্থিত হইতে লাগিলেন। তখন লোকমধ্যে দানপতি [দানবীর-অত্যন্ত দাতা] নামে বিখ্যাত মহাযশাঃ বসুমনা সর্ব্বাগ্রে উচ্চস্বরে যযাতিকে কহিলেন, “হে মহাত্মন! আমি সর্ব্ববর্ণের অনিন্দনীয়তা [প্রশস্ততা-প্ৰশংসনীয়তা]-নিবন্ধন যে ফল প্রাপ্ত হইয়াছি এবং দানশীলতা, ক্ষমাশীলতা ও অগ্ন্যাধান [যজ্ঞশীলতা]-নিবন্ধন যে ফললাভ করিয়াছি, তৎসমুদয় আপনাকে প্ৰদান করিলাম, আপনি গ্ৰহণ করুন।” তৎপরে ক্ষত্ৰিয়শ্রেষ্ঠ প্ৰতর্দন নহুষতনয়কে কহিলেন, “হে মহারাজ! আমি ধর্ম্মভিনিবেশ [ধর্মে একান্ত নিষ্ঠা], যুদ্ধপরায়ণতা ও বীরশব্দলাভ[বীরখ্যাতি]নিবন্ধন যেসকল ফললাভ করিয়াছি, তাহা আপনাকে প্ৰদান করিলাম, আপনি গ্রহণ করুন।” অনন্তর উশীনিরানন্দন শিবি মধুরবচনে কহিলেন, “হে নহুষতনয়, আমি স্ত্রী, বালক ও শ্যালকাদির সমক্ষে [*স্ত্রী, বালক ও শ্যালক অনেকেরই মমতার পাত্র; তাঁহাদের তুষ্টির জন্য মিথ্যা অনেকেই বলিতে বাধ্য হয়। যুদ্ধে জয়াদি স্বার্থের জন্য মিথ্যা অনেকেই কহে। কাহারও মৃত্যুকালে “এ ব্যক্তি আমার এতটাকা ধারেআমাকে অমুক দ্রব্যদানে প্রতিশ্রুত”-কোন কোন অতিঘূর্ণিত স্বার্থন্ধকে ঐরূপ বলিতে শুনা যায়। বিপৎকালে বা বিপদে বিশেষভাবে আবদ্ধ হওয়ার আশঙ্কামুক্তির জন্য মিথ্যা উক্তি অনেকের মুখে শুনা যায়; বসুমনার এ সব দোষ ছিল না।] যুদ্ধে [*], লোকের মৃত্যুসময়ে [*], আপৎকালে এবং ব্যসনসময়ে [*] মিথ্যাবাক্যপ্রয়োগ করি নাই। আমার সেই সত্যপ্রভাবে আপনি স্বৰ্গে গমন করুন। আমি বরং রাজ্য, প্ৰাণ, কর্ম্ম ও সুখসম্ভোগ পরিত্যাগ করিতে পারি, তথাপি সত্য পরিত্যাগ করিতে পারি না; আমার সেই সত্যপ্ৰভাবে আপনি স্বৰ্গে গমন করুন; আমি যে সত্যপ্ৰভাবে ধর্ম্ম, অগ্নি ও পুরন্দরকে পরিতুষ্ট করিয়াছি, আপনি আমার সেই সত্যপ্রভাবে স্বৰ্গে গমন করুন।” অনন্তর রাজর্ষি অষ্টক বহুশত যজ্ঞানুষ্ঠাতা নহুষনন্দনকে কহিলেন, “হে রাজন! আমি শত শত পুণ্ডরীক, গোসব ও বাজপেয়-যজ্ঞানুষ্ঠান করিয়াছি; আপনি তৎসমুদয়ের ফললাভ করুন। আমি সমুদয় রত্ন, ধন ও পরিচ্ছদ যজ্ঞে সমৰ্পণ করিয়াছি, আপনি সেই ফলে স্বৰ্গে গমন করুন।”
“এইরূপে মহারাজ যযাতি স্বীয় দৌহিত্র চতুষ্টয়ের বাক্যানুসারে পৃথিবী পরিত্যাগপূর্ব্বক ক্ৰমে ক্ৰমে স্বৰ্গে গমন করিতে লাগিলেন। তখন তাহার দৌহিত্ৰগণ সকলে সমবেত হইয়া কহিলেন, “মহারাজ! আমরা আপনার দৌহিত্র; আমরা সর্ব্বধর্মোপেত হইয়া বর্ত্তমান আছি; আপনি স্বৰ্গে গমন করুন।” এইরূপে সেই রাজবংশসম্ভূত কুলবৰ্দ্ধন ভূপতিচতুষ্টয় স্ব স্ব যজ্ঞদানাদিজনিত সুকৃতপ্রভাবে স্বৰ্গচ্যুত স্বীয় মাতামহ মহাপ্রাজ্ঞ যযাতিকে পুনরায় স্বৰ্গে সংস্থাপিত করিলেন।