৮৬তম অধ্যায়
ধৌম্যের নিকট যুধিষ্ঠিরের বানান্তরগমন প্রার্থনা
বৈশম্পায়ন কহিলেন, মহারাজ! যুধিষ্ঠির এইরূপে স্বীয় ভ্রাতৃগণ ও ধীমান মহর্ষি নারদের মত গ্ৰহণানন্তর পিতামহসদৃশ ধৌম্যকে কহিতে লাগিলেন, “হে ব্ৰহ্মন! আমি অস্ত্রলাভের নিমিত্ত পুরুষশ্রেষ্ঠ সত্যপরায়ণ মহাবাহু অর্জ্জুনকে প্রবাসিত করিয়াছি। মহাবীর ধনঞ্জয় আমাতে একান্ত অনুরক্ত, বলশালী এবং বাসুদেবের ন্যায় অস্ত্ৰকুশল। আমি ও প্রতাপশালী ব্যাস, আমরা দুইজনে বল-বিক্রান্ত, আরতি-নিপাতন, ষড়ৈশ্বর্য্য-সম্পন্ন কৃষ্ণ ও অর্জ্জুনের বিষয় বিলক্ষণ অবগত আছি, নারদও তাঁহাদের তত্ত্ব সবিশেষ জ্ঞাত আছেন। তিনি সর্ব্বদা আমার নিকট ঐ কথা কহিয়া থাকেন, আমি ইন্দ্রসদৃশ অর্জ্জুনকে সমর্থ ভাবিয়াই তাঁহাকে ইন্দ্রের সহিত সাক্ষাৎকার ও তাঁহার নিকট অস্ত্ৰলাভ করিতে পঠাইয়াছি। যেহেতু, অতিরথ ভীষ্ম ও দ্রোণ, দুর্জ্জয় কৃপ ও অশ্বথামা এই সমস্ত মহাবল-পরাক্রান্ত বেদবিৎ সর্ব্বাস্ত্ৰবিশারদ বীরগণ ধৃতরাষ্ট্র পুত্ৰকর্ত্তৃক যুদ্ধার্থে বৃত হইয়া অর্জ্জুনের সহিত সংগ্রাম করিবেন।
“দুৰ্য্যোধন দিব্যাস্ত্ৰবিৎ সূতপুত্র কর্ণকেও যুদ্ধার্থে বরণ করিয়াছে। মহাবীর কর্ণ কাল-নিসৃষ্ট যুগান্তজ্বলনস্বরূপ, তিনি স্বীয় শস্ত্ৰবেগরদ্বীপ অনিলের সাহায্যে অপ্রতিহত শরজালরূপ-শিখা বিস্তার করিয়া ক্ৰোধঘূমিত ও ধৃতরাষ্ট্ররূপ প্রবল-বাতোদ্ধূত [বায়ুদ্বারা কম্পিত] হইয়া আমার সৈন্যরূপ তৃণরাশি ভস্মীভূত করিবে, সন্দেহ নাই। কিন্তু দিব্যাস্ত্ররূপ তড়িম্মালবেষ্টিত অর্জ্জুনমেঘ কৃষ্ণরূপ অনিলে উদ্ধৃত শ্বেতাশ্বরূপ বলাকশোভিত ও গাণ্ডীবরূপ ইদ্রায়ুধভূষিত হইয়া অনবরত শরবর্ষণদ্বারা অবশ্যই সেই প্ৰদীপ্ত কৰ্ণপাবকের শাস্তি করিবে। অরতিনিপাতন অজূন নিশ্চয়ই সাক্ষাৎ ইন্দ্রের নিকট সমস্ত দিব্যাস্ত্র প্রাপ্ত হইয়া ধৃতরাষ্ট্রপক্ষীয় সমুদয় বীরপুরুষগণকে পরাজয় করিতে সমর্থ হইবে। অর্জ্জুন ব্যতীত সংগ্রামে শক্রগণকে পরাজয় করা নিতান্ত দুঃসাধ্য। আমরা অবশ্যই সেই ধনুৰ্দ্ধর ধনঞ্জয়কে সংগৃহীতাস্ত্ৰ হইয়া সমাগত হইতে দেখিব। মহাবীর অর্জ্জুন কোন কর্ম্মের ভার গ্রহণ করিয়া কখনই অবসন্ন হয় না। যাহা হউক, এক্ষণে সেই পার্থব্যতিরিক্ত আমরা কৃষ্ণাসমভিব্যাহারে এই কাম্যাকবনে কোনক্রমেই আর ধৈৰ্য্যধারণ করিতে পারি না।
হে ব্ৰহ্মন! আপনি বহু অন্ন ও ফলযুক্ত পরমপবিত্র সাধুগণনিষেবিত অন্য এক রমণীয় বনের নাম উল্লেখ করুন, তাহা হইলে যেমন জলাভিলাষী জনেরা জলদের প্রতীক্ষা করে, তদ্রূপ আমরা সেই বনে বাস করিয়া অর্জ্জুনের প্রতীক্ষা করিব। আপনি দ্বিজাতিগণের নিকট যে সমস্ত বিবিধ আশ্রম, সরোবর, নদী ও রমণীয় পর্ব্বতের বিষয় শ্রবণ করিয়াছেন, তাহা বৰ্ণন করুন। অর্জ্জুন বিনা এই কাম্যাকবনে বাস করিতে আমার কোনক্রমেই প্রবৃত্তি হইতেছে না। তন্নিমিত্ত আমরা অবশ্যই অন্যত্র গমন করিব।”