দশাধিকশততম অধ্যায়
ধৃতরাষ্ট্র-পাণ্ডুর বিবাহ মন্ত্রণা
একদা ভীষ্ম বিদুরকে সন্বোধন করিয়া কহিলেন, ”বৎস! ভূমণ্ডলস্থ সমস্ত নরেন্দ্রকুল অপেক্ষা অস্মাৎকুল সমধিক গুণভূয়িষ্ঠ [গুণবহুল−বহুগুণযুক্ত] ও প্রসিদ্ধ। ইহা পূর্ব্বতন সুধার্ম্মিক নরেন্দ্রগণ কর্ত্তৃক পরিরক্ষিত হইয়া আসিতেছে। অধুনা ইহার উচ্ছেদ নিতান্ত দুর্ব্বিষহ বিবেচনা করিয়া ভগবতী সত্যবতী, মহাত্মা দ্বৈপায়ন এবং আমি, এই তিন জনে মিলিত হইয়া যুক্তিযুক্ত ও শাস্ত্রসিদ্ধ উপায়োদ্ভাবনপূর্ব্বক তোমাদিগকে উৎপাদন করাইয়া পুনর্ব্বার ইহাকে প্রতিষ্ঠিত করিলাম, অতএব এক্ষণে যাহাতে আমাদিগের বংশের ক্রমশঃ উন্নতি হয়, তাহার উপায়-বিধান করা আমাদিগের সর্ব্বতোভাবে কর্ত্তব্য, সন্দেহ নাই। শুনিয়াছি, মদ্রেশ্বর ও সুবলের পরমসুন্দরী এক এক কুমারী আছে, তাহারা আমাদিগের কুলের অনরূপা; অতএব সেই কুলীনা কামিনীদ্বয়ের সহিত ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর সম্বন্ধ স্থির করাই উচিত। এই কুলের স্থায়িতার নিমিত্ত আমি তাহাদিগকে বরণ করিতে অভিলাষ করি, তোমার অভিপ্রায় কি? বিদুর কহিলেন, ”মহাশয়! আপনি আমাদিগের পিতৃতুল্য ও পরমগুরু; অতএব যাহা উচিত হয়, স্বয়ং বিচারপূর্ব্বক অনুষ্ঠান করুন।”
গান্ধারীসহ ধৃতরাষ্ট্রের বিবাহ
অনন্তর কুরুপিতামহ ভীষ্ম বিপ্রগণ-প্রমুখাৎ শ্রবণ করিলেন, সুবলাত্মজা গান্ধারী ভগবান্ ভবানীপতিকে আরাধনা করিয়া বরলাভ করিয়াছেন যে, তিনি একশো পুৎত্রের জননী হইবেন। সেই কন্যার প্রার্থনায় গান্ধাররাজের নিকট দূত প্রেরণ করিলেন; গান্ধাররাজ সুবল প্রথমতঃ ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ বলিয়া কিয়ৎক্ষণ চিন্তা করিলেন, পরিশেষে সবিশেষ পর্য্যালোচনা করিয়া সুবিখ্যাত কুল, মহতী খ্যাতি ও সদ্বৃত্ত জামাতার অভিলাষে তাঁহাকেই কন্যাদান করিতে কৃতনিশ্চয় হইলেন। যখন গান্ধারী শ্রবণ করিলেন যে, পিতামাতা তাঁহাকে নয়নহীন পাত্রে সম্প্রদান করিতে অভিলাষী হইয়াছেন, তখনই সেই পতিপরায়ণা সান্দ্র [ঘন,গাঢ়−একাধিক পরদাবিশিষ্ট] বস্ত্র দ্বারা স্বীয় নেত্রযুগল বন্ধন করিলেন এবং মনে মনে সঙ্কল্প করিলেন যে, পতি অন্ধ বলিয়া তাঁহাকে কদাপি অশ্রদ্ধা বা অসুয়া করিব না। গান্ধাররাজতনয় পিতৃ-আজ্ঞায় অভিনব-যৌবনবতী ও লক্ষীযুক্তা ভগিনী লইয়া কৌরবসমীপে উপনীত হইলেন। তদন্তর ভীষ্মের অনুমতিক্রমে তাঁহাকে ধৃতরাষ্ট্র-হস্তে সম্প্রদান করিলেন এবং তিনি ভীষ্ম কর্তৃক যথোচিত পূজিত হইয়া স্বনগরে প্রত্যাগমন করিলেন। বরারোহা [উত্তমা-সুশীলা] গান্ধারী সদাচর, সদ্ব্যবহার ও সুশীলতা প্রদর্শন দ্বারা সমস্ত কৌরবগণের পরম সন্তোষ জন্মাইতে লাগিলেন। তিনি গুরুশুশ্রূষা ও সকলকে প্রিয়-সম্ভাষন করিতেন এবং কদাপি কাহারও অকীর্ত্তি বা নিন্দা করিতেন না।