৮৩তম অধ্যায়
কুরুক্ষেত্ৰাদি নানা তীৰ্থকীর্ত্তন
“পুলস্ত্য কহিলেন, ‘হে রাজেন্দ্র! তদনন্তর অতি প্রশস্ত কুরুক্ষেত্ৰতীর্থে গমন করিবে; সর্ব্বপ্রকার প্রাণী সেই তীৰ্থদৰ্শনমাত্র পাপ হইতে বিমুক্ত হয়। যে ব্যক্তি সতত এইরূপ কহে যে, “আমি কুরুক্ষেত্রে গমন করিব, আমি কুরুক্ষেত্রে বাস করিব”, সে ব্যক্তিও সমুদয় পাতক হইতে পরিত্রাণ পায়। কুরুক্ষেত্রের বায়ুবিক্ষিপ্ত ধূলিও দুষ্কৃতকর্ম্মকে পরমপদ প্ৰদান করিতে পারে। উত্তরে সরস্বতী ও দক্ষিণে দৃষদ্বতী; কুরুক্ষেত্র এই উভয় নদীর মধ্যবর্ত্তী, যাহারা এই কুরুক্ষেত্রে বাস করে, তাহাদিগের সুরলোকে বাস করা হয়। হে বীর! তথায় সরস্বতী-নদীতীরে একমাস বাস করিবে। ব্ৰহ্মাদিদেবতা, ঋষি, সিদ্ধ, চারণ, গন্ধর্ব্ব, অপ্সর, যক্ষ ও পন্ন গগণও তত্ৰত্য মহাপুণ্য ব্ৰহ্মক্ষেত্রে গমন করিয়া থাকেন। যে ব্যক্তি কুরুক্ষেত্রবাসের কামনামাত্র করে, সে ব্যক্তিও সকল পাপ হইতে মুক্ত হইয়া ব্ৰহ্মলোকপ্রাপ্ত হয়। শ্রদ্ধান্বিত হইয়া কুরুক্ষেত্রে গমন করিলে রাজসূয় ও অশ্বমেধের ফললাভ হয়।
‘অনন্তর মষ্কণকনামে নামে মহাবল দ্বারপাল যক্ষকে অভিবাদন করিলে গোসহস্রদানের ফলপ্রাপ্ত হয়। তৎপরে বিষ্ণুস্থানে গমন করিবে, যে স্থানে নারায়ণ সর্ব্বদা সন্নিহিত হইয়া থাকেন, তথায় স্নান ও ত্ৰিলোকপ্রভাব নারায়ণকে নমস্কার করিলে অশ্বমেধের ফললাভ হয় ও বিষ্ণুলোকে গমন করে। ত্ৰৈলোক্যবিশ্রুত পারিপ্লবতীর্থে গমন করিলে অগ্নিষ্টোম ও অতিরাত্রের ফললাভ হয়।
‘পৃথিবী-তীর্থে গমন, শালুকিনী-তীৰ্থসেবা ও দশাশ্বমেধে স্নান করিলে সহস্ৰ-গোদানের ফলপ্ৰাপ্ত হয়। সর্ব্বদেবীনামে নাগাতীর্থে স্নান করিলে অগ্নিষ্টোমফলপ্ৰাপ্তি ও নাগলোকে গমন করে। যে ব্যক্তি তরন্তুক-নামক দ্বারপালের নিকট গমন করিয়া তথায় একরাত্রি বাস করে, সে ব্যক্তি গোসহস্রদানের ফলপ্ৰাপ্ত হয়। নিয়ত নিয়তাশন হইয়া পঞ্চনদ-তীর্থে গমনপূর্ব্বক কোটি-তীর্থে স্নান করিলে অশ্বমেধ-ফললাভ হয়। অশ্বিনীকুমার-তীর্থে গমন করিলে পরামরূপবান হয়। তৎপরে বরাহ-তীর্থে গমন করিবে, যে স্থানে নারায়ণ পূর্ব্বে বরাহরূপ ধারণ করিয়া অবস্থান করিয়াছিলেন; সেই তীর্থে স্নান করিলে অগ্নিষ্টোমফললাভ হয়। জয়ন্তীদেশস্থ সোম-তীর্থে গমনপূর্ব্বক স্নান করিলে রাজসূয়ফল এবং হংসনামক তীর্থে স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফললাভ হয়।
