বৈশম্পায়ন কহিলেন, অনন্তর রাজা শান্তনু সেই পরমসুন্দরী কামিনীর পাণিগ্রহণ করিয়া তাঁহাকে আপন আলয়ে রাখিলেন। কিয়দ্দিন পরে মহিষী গর্ভবতী হইলেন। সেই গর্ভে রাজার এক পুৎত্র জন্মে, তাঁহার নাম চিত্রাঙ্গদ। তিনি অসাধারণ ধীশক্তিসম্পন্ন, মহাবলপরাক্রান্ত ও সর্ব্ববিষয়ে সর্ব্বোৎকৃষ্ট ছিলেন। অনন্তর বিচিত্রবীর্য্য নামে তাঁহার অপর একটি পুৎত্র জন্মিল। মহাবীর্য্য বিচিত্রবীর্য্য তরুণবয়স্ক না হইতেই রাজা মানবলীলা সংবরণ করিলেন। শান্তনুকে স্বর্গারোহণ করিলে ভীষ্ম সত্যবতীর মতানুসারে চিত্রাঙ্গদকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন। অমিতবিক্রম চিত্রাঙ্গদ স্বীয় বাহুবলে সমুদয় রাজ্যমণ্ডল পরাজয় করিয়াছিলেন। তিনি শৌর্য্যবীর্য্য কাহাকেও আপন সদৃশ জ্ঞান করিতেন না। চিত্রাঙ্গদ নামে এক প্রবলপরাক্রান্ত গন্ধর্ব্বরাজ ছিলেন। তিনি সৈন্যসামন্ত সমভিব্যাহারে সুরাসুরবিজয়ী চিত্রাঙ্গদকে আক্রমণ করিলেন। কুরুক্ষেত্রে সমরানল প্রজ্জলিত হইয়া উঠিল। সরস্বতী স্রোতস্বতীর তীরে ক্রমাগত তিন বৎসর তাঁহাদের উভয় পক্ষের ঘোরতর সংগ্রাম হইয়াছিল। অবিশ্রান্ত অস্ত্রবর্ষণে রণক্ষেত্র সমাকুল ও পরস্পর গাত্রবিমর্দ্দে [যোদ্ধৃজনের বাহুদ্বয় দ্বারা পরস্পর দেহসংঘর্ষে] তুমুল হইয় উঠিল। মায়াবী গন্ধর্ব্ব মায়াবলে চিত্রাঙ্গদের প্রাণসংহারপুর্ব্বক স্বর্গমার্গে প্রস্থান করিলেন। সেই অমিততেজাঃ নরেন্দ্র যুদ্ধে নিহত হইল ভীষ্ম তাঁহার সমুদয় প্রেতকার্য্যই সম্পাদন করাইলেন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক বিচিত্রবীর্য্যকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিলেন । বিচিত্রবীর্য্য পৈতৃক সিংহাসনে অধিরূঢ় হইয়া ধর্ম্মশাস্ত্র-কুশল ভীষ্মের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শনপুর্ব্বক তাঁহার আদেশানুসারে রাজকার্য্য পর্য্যালোচনা করিতে লাগিলেন; মহামতি ভীষ্মও তাঁহাকে পরম-যত্নে প্রতিপালন করিতে ত্রুটি করিতেন না।