ষড়শীতিতম অধ্যায়
যযাতির তপস্যা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! এইরূপে রাজা যযাতি পুরুকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিয়া হৃষ্টচিত্তে বানপ্রস্থাশ্রম [চতুর্থ আশ্রম-অনাসক্তভাবে বনবাস] অবলম্বন করিলেন। অনন্তর তিনি অযত্নসুলভ ফলমুলমাত্র ভোজনপূর্ব্বক ব্রাহ্মণগণের সহিত কিছুকাল বাস করিয়া সুরলোকে গমন করিলেন। তথায় কিয়দ্দিন পরমসুখে অবস্থান করিয়া দেবরাজ ইন্দ্র কর্ত্তৃক পুনর্ব্বার ভূতলে পতিত হইলেন। এইরূপ জনশ্রুতি আছে, স্বর্গভ্রষ্ট যযাতি এককালে ভূমণ্ডলে পতিত না হইয়া কিছুকাল অন্তরীক্ষে অবস্থান করেন। পরে সেই অন্তরীক্ষ হইতে বসুমান্, অষ্টক, প্রতর্দ্দন ও শিবি রাজার সহিত সমবেত হইয়া পুনর্ব্বার দেবলোকে গমন করেন।
জনমেজয় কহিলেন, হে ব্রহ্মণ! কুরুবংশাবতংস মহাতেজাঃ যযাতি মর্ত্ত্যলোকে ও স্বর্গলোকে যে-সকল কার্য্য করিয়াছিলেন, আপনি সভ্যগণ-সন্নিধানে তাহা কীর্ত্তন করুন এবং তিনি কি কারণে পুনর্ব্বার স্বর্গে গমন করেন, তাহা আনুপূর্ব্বিক সমুদয় বলুন, শুনিতে আমার নিতান্ত অভিলাষ হইয়াছে।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! সর্ব্বপাপ-প্রণাশিনী ভূলোক ও দ্যুলোক [স্বর্গলোক]-বিশ্রুতা তদীয় পরমপবিত্র কথা কীর্ত্তন করিতেছি, অবধান [সাবধানে শ্রবণ] করুন। নহুষতনয় যযাতি হৃষ্টচিত্তে কনিষ্ঠ পুৎত্রকে রাজ্যে অভিষিক্ত করিয়া এবং যদু প্রভৃতি পুৎত্রদিগকে অন্ত্যজ [নীচজাতি]-জাতি মধ্যে সন্নিবেশিত করিয়া বানপ্রস্থাশ্রম অবলম্বনপূর্ব্বক অরণ্যে প্রবেশ করিলেন। জিতেন্দ্রিয় জিতক্রোধ রাজা তথায় শ্রাদ্ধ ও যজ্ঞাদি ক্রিয়াকলাপ দ্বারা পিতৃগণ ও দেবগণকে পরিতৃপ্ত করিলেন। তিনি বানপ্রস্থাশ্রম-সমুচিত বিধানানুসারে জ্বলন্ত হুতাশনে আহুতি প্রদান করিতেন; বন্য ফলমূল ও ঘৃত দ্বারা অতিথি-সৎকার করিতেন এবং উঞ্ছবৃত্তি দ্বারা উদরপূর্ত্তি করিতেন। সহস্র বৎসর অতিবাহিত হইলে তিনি মৌনাবলম্বনপূর্ব্বক ত্রিংশৎ বৎসর কেবল জলাহারী হইলেন। পরে এক বৎসর বায়ুমাত্র ভক্ষণ এবং অপর এক বৎসর পঞ্চাগ্নির [চারদিকে চারিটি অগ্নিকুণ্ড ও উপরে সূর্য্য] মধ্যবর্ত্তী হইয়া অতি কঠোর তপস্যার অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন। অনন্তর ছয় মাস বায়ুমাত্র ভক্ষণ ও একপদে ভূমি স্পর্শ করিয়া নিরবচ্ছিন্ন দণ্ডায়মান থাকিতেন। এইরূপে তপোনুষ্ঠানপরায়ণ রাজা প্রভূত পুণ্যসঞ্চার করিয়া স্বর্গে আরোহণ করেন।