শার্দ্দূল বলিছে রাজা কর অবধান।
রামের বিক্রম কথা শুন বিদ্যমান।।
খর আর দূষণ ত্রিশিয়া তিন জন।
চতুর্দ্দশ সহস্র রাক্ষসের মিলন।।
একে একে সংহারিলা এক রঘুনাথ।
কেমনে দাঁড়াবে রণে তাঁহার সাক্ষাৎ।।
দেখিনু শুনিনু যে কহিতে ভয় করি।
বুঝিয়া করহ কার্য্য লঙ্কা-অধিকারী।।
শুক আর সারণ কহিল তব হিত।
অপমান করিলে তাদের যথোচিত।।
আপনি সুবুদ্ধি রাজা, বিচারে পণ্ডিত।
বুঝিয়া করহ কার্য্য লঙ্কা-অধিকারী।।
শুক আর সারণ কহিল তব হিত।
অপমান করিলে তাদের যথোচিত।।
আপনি সুবুদ্ধি রাজা, বিচারে পণ্ডিত।
বুঝিয়া করহ কর্ম্ম যে হয় উচিত।।
শার্দ্দূলের কথাতে রাবণ রাজা হাসে।
রাজার প্রসাদ দেয় যত মনে আসে।।
বলয় কঙ্কণ দিল মাণিক রতন।
পঞ্চ শব্দ বাদ্য দিল রাজার বাজন।।
বিচিত্র নির্ম্মাণ দিল হার ও কেয়ূর।
নানা রত্ন মণি দিল চরণে নূপুর।।
চরের বচন যেই হইল অবসান।
অন্তরে হইল চিন্তা উড়িল পরাণ।।
দশানন পাত্র মিত্রে দিলেক মেলানি।
বিদ্যুৎজিহ্ব নিশাচরে ডাকিল তখনি।।
তোরে বলি বিদ্যুৎজিহ্ব মায়ার সাগর।
তুমি ত অলঙ্ঘ্য পাত্র লঙ্কার ভিতর।।
মৈথিলীকে আনিলাম বড় সুখ-আশে।
অদ্যাপি না হয় সুখ হইবে কি শেষে।।
এতদিনে সীতা না হইল অনুগতা।
নিকটে আগত স্বামী শুনি হরষিতা।।
পাত্রকার্য্য করি মোর কুলাও আরতি।
রামের ধনুক মুণ্ড করহ সম্প্রতি।।
নিদ্রায় বানরগণ গড়াগড়ি যায়।
মুণ্ডে মুণ্ডে ঠেকাঠেকি মূর্চ্ছিতের প্রায়।।
এই সব বার্ত্তা আমি শুনি চরমুখে।
রাত্রিযোগে গেলাম যে কেহ নাহি দেখে।।
বানর উপরে আমি করি হানাহানি।
বাণেতে কাটিয়া করিলাম দুইখানি।।
বানরের মধ্যে রাম হৈল আগুয়ান।
খড়্গাঘাতে মুণ্ড কাটি করি দুইখান।।
পড়িল তোমার রাম, লক্ষ্মণ কাতর।
দেশে গেল লইয়া সে সকল বানর।।
বানরের মধ্যে এক সুগ্রীব প্রধান।
প্রহারে জর্জ্জর অতি আছে মাত্র প্রাণ।।
মহেন্দ্র দেবেন্দ্র ছিল কপি এক জোড়া।
কাটিলাম দুই পা তাহারা দোঁহে খোঁড়া।।
বানরের মধ্যে যার করিস্ বাখান।
হাত পা কাটিলাম পড়িল হনুমান।।
এইমত করিলাম বানরের দণ্ড।
এই দেখ জানকী রামের কাটামুণ্ড।।
কোথা গেলি বিদ্যুৎজিহ্ব নাম নিশাচর।
জানকীর সম্মুখে রামের মুণ্ড ধর।।
দেখিয়া রামের মুখ জানকী দুঃখিতা।
বিলাপ করেন বহু ধরণী পতিতা।।
আমার পোহাল প্রভু আজিকার রাতি।
অভাগিনী হারালাম তোমা হেন পতি।।
আপদে পড়িলে প্রভু সহোদর ছাড়ে।
লক্ষ্মণ বানর-সৈন্য লয়ে দেশে নড়ে।।
বিদেশে আসিয়া প্রভু হারালে জীবন।
লক্ষ্মণ দেশেতে গেল এড়িয়া মরণ।।
সহোদর ছাড়িয়া দেবর দেশে গেলি।
রাক্ষসের হাতেতে প্রভুরে দিয়া ডালি।।
শুনিয়া কৌশল্যা দেবী তোমার মরণ।
ত্যজিবেন প্রভু তব শোকেতে জীবন।।
জনকের গৃহে ছিলাম অভাগিনী সীতা।
জনমদুঃখিনী আমি নাহি মাতা পিতা।।
তোমার চরণ সেবি আইলাম বনে।
আমারে ত্যজিয়া কোথা গেলে হে এক্ষণে।।
অগ্নিতে প্রবেশ করি ত্যজিব জীবন।
একবার দেখা দেহ কমললোচন।।
রাজ্যনাশ বনবাস স্ত্রী নিলেক আনে।
কেন বিধি বিড়ম্বিল রাম হেন জনে।।
সর্ব্বলোকে বলে মোরে অবিধবা সীতা।
আমাকে বিধবা কৈলা কেমন দেবতা।।
অকারণে আছ রে রাবণ মোর আশে।
গলায় কাটারি দিয়া যাব প্রভু-পাশে।।
যে খাণ্ডায় প্রভুরে করিলি দুই খান।
সেই খড়্গে কাট মোরে যাউক পরাণ।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব বাখান।
লঙ্কাকাণ্ডে মায়ামুণ্ড করিলেক গান।।