অষ্টাধিকশততম অধ্যায়
মাণ্ডব্যশাপে যমের বিদুররূপে জন্ম
বৈশম্পায়ন কহিলেন, তদন্তর মুনিবর সমাগত তপোধনদিগকে কহিলেন, ”আমি কাহার উপর দোষারোপ করিব? কেহই আমার নিকট অপরাধ করা নাই।” ইহা শুনিয়া মুনিগণ প্রস্থান করিলেন। মহামুনি মাণ্ডব্য তদবস্থায় কালযাপন করিতে লাগিলেন। এইরূপ বহুকাল অতীত হইলে একদিবস নগরপালেরা মহর্ষিকে তদবস্থায় নিরীক্ষণ করিয়া রাজসমীপে সমস্ত বৃত্তান্ত নিবেদন করিল। রাজা নগরপালের মুখে সমুদয় শ্রবণ করিয়া মন্ত্রিগণের সহিত পরামর্শ স্থির করিয়া শূলস্থ ঋষিকে প্রসন্ন করিবার নিমিত্ত অশেষ প্রকার যত্ন করিতে লাগিলেন। তিনি অতি বিনীতভাবে কহিলেন, ”হে ব্রাহ্মণ্! আমি মোহান্ধতাপ্রযুক্ত যে গুরুতর দুষ্কর্ম্মের অনুষ্ঠান করিয়াছি, তন্নিমিত্ত এক্ষণে ক্ষমা প্রার্থনা করি; আপনি আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হইবেন না, প্রসন্ন হউন।” ভূপতির বিনয়ে মুনীন্দ্র প্রসন্ন হইলেন। পরে রাজা তাঁহাকে শূল হইতে অবতরণ করাইয়া শূল বহির্গত করিবার নিমিত্ত অনেক যত্ন করিলেন, কিন্তু কিছুতেই কৃতকার্য্য হইতে পারিলেন না। পরিশেষে শূলের মূলচ্ছেদ করিয়া দিলেন। ঋষি সেই অন্তর্গত শূল বহন করিয়া সর্ব্বত্র পর্য্যটন করিতে লাগিলেন এবং কঠোর তপস্যা দ্বারা অসুলভ লোক-সকল জয় করিলেন। তদবধি তিনি ভুমণ্ডলে অণীমাণ্ডব্য বলিয়া প্রথিত হইলেন। একদা তিনি যম সদনে গমনপূর্ব্বক সিংহাসনোপবিষ্ট ধর্ম্মরাজকে তিরস্কার করিয়া কহিলেন, ”হে ধর্ম্! আমি যে পাতকের ফলভোগ করিতেছি, ইহা কোন্ দুস্কর্ম্মের পরিণাম, শীঘ্র বল, আমি এই মুহুর্ত্তেই আমার তপোবল প্রকাশ করিতেছি।”
ধর্ম্ম কহিলেন, ”তপোধন! আপনি পতঙ্গের পুচ্ছদেশে তৃণ প্রবিষ্ট করিয়াছিলেন, সেই দুষ্কর্ম্মের প্রতিফল প্রাপ্ত হইয়াছেন।” অণীমাণ্ডব্য কহিলেন, ”ধর্ম্ম! তুমি আমার লঘু-পাপে গুরুদণ্ড বিধান করিয়াছ, এই নিমিত্ত তোমাকে মনুষ্য হইয়া শূদ্রযোনি প্রাপ্ত হইতে হইবে। আর আমি অদ্যবধি পাপপুণ্যের সীমা নির্দ্দিষ্ট করিয়া দিতেছি। চতুর্দশ বর্ষের অনধিক বয়ক্রমে কেহ পাপপুণ্যের ফলভাগী হইবে না, পঞ্চদশ বর্ষ অবধি কর্ম্মানুসারে ফললাভ হইবে।’ ধর্ম্মরাজ স্বীয় অপরাধে মহাত্মা অণীমাণ্ডব্য কর্ত্তৃক অভিশপ্ত হইয়া বিদুররূপে শূদ্রযোনিতে জন্মগ্রহণ করিলেন। তিনি ধর্ম্মার্থচিন্তায় কুশল, লোভশূন্য, জিতক্রোধ, বহুদর্শী, শমপর ও কৌরবগণের পরম হিতৈষী ছিলেন।