দ্বাদশাধিকশততম অধ্যায়
কুন্তির স্বয়ংবর
বৈশম্পয়ান কহিলেন, একদিকে কুন্তী কুন্তিভোজালয়ে থাকিয়া ক্রমে ক্রমে নবযৌবনাবস্থায় আরূঢ়া হইলেন। লোকমুখে তাঁহার আসামান্য রূপলাবণ্যের বিষয় অবগত হইয়া নানাদিগ দেশস্থ ভূপতিগণ পাণিগ্রহণাভিলাষে দূত প্ররণ করিতে লাগিলেন। কুন্তিভোজ অনেকেকই কন্যার পরিণয়াকাঙ্কী দেখিয়া, চিন্তা করিতে লাগিলেন, ”কি করি, কাহাকে কন্যা প্রদান করা উচিত?” পরিশেষে স্বয়ংবরানুষ্ঠনেই কর্ত্তব্য স্থির করিয়া সকল রাজগণকে স্বভবনে আসিতে নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইলেন। তাঁহারা সকলে মনোহর বেশভুষা ধারণ করিয়া নিরূপিত দিবসে স্বয়ংবরস্থলে উপস্থিত হইলেন। মনস্বিনী কুন্তী পিতার আদেশক্রমে পতি মনোনিত করিতে হস্তে পুষ্পমালা লইয়া রঙ্গমধ্যে প্রবেশ করিলেন এবং দেখিলেন, তথায় ভরতবংশাবতংস মহাবলপরাক্রান্ত ভূপতিশ্রেষ্ঠ পাণ্ডু সূর্য্যসদৃশ অনুপম স্বীয় শরীরপ্রভা দ্বারা সমস্ত ভূপতিগণের প্রভা আচ্ছাদন করিয়া রহিয়াছেন। তাঁহার প্রতাপ সিংহসম, বক্ষদেশ কপাটোপম এবং নয়নযুগল বিকচমলসদৃশ; দেখিলে স্পষ্ট বোধ হয়,যেন পুরন্দর স্বপুর পরিত্যগ করিয়া কুন্তীকামনায় সভায় উপস্থিত হইয়াছেন।
কুন্তী সহ পাণ্ডুর বিবাহ
বরবর্ণিনী কুন্তিভোজ-দুহিতা নরপতি সেই মোহনমূর্ত্তি নিরীক্ষণে স্মরশরে জর্জ্জরিতকলেরব হইয়া লজ্জানম্রমুখে তাঁহার কণ্ঠদেশে বরমাল্য প্রদান করিলেন। কুন্তী পাণ্ডুনরবরে বরত্বে বরণ করিলেন দেখিয়া অন্যান্য ভূপতিগণ নিজ নিজ বাহনে আরোহণপূর্ব্বক স্ব স্ব দেশে প্রস্থান করিলেন। কুন্তিভোজ শুভলগ্নে পাণ্ডু নৃপতির সহিত কন্যার বিবাহবিধি নির্ব্বাহ করিলেন। বরকন্যা একত্র সঙ্গত হইয়া শচীসখ সহস্রাক্ষের ন্যায় শোভা পাইতে লাগিলেন।
বেদবিধানানুসারে উদ্বাহক্রিয়া সমাধা হইল। কুন্তিভোজ নানা ধনসম্পত্তি যৌতুক দিয়া পাণ্ডুকে কন্যার সহিত স্বনগরে পাঠাইয়া দিলেন। কুরুকুলপ্রদীপ মহীপতি পাণ্ডু ধ্বজপতাকাশালিনী মহতী পতাকিনী [সৈন্যশ্রনী] সমভিব্যাহারে মহর্ষিগণ ও দ্বিজগণের আশীর্ব্বচন শ্রবণ করিতে করিতে স্বপুরে প্রবেশ করিলেন এবং রাজভবনে প্রণয়িনী সহধর্ম্মিণী কুন্তীকে লইয়া পরমসুখে কালযাপন করিতে লাগিলেন।