‘তীৰ্থসেবী ব্যক্তি কৃতশৌচ-তীর্থে গমন করিলে পুণ্ডরীক ও শুচিতাপ্রাপ্ত হয়। মুঞ্জবট-তীর্থে মহাত্মা মহাদেবের স্থান; তথায় উপবাসী হইয়া একরাত্রি যাপন করিলে গাণপত্যলাভ হয়। তন্ত্ৰস্থ লোকবিশ্রুত যক্ষিণীতীর্থে অবগাহন করিলে সকল কামনা পরিপূর্ণ হয়। সেই স্থান কুরুক্ষেত্রের দ্বারস্বরূপ, তীৰ্থসেবী ব্যক্তি সমাহিত হইয়া সেই স্থানে প্রদক্ষিণ করেল পুষ্করতীর্থের সমানফল প্রাপ্ত হয়। সেই জমদগ্ন্যকৃত তীর্থে অবগাহনপূর্ব্বক পিতৃদেবতার অৰ্চনা করিলে কৃতাৰ্থ হইয়া অশ্বমেধফল প্রাপ্ত হয়।
‘অনন্তর সমাহিত হইয়া রামহ্রদে গমন করিবে; যে স্থানে দীপ্ততেজঃ পরশুরাম ক্ষত্ৰিয়কুল নির্মূল করিয়া পঞ্চহ্রদ নিবেশিত করিয়াছেন, তিনি সেই পঞ্চহ্রদ রুধিরদ্বারা পরিপূর্ণ করিয়া পিতৃপিতামহদিগের তর্পণ করিয়াছিলেন। পিতৃলোক প্রীত হইয়া তাঁহাকে কহিয়াছিলেন, “হে রাম মহাভাগ ভার্গব! আমরা ঈদৃশ অসাধারণ পিতৃভক্তি ও বিক্রমদর্শনে তোমার প্রতি প্রীত হইয়াছি; তুমি অভিলষিত বর প্রার্থনা কর।”
‘যোদ্ধপ্রধান পরশুরাম কৃতাঞ্জলিপুটে গগনস্থ পিতৃলোকদিগকে কহিলেন, “যদ্যপি আপনারা অনুগ্রহ করিয়া আমার প্রতি প্রসন্ন হইয়া থাকেন, তাহা হইলে আমাকে পিতৃপ্রসাদ প্রদান করিয়া আপ্যায়িত করুন; আমি রোষাভিভূত হইয়া ক্ষত্ৰিকুল উৎসাদিত করিয়াছি, আপনার স্বীয় তেজঃপ্রভাবে আমাকে সেই পাপ হইতে মুক্ত করুন ও এই পঞ্চহ্রদ তীর্থস্বরূপ হইয়া ভুবনে বিখ্যাত হউক।”
“পিতৃগণ তাঁহার বাক্য শ্রবণ করিয়া প্রীতি-প্রফুল্লচিত্তে কহিলেন, “হে রাম! পিতৃভক্তিদ্বারা তোমার তপস্যা পুনরায় সমধিক বর্দ্ধিত হইবে; ক্ষত্ৰিয়েরা স্বীয় স্বীয় কর্ম্মদোষে পতিত হইয়াছেন, অতএব তুমি ক্ষত্ৰকুলোৎসাদনজনিত পাতক হইতে মুক্ত হইবে ও তোমার এই পঞ্চহ্রদ তীর্থরূপে সুবিখ্যাত হইবে। যে ব্যক্তি এই পঞ্চহ্রদে স্নান ও পিতৃগণের তর্পণ করিবে, পিতৃগণ প্রীত হইয়া তাহাকে অনন্যসুলভ অভিলাষানুরূপ বর ও সনাতন স্বৰ্গলোক প্ৰদান করিবেন।” তাহারা পরশুরামকে এই প্রকার বরপ্রদানপূর্ব্বক মধুর-বাক্যে সম্ভাষণ করিয়া সেই স্থানেই অন্তর্হিত হইলেন। মহাত্মা ভার্গবের পঞ্চহ্রদ এইরূপে পুণ্যজনক হইল। ব্ৰহ্মচারী ও ধৃতব্ৰত হইয়া রামহ্রদে স্নান ও রামের অর্চনা করিলে প্রচুর সুবৰ্ণলাভ হয়।
