৯৮তম অধ্যায়
ধনগ্ৰহণাচ্ছলে অগস্ত্যের ইল্বলসমীপে গমন
লোমশ কহিলেন, “হে মহারাজ! অনন্তর মহর্ষি অগস্ত্য ধন আহরণ করিবার নিমিত্ত নৃপোত্তম শ্রুতর্ব্বার নিকট গমন করিলেন। নরপতি শ্রুতর্ব্বা ভগবান কুম্ভযোনি [অগস্ত্য-যাঁহার কলসমধ্যে জন্ম] সমুপস্থিত হইয়াছেন জানিয়া অমাত্য-সমভিব্যাহারে তাহার নিকট গমনপূর্ব্বক পরমসাদরে সৎকার করিয়া তাঁহাকে স্বভবনে আনয়ন করিলেন এবং যথাবিধি অর্ঘ্যপ্ৰদানপুরঃসর কৃতাঞ্জলিপুটে প্ৰযতচিত্তে তাঁহার আগমন-প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করিলেন।
“অগস্ত্য কহিলেন, “হে নরনাথ! আমি ধনলাভেচ্ছায় আপনার নিকট আগমন করিয়াছি, অতএব অন্যের হিংসা বা ক্ষতি না করিয়া আমাকে যথাশক্তি ধন প্ৰদান করুন।”
“রাজা শ্রুতর্ব্বা অগস্ত্যকে আপনার সমুদয় আয় ও ব্যয়ের বিষয় সবিশেষ জ্ঞাপন করিয়া কহিলেন, “হে ব্ৰহ্মন! আপনি যে-কিছু ধন ইচ্ছা করেন, ইহা হইতে গ্রহণ করুন।” মহর্ষি অগস্ত্য তৎসমুদয় শ্রবণে আয়-ব্যয় সমান অবলোকন করিয়া বিবেচনা করিলেন যে, ইহার নিকট হইতে ধনগ্ৰহণ করিলে অবশ্যই প্রাণীগণের ক্লেশ হইবে। তখন তিনি শ্রুতর্ব্বারাজকে সমভিব্যাহারে লইয়া ব্ৰধ্নশ্ব মহীপতির নিকট গমন করিলেন। মহারাজ ব্ৰধ্নশ্ব তাঁহাদিগকে সমাগত দেখিয়া সাতিশয় সমাদরসহকারে সৎকার করিয়া যথাযোগ্য পাদ্য ও অর্ঘ্য প্ৰদানপূর্ব্বক আগমন-প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করিলেন। অগস্ত্য কহিলেন, “মহারাজ! আমরা ধনলাভেচ্ছায় আপনার সমীপে সমুপস্থিত হইয়াছি, অতএব আপনি অন্যের হিংসা বা হানি না করিয়া আমাদিগকে যথাশক্তি অর্থ প্ৰদান করুন।”
তখন মহারাজ ব্ৰধ্নশ্ব তাঁহাদিগকে আপনার সমুদয় আয়-ব্যয়ের বিষয় সবিশেষ বিজ্ঞাপনপূর্ব্বক কহিলেন, “আমার এই সমুদয় ধন হইতে আপনাদের যাহা ইচ্ছা হয়, গ্ৰহণ করুন।” ভগবান অগস্ত্য তৎপরে ব্ৰধ্নশ্বের আয় ও ব্যয় সমান জানিয়া বিবেচনা করিলেন যে, ইহার নিকট ধনগ্রহণ করিলে অবশ্যই প্রাণীগণের ক্লেশ হইবে।
“অনন্তর অগস্ত্য, শ্রুতির্ব্ব ও ব্রাধ্নশ্ব এই তিনজনে একত্ৰ হইয়া পুরুকুৎসনন্দন ত্ৰসদস্যুর নিকট গমন করিলেন। ত্ৰসদস্যু তাঁহাদিগকে সমাগত জানিয়া তাঁহাদের সমীপে গমনপূর্ব্বক পরমসমাদরে স্বীয় সদনে আনয়ন করিয়া যথাবিধি পূজাপূর্ব্বক আগমন-প্ৰয়োজন জিজ্ঞাসা করিলেন।
“অগস্ত্য কহিলেন, “হে মহারাজ! আমরা অর্থলাভাকাঙক্ষায় আপনার সমীপে আগমন করিয়াছি; অতএব আপনি অন্যের হিংসা বা হানি না করিয়া আমাদিগকে যথাশক্তি অর্থ প্ৰদান করুন।”
“তখন মহারাজ ত্ৰসদস্যু আপনার সমুদয় আয়-ব্যয় তাহাদিগকে বিজ্ঞাপন করিয়া কহিলেন, “মহাশয়েরা আমার এই সমস্ত ধন হইতে যাহা ইচ্ছা হয়, গ্ৰহণ করুন।” ভগবান অগস্ত্য তৎশ্রবণে তাঁহার আয়-ব্যয় সমান সন্দর্শন করিয়া বিবেচনা করিলেন যে, ইহার নিকট অর্থগ্রহণ করিলে নিশ্চয়ই প্রাণীগণের ক্লেশ হইবে।
“তখন সেই নৃপতিগণ পরস্পর নিরীক্ষণপূর্ব্বক মহামুনি অগস্ত্যকে কহিলেন, “হে ব্ৰহ্মন! দানবেন্দ্ৰ ইল্বল প্রভূত ধনশালী; আমরা তাঁহার নিকট গমনপূর্ব্বক অর্থপ্রার্থনা করিব।” এইরূপে তাঁহারা ইল্বলের নিকট ধন-প্রার্থনা করাই শ্রেয়ঃ বোধ করিয়া সকলে একত্র হইয়া গমন করিলেন।