১০৩তম অধ্যায়
সাগর-লুক্কায়িত অসুরিনাশে বিষ্ণুমন্ত্রণা
‘হে মহাবাহো! চতুর্ব্বিধ প্ৰজা তোমারই প্ৰসাদে বৰ্দ্ধিত হইয়া হব্যকব্যদ্বারা দেবগণকে বর্দ্ধিত করিয়া থাকে। ভূলোক ও দ্যুলোক এই প্রকার পরস্পর সাহায্যলাভ করিয়া পরিবর্দ্ধিত হইতেছে ও তুমি তাহাদিগকে নিরুদ্বেগে প্রতিপালন করিতেছ, কিন্তু এক্ষণে সেই লোকসকল দারুণ বিপদে পতিত হইয়াছে। জানি না, কোন দুরাত্মারা রাত্রিকালে ব্রাহ্মণগণের প্রাণবধ করিয়া যায়। এইরূপে ব্রাহ্মণগণ উৎসন্ন হইলে পৃথিবীনাশ হইবে— পৃথিবী বিলোপপদবী-প্রাপ্ত হইলে সুরলোকেরও ক্ষয়াদশা উপস্থিত হইবে। হে জগৎপতে! সমুদয় লোক তোমারই করুণা বহন করিতেছে; তুমিই সেই সমুদয় লোক রক্ষা করিতেছ; অতএব তাহারা যাহাতে বিনাশপ্ৰাপ্ত না হয়, এরূপ উপায় স্থির করা নিতান্ত বিধেয় ।”
“বিষ্ণু কহিলেন, “হে দেবগণ! যে কারণে প্ৰজাক্ষয় হইতেছে, আমি তাহা অবগত হইয়াছি; এক্ষণে তোমরা নিশ্চিন্ত হইয়া উহা শ্ৰবণ করা। কালকেয়নামে বিখ্যাত দুৰ্দান্ত দৈত্যগণ বৃত্ৰাসুরের সহায়তায় দর্পিত হইয়া সমুদয় জগৎ আলোড়িত করিয়াছিল। অনন্তর ধীমান্য সহস্ৰলোচন তাহার প্রাণসংহার করিলে কালকেয়গণ জীবিত-প্রত্যাশায় অগাধ অর্ণবমধ্যে প্রবেশ করিল। তাহারা সেই দুৰ্গম স্থানে অবস্থান করিয়া ভুবনোৎসাদন [ত্ৰিলোকধ্বংস] নিমিত্ত প্রতি নিশায় ঋষিগণের প্রাণসংহার করে। তাহারা যতকাল পৰ্য্যন্ত তিমিনক্রসঙ্কুল স্রোতস্বতীপতিমধ্যে [সমুদ্র] অধিবাস করিবে, ততদিন তাহারা কোনক্রমেই বিনাশপ্ৰাপ্ত হইবে না, অতএব তোমরা সমুদ্র-শোষণের উপায় অবধারণ কর; তদ্ব্যতীত তাহাদিগকে বিনাশ করিবার আর উপায়ান্তর নাই। কিন্তু মহাতপাঃ অগস্ত্য ব্যতিরেকে অন্য কেহই সাগর-শোষণে সমর্থ হইবে না।”
“দেবগণ নারায়ণের বাক্য শ্রবণ করিয়া পিতামহের আজ্ঞা গ্রহণপূর্ব্বক অগস্ত্যাশ্রমে প্রস্থান করিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া অবলোকন করিলেন, মহাত্মা মৈত্ৰাবারুণি সুরগণপরিবৃত পিতামহের ন্যায় মুনিগণকর্ত্তৃক উপাস্যমান হইয়া বিরাজ করিতেছেন। এমত সময়ে দেবগণ তাঁহার সমীপে সমুপস্থিত হইয়া তাঁহার অনুষ্ঠিত কর্ম্মসকল উল্লেখপূর্ব্বক স্তব করিতে লাগিলেন, “হে ভগবান! পূর্ব্বকালে আপনি লোককণ্টক নহুষকে সুরৈশ্বৰ্য্য হইতে ভ্ৰংশিত করিয়া সকল লোককে পরিত্রাণ করিয়াছিলেন। বিন্ধ্যাচল ভাস্করের প্রতি জাতক্ৰোধ হইয়া সহসা প্রবৃদ্ধ হইয়াছিল, কিন্তু কেবল আপনার বাক্যানুসারে তদ্বিষয়ে নিরস্ত হইল। যৎকালে মৃত্যু সমুদয় জগৎ তিমিরাবৃত করিয়া প্ৰজাগণকে বিনাশ করিতে উদ্যত হইয়াছিল, তখন তাহারা আপনারই শরণাপন্ন হইয়া নিবৃত্তিলাভ করিয়াছিল। এক্ষণে আমরা ভয়ার্ত্ত হইয়া আপনার শরণাপন্ন হইয়াছি ও বরপ্রার্থনা করিতেছি, আপনি প্ৰসন্ন হইয়া আমাদিগকে অভিলষিত বর প্রদান করুন।’ ”