৮৮তম অধ্যায়
দক্ষিণদিকস্থিত গোদাবরী প্রভৃতি তীর্থ
ধৌম্য কহিলেন, “হে ভারতবংশাবতংস! দক্ষিণদিকে যে সমস্ত পবিত্ৰ তীৰ্থ আছে, তাহা আমি স্বীয় বুদ্ধিসাধ্যে কীর্ত্তন করিতেছি, শ্ৰবণ করুন। ঐ দিকে নানা উপবনযুক্ত অগাধজল-সম্পন্ন তাপসগণ-পরিষেবিত পরমপবিত্ৰ গোদাবরী নদী এবং পাপনাশক মৃগপক্ষসমাকীর্ণ তাপসালয়বিভূষিত বেণ্বা ও ভাগীরথী তটিনী বিরাজিত আছেন। বিখ্যাত রাজর্ষি নৃগের পয়োষ্ণীনাম্নী সরিৎ ঐ দিকেই দৃষ্ট হয়। ঐ নদী রম্যতীর্থযুক্ত, অগাধজলসম্পন্ন ও বহুবিধ ব্রাহ্মণগণকর্ত্তৃক পরিষেবিত। তথায় মহাযশাঃ মহাযোগী মার্কণ্ডেয় ধরণীপতি নৃগের বংশপরম্পরানু-গাথাগান করিয়াছিলেন। খ্যাত আছে যে, মহারাজ নৃগের যজ্ঞানুষ্ঠানসময়ে সুররাজ ইন্দ্র সোমরসপান করিয়া এবং ব্রাহ্মণগণ অপরিমিত ধন দক্ষিণা-প্ৰাপ্ত হইয়া উন্মত্ত-প্রায় হইয়াছিলেন। যে ব্যক্তি পয়োষ্ণীসন্নিহিত উত্তম বরাহ-তীর্থে যজ্ঞ করে, পয়োষ্ণীসলিল যে-কোন প্রকারে হউক, ঐ যজমান ব্যক্তির অঙ্গসংলগ্ন হইয়া সমুদায় পাপ বিনষ্ট করে, ঐ স্থানে ভগবান ভবানীপতি গগনস্পর্শী অতিপবিত্র স্বীয় বিষাণ [শৃঙ্গ-শিঙা] নিখাত করিয়া রাখিয়াছেন, তাহা দৰ্শন করিলে শিবপ্রাপ্তি হয়। গঙ্গাপ্রভৃতি সমুদয় সরিৎ ও পুণ্যসলিলা পয়োষ্ণী নদীর তুলনা করিলে পয়োষ্ণীই সকল তীর্থ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। হে মহারাজ! বরুণস্রোতস-নামক গিরিতে পরমপবিত্র বহুমুল-ফলযুক্ত ও মঙ্গলদায়ক মোঠরবন ও এক যূপ আছে; তথায় উত্তরমার্গবতী পবিত্ৰ কণ্বাশ্রমে প্ৰবেণী [প্রবাহবতী নদীধারা] রহিয়াছে।
“হে মহারাজ। তাপসারণ্য-সমুদয় অবিকল কীর্ত্তিত হইল; এক্ষণে তীর্থফল শ্রবণ করুন। শূর্শারকে মহাত্মা জমদগ্নির পরামরমণীয় পাষাণময় সোপানশোভিত বেদী-তীৰ্থ আছে। ঐ স্থানে চন্দ্র-তীর্থ ও বহুল-আশ্রমসুশোভিত অশোক-তীৰ্থ আছে। পাণ্ড্যদেশে অগস্ত্য-তীর্থ, বরুণ-তীর্থ ও পরমপবিত্ৰ কুমারী-তীর্থসকল দৃষ্ট হইয়া থাকে। এক্ষণে তাম্রাপর্ণীর বিষয় কহিতেছি, শ্রবণ করুন। দেবগণ রাজ্যলাভেচ্ছায় ঐ স্থানে তপানুষ্ঠান করিয়াছিলেন। গোকৰ্ণনামে এক ত্ৰিলোকবিখ্যাত হ্রদ আছে, উহা পরমপবিত্র ও মঙ্গলদায়ক; উহার জল সুশীতল ও অগাধ; অজ্ঞানী ব্যক্তিরা ঐ হ্রদে কদাচ গমন করিতে পারে না। তথায় বিবিধ বৃক্ষ ও তৃণাদিসম্পন্ন, ফলমূল-বিশিষ্ট পবিত্র দেবসমনামে পর্ব্বত আছে, উহা অগস্ত্যশিষ্যের আশ্রম। ঐ স্থানে বহুফলসম্পন্ন মণিময় বৈদূৰ্য্যনামে পর্ব্বত আছে; তাহা অগস্ত্যের আশ্রম বলিয়া বিখ্যাত ।
অনন্তর সুরাষ্ট্রদেশীয় পরমপবিত্র আয়তন, আশ্রম, নদী ও সরোবর সমুদয় কহিতেছি, শ্রবণ করুন। বিপ্ৰগণ কহিয়া থাকেন, ঐ স্থানে চমসোদ্ভেদন-তীর্থ ও সমুদ্রে দেবগণের প্রভাসতীর্থ আছে। ঐ স্থানে তাপসাচরিত পিণ্ডারক-তীর্থ ও আশু সিদ্ধিদায়ক উজ্জয়ন্ত-পর্ব্বত লক্ষিত হয়। পূর্ব্বে দেবর্ষিশ্রেষ্ঠ নারদ এই বিষয়ে যাহা কহিয়াছেন, তাহা শ্রবণ করুন। মৃগপক্ষিনিষেবিত সুরােষ্ট্রদেশীয় পবিত্ৰ উজ্জয়ন্ত-পর্ব্বতে তপস্যা করিলে স্বৰ্গলোকে পূজ্য হয়। ঐ প্রদেশেই পবিত্ৰা দ্বারাবতী নগরী দৃষ্ট হয়; যে স্থানে সাক্ষাৎ সনাতনধর্ম্মস্বরূপ পুরাণদেব মধুসূদন বাস করেন। বেদবেত্তা অধ্যাত্মবিৎ ব্রাহ্মণগণ কহিয়াছেন যে, মহাত্মা কৃষ্ণই সনাতনধর্ম্ম। যাবতীয় পবিত্ৰ বস্তু আছে, তাহার মধ্যে গোবিন্দই পরমপবিত্র, পুণ্যের পুণ্য ও মঙ্গলের মঙ্গল। ত্ৰিলোকীমধ্যে তিনিই অব্যয়াত্মা এবং ব্যয়াত্মা। সেই ক্ষেত্ৰজ্ঞ পরমেশ্বর অচিন্তাত্মা মধুসূদন হরি ঐ দ্বারকাতেই আছেন।”