জন্মাবধি দুঃখ মোর কি কহিব আর।
তবু দুঃখ দেও দয়া না হয় তোমার।।
ক্লেশে অবসন্ন তনু শুন গো তারিণী।
দয়া কর দয়াময়ী পতিতোদ্ধারিণী।।
কত দুঃখ দিলে মাতা ভেবে দেখ মনে।
রাজ্য বিনাশিয়া শেষে আনিলে কাননে।।
তথাপি নাহিক ক্ষমা অরণ্যে আনিলে।
রাবণের দ্বারায় শেষে জানকী হরালে।।
কত কষ্টে কটক সঞ্চয় কপিগণে।
শিলা বৃক্ষে সেতু বান্ধি সমুদ্র-তরণে।।
সীতার উদ্ধারে তারা হইনু তৎপর।
রাক্ষস নাশিনু শেষ আছে লঙ্কেশ্বর।।
কষ্টে রণ করিলাম, হরের অঙ্গনা।
তথাপি আপনি কালী করিছ বঞ্চনা।।
করিলাম অর্চ্চনা মা অকাল-বোধনে।
তবু কৃপা না হইল মোর আরাধনে।।
শেষে শ্যামা নীলপদ্মে পূজিব চরণ।
শত অষ্ট সঙ্কল্পেতে করিনু রচন।।
তার মধ্যে কৃপণতা করিলে মোহনী।
হরিলে গো হর-রাণী সঙ্কল্প-নলিনী।।
আমি দীন হীন ক্ষীণ অতি অভাজন।
হের মা নয়ন-কোণে মানস পূরণ।।
নীলপদ্ম দেখাইয়া পূর্ণ কর ফল।
না সহে যাতনা আর, জীবন বিকল।।
এইরূপে রামচন্দ্র করেন বিনয়।
তথাপি তারার তাহে সাক্ষাৎ না হয়।।
কান্দিয়া শ্রীরঘুনাথ হইলা অস্থির।
বক্ষ মুখ বহিয়া পড়িছে অশ্রু-নীর।।
লক্ষ্মণ কান্দেন আর বীর হনুমান।
সুগ্রীব সুষেণ বিভীষণ জাম্ববান।।
শ্রীরাম কহেন সবে কিবা দেখ আর।
বুঝিনু নিশ্চয় সীতা না হৈল উদ্ধার।।
যাহ মিতা সুগ্রীব স্বগণে লয়ে যাও।
মিথ্যা আর কেন কান্দ মিছে মুখ চাও।।
বিভীষণে রাজ্য দিব অযোধ্যা ভুবনে।
রাখিব যতনে তারে সত্যের পালনে।।
ঝাঁপ দিব জলে আমি সমুদ্র ভিতরে।
এত বলি কান্দে রাম দুঃখিত অন্তরে।।
আকুল দেখিয়া রামে সকলে বুঝায়।
কৃত্তিবাস বিরচিল মধুর ভাষায়।।