৯১তম অধ্যায়
পাণ্ডবসমীপে লোমশ ঋষির আগমন-অর্জ্জুনবার্ত্তাকথন
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে জনমেজয়! মহাত্মা ধৌম্য ধর্ম্মরাজের নিকট এইরূপে তীৰ্থসমুদয় কীর্ত্তন করিতেছেন, এমন সময়ে, তেজোরাশিসদৃশ লোমশ ঋষি তথায় আসিয়া উপনীত হইলেন। যেমন সুরপুরে সুরগণ সুরনাথের উপাসনা করেন, তদ্রূপ সগণ পাণ্ডব ও ব্রাহ্মণ-সকল সেই তপোধনের আরাধনা করিতে লাগিলেন। রাজা যুধিষ্ঠির তাহাকে সমুচিত সম্মানসহকারে আগমন-করণ ও পৰ্যটন-প্রয়োজন জিজ্ঞাসা করিলেন।
মহানুভব লোমশ কৌন্তেয়ের জিজ্ঞাসায় প্রীত হইয়া যেন তাঁহাদিগের শোকাপনোদনের নিমিত্তই মধুরবচনে কহিতে লাগিলেন, “হে কৌন্তেয়! আমি যদৃচ্ছাক্রমে পৰ্য্যটন করিতে করিতে ইন্দ্ৰালয়ে গমন করিয়াছিলাম। তথায় আপনার ভ্রাতা মহাবীর সব্যসাচীকে শচীনাথের অৰ্দ্ধাসনে সমাসীন দেখিয়া বিস্ময়াপন্ন হইলাম। অনন্তর দেবরাজ আমাকে আপনাদিগের সমীপে আগমন করিতে আদেশ করিলেন। আমি দেবরাজ ও মহাত্মা ধনঞ্জয়ের বাক্যানুসারে আপনাদিগকে প্রিয়সংবাদ প্রদান করিবার নিমিত্ত আগমন করিয়াছি; এক্ষণে আপনার দ্রুপদনন্দিনীর সহিত একত্র হইয়া তাহা শ্রবণ করুন। মহাবাহু অর্জ্জুন মহাদেবের নিকট আপনার অভিলষিত অপ্রতিম আয়ুধলাভ করিয়াছেন। যে ব্রহ্মশির অস্ত্ৰ অমৃত হইতে উত্থিত হইয়া তপোবলে দেবদেব মহাদেবের হস্তগত হইয়াছিল, ধনঞ্জয় সেই অস্ত্ৰলাভ করিয়া মঙ্গলাচরণপূর্ব্বক প্রয়োগ ও সংহারের মন্ত্র এবং প্ৰায়শ্চিত্ত [যুদ্ধে নিম্নপরাধনাশের পাপক্ষালন উপায়] অধ্যয়ন করিয়াছেন। আর তিনি যম, কুবের, বরুণ ও ইন্দ্ৰ হইতে বজ্র প্রভৃতি অন্যান্য বিবিধ দিব্য-আয়ুধ এবং বিশ্বাবসুতনয়ের সমীপে রীতিমত সাম ও নৃত্য-গীতবাদ্য প্রভৃতি বিদ্যালাভ করিয়াছেন। আপনার তৃতীয় ভ্রাতা এইরূপে আয়ুধ ও গান্ধর্ব্ববিদ্যায় বিশারদ হইয়া অতিসুখে সুররাজবাসে অধিবাস করিতেছেন।
“সুরনাথ আমাকে যে-সকল সন্দেশ প্রদানপূর্ব্বক আপনার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন, এক্ষণে কহিতেছি, তাহা শ্রবণ করুন। তিনি আমাকে কহিলেন যে, “হে দ্বিজোত্তম! আপনি অবশ্যই মনুষ্যলোকে গমন করিবেন এবং আমার অনুরোধে রাজা যুধিষ্ঠিরকে কহিবেন যে, আপনার ভ্রাতা কৃতাস্ত্র হইয়াছেন। এক্ষণে সুরগণের অসাধ্য এক মহৎ কাৰ্য্য উপস্থিত হইয়াছে; তিনি সেই কাৰ্য্যসম্পাদন করিয়া অনতিবিলম্বে এ স্থানে আগমন করিবেন। আপনি ভ্রাতৃগণের সহিত তপানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হউন; তপস্যাই পরমধর্ম্ম, তপশ্চৰ্য্যা ব্যতীত রাজ্যলাভের আর উপায়াস্তব নাই! মহেশ্বর সূতসদৃশ, সত্যসন্ধ, সূৰ্য্যনন্দন কর্ণ যে প্রকার উৎসাহশালী, মহাবীর, মহাযুদ্ধবিশারদ ও মহাধনুৰ্দ্ধার, আমি তাহা অবগত আছি এবং পার্থও যেরূপ পুরুষকারসম্পন্ন, তাহাও আমার অবিদিত নাই। ইহাতে বোধ হইতেছে, কৰ্ণ কদাচ পার্থের সমর-নৈপুণ্যের ষোড়শ ভাগের এক ভাগেরও যোগ্য নহে; অতএব আপনি মনে মনে কর্ণ হইতে অনিষ্টাশঙ্কা করিয়া যেরূপ ভীত হইয়াছেন, ধনঞ্জয় স্বৰ্গ হইতে আপনার নিকট উপস্থিত হইলে তাহা অবশ্যই অপসারিত হইবে। আপনি যে তীর্থযাত্রার সঙ্কল্প করিয়াছেন, মহর্ষি লোমশ সেই তীর্থের বৃত্তান্ত ও তীর্থফল বর্ণনা করিবেন, তাহাতে শ্রদ্ধা-প্ৰদৰ্শন করিতে ত্রুটি করিবেন না।”