হেথায় কৌরবপতি চিন্তাকুল হয়ে।
নিত্য অনুতাপ করে মন্ত্রিগণ লয়ে।।
রাজা বলে, কহ মোরে যত মন্ত্রিগণ।
জয়দ্রথ নৃপতির বিলম্ব কারণ।।
কেহ বলে, জয়দ্রথ গেল বহুদিন।
কর্ম্মে কি হইবে শক্য বল বুদ্ধি-হীন।।
কেহ বলে, পাণ্ডব দেখিল জয়দ্রথে।
নিশ্চয় ত্যজিল প্রাণ ভীম-বজ্র-হাতে।।
কেহ বলে, কার্য্যসিদ্ধি করিলে নারিল।
লজ্জায় না দিল দেখা নিজ রাজ্যে গেল।।
এইরূপে চিন্তাকুল আছে নরপতি।
হেনকালে জয়দ্রথ আসিল দুর্ম্মতি।।
নিরখিয়া ভূপতির আনন্দ প্রচুর।
সভাশুদ্ধ নরপতি গেল কত দূর।।
বহু কাল পরে পেয়ে বন্ধু দরশন।
পরস্পর হর্ষভরে করে আলিঙ্গন।।
তবে দুর্য্যোদন রাজা আনন্দিত মনে।
হাতে ধরি বসাইল নিজ সিংহাসনে।।
কৌতুকে করেন দোঁহে কথোপকথন।
রাজা বলে, কহ শুনি বিলম্ব কারণ।।
নিবেদিল জয়দ্রথ দুঃখ আপনার।
পূর্ব্বাপর আদ্যোপান্ত যত সমাচার।।
শুনি জয়দ্রথ মুখে সব বিবরণ।
হরিষ বিষাদ মনে রহে দুর্য্যোধন।।
দুর্য্যোধন বলে, আমি চিন্তা করি মিছা।
হইবে অবশ্য যাহা ঈশ্বরের ইচ্ছা।।
অকারণে চিন্তা করি নাহি প্রয়োজন।
বিধির নিয়োগ হয় যখন যেমন।।
সভা ভাঙ্গি নিজস্থানে গেল সর্ব্বজন।
দুঃখ মনে নিজগৃহে রহে দুর্য্যোধন।।
মহাভারতের কথা মহাকাব্য ভাণ্ড।
শ্রীদ্বৈপায়ন রচিত অষ্টাদশ কাণ্ড।।