অষ্টাশীতিতম অধ্যায়
আত্মপ্রশংসায় যযাতির স্বর্গচ্যুতি
ইন্দ্র কহিলেন, “হে নহুষনন্দন! তুমি সর্ব্বকর্ম্মসম্পাদনপূর্ব্বক গৃহ পরিত্যাগ করিয়া বনপ্রবেশ করিয়াছিলে, অতএব জিজ্ঞাসা করি, তুমি কাহার তুল্য তপোনুষ্ঠান করিয়াছ?” যযাতি কহিলেন, “হে দেবরাজ! দেবতা, মনুষ্য, গন্ধর্ব্ব ও মহর্ষি ইঁহাগিগের মধ্যে কেহই অদ্যাবধি আমার তুল্য তপোনুষ্ঠান করিতে সক্ষম হয় নাই।” তখন ইন্দ্র কহিলেন, “মহারাজ! যেহেতু, অন্যের তপঃপ্রভাব না জানিয়া শুনিয়া উৎকৃষ্ট, নিকৃষ্ট ও সমকক্ষ লোকের অবমাননা করিলে, তন্নিমিত্ত তুমি অদ্যই ক্ষীণপুণ্য হইয়া দেবলোক হইতে পরিভ্রষ্ট হইবে।” যযাতি কহিলেন, “হে দেবরাজ! দেবর্ষি, গন্ধর্ব্ব ও নরলোকের অবমাননা করিয়া যদি দেবলোকভ্রষ্ট হইতে হইল, তবে যাহাতে সাধু-সন্নিধানে পতিত হই, এইরূপ অনুকম্পা করুন।” ইন্দ্র কহিলেন, “মহারাজ! তুমি সাধুসন্নিধানেই পতিত হইয়া যথেষ্ট খ্যাতি প্রতিপত্তি লাভ করিবে; কিন্তু সাবধান, যেন এইরূপে আর কাহারও অবমাননা করিও না।”
রাজা যযাতি দেবরাজ কর্ত্তৃক এইরূপে আদিষ্ট ও স্বর্গভ্রষ্ট হইয়া ভূমণ্ডলে পতিত হইতেছেন, ইত্যবসরে ধর্ম্মপরায়ণ রাজর্ষি অষ্টক তাঁহাকে অন্তরীক্ষে নিরীক্ষণ করিয়া কহিলেন, “হে যুবক! তুমি কে? তোমার রূপ ইন্দ্রের ন্যায় ও তেজ অগ্নির ন্যায় দেখিতেছি; তোমাকে প্রচণ্ড মার্ত্তণ্ডের ন্যায় অকস্মাৎ গগনমণ্ডল হইতে পরিভ্রষ্ট দেখিয়া আমরা বিস্ময়াবিষ্টচিত্তে নানাপ্রকার বিতর্ক করিতেছিলাম। এক্ষণে তোমাকে সন্নিকৃষ্ট [নিকটবর্তী] দেখিয়া পতনকারণ জিজ্ঞাসার্থ প্রত্যুদ্গমন করিলাম। অগ্রে তোমার পরিচয় লইতে আমাদিগের সাহস হইতেছে না এবং তুমিও আমাদিগকে কিছুই জিজ্ঞাসা করিতেছ না, অতএব জিজ্ঞাসা করি, তুমি কে এবং কি নিমিত্তই বা দেবলোকে আগমন করিয়াছিলে? হে মহানুভব! তোমার ভয় নাই, শ্রীঘ্রই বিষাদ ও মোহ পরিত্যাগ কর। এই সাধু-সমাজে বল-নামক অসুরের হন্তা ইন্দ্রও তোমাকে পরাভব করিতে সমর্থ নহেন। হে দেবরাজকল্প! সাধুলোকেরা সন্তপ্ত সাধুলোকদিগের আশ্রয়, সম্প্রতি তুমি সাধুসন্নিধানে আসিয়াছ, আর ভয় কি? যেমন তাপদানে অগ্নির, বীজাধানে পৃথিবীর, আলোকদানে সূর্য্যের প্রভুত্ব আছে, সাধুদিগের নিকট অভ্যাগত ব্যক্তিরও তাদৃশ প্রভুত্ব।”