‘তীৰ্থসেবী ব্যক্তি বংশমূলক-তীর্থে গমনপূর্ব্বক স্নান করিলে স্বীয় বংশ উদ্ধার হয়। কায়শোধন-তীর্থে গমন ও স্নান করিলে শুদ্ধদেহ হইয়া শুভলোকে গমন করে। অনন্তর ত্ৰৈলোক্যবিশ্রুত লোকোদ্ধারতীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে প্রভাবশালী বিষ্ণু পূর্ব্বলোকসকলকে উদ্ধার করিতেন, সেই প্রধানতম তীর্থে স্নান করিলে স্বীয় লোক উদ্ধার হয়। চিত্তসংযমপূর্ব্বক শ্ৰীতীর্থে গমন করিয়া স্নান এবং পিতৃলোক ও দেবগণকে অৰ্চনা করিলে অত্যুত্তম শ্ৰী প্রাপ্ত হয়।
‘ব্রাতধারী ও ব্রহ্মচারী হইয়া কপিলা-তীর্থে গমনপূর্ব্বক স্নান এবং পিতৃলোক ও দৈবতগণকে পূজা করিলে সহস্ৰ কপিলাদানের ফলপ্রাপ্ত হয়। সংযতচিত্ত ও উপবাসপরায়ণ হইয়া সূৰ্য্যতীর্থে গমনপূর্ব্বক স্নান করিয়া পিতৃলোক ও দেবগণের অর্চনা করিলে অগ্নিষ্টোমের ফল প্রাপ্ত হয় ও সূৰ্য্যলোকে গমন করে।
‘তীৰ্থসেবী ব্যক্তি গোভবন—তীর্থে যথাক্রমে গমন ও স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফলপ্রাপ্ত হয়। তন্ত্ৰস্থ শঙ্খিনী দেবীর তীর্থে স্নান করিলে অসুলভ রূপলাভ হয়। অনন্তর সরস্বতী-তীরে তরন্তুক-নামক দ্বারপালের নিকট উপনীত হইবে; উহা মহাত্মা কুবেরের তীর্থ, তথায় স্নান করিলে অগ্নিষ্টোম-ফললাভ হয়। তদনন্তর ব্ৰহ্মাবর্ত্ত-তীর্থে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে ব্ৰহ্মালোক লাভ হয়।
“তদনন্তর অনুত্তম সুতীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে পিতৃলোক ও দেবগণ নিয়ত সন্নিহিত থাকেন, তথায় স্নান ও পিতৃদেবগণের আরাধনা করিলে অশ্বমেধফললাভ ও পিতৃলোকপ্ৰাপ্তি হয়। অম্বুবতী প্রদেশে কাশীশ্বরতীর্থে স্নান করিলে সর্ব্বব্যাধিবিনিমুক্ত ও ব্ৰহ্মলোকপ্ৰাপ্ত হয়। অম্বুবতী প্রদেশস্থ মাতৃ-তীর্থে স্নান করিলে তাহার প্রজাবৃদ্ধি [সন্ততিবৃদ্ধি] ও বিপুল শ্ৰীলাভ হয়।
‘অনন্তর পবিত্র ও নিয়তাশী হইয়া অতিদুর্লভ শীতবন-তীর্থে গমন করিবে, তথায় কেশাভ্যূক্ষণ [মস্তকে জলের ছিটা] মাত্রেই পবিত্র হয়। এই স্থানে শ্বাবিল্লোমাপহ তীৰ্থ আছে। তীর্থ-পরায়ণ ব্যক্তিরা তথায় লোমোচ্ছেদনপূর্ব্ববক স্নান করিয়া পরমপ্রীতি লাভ করেন, পরে প্রাণায়াম সাধনায় পুণ্যাত্মা হইয়া পরমগতিপ্রাপ্ত হয়েন। তত্ৰত্য দশাশ্ব-মেধিক-তীর্থে স্নান করিলে চরমে পরমপদ প্রাপ্ত হয়।
‘তদনন্তর সুপ্ৰসিদ্ধ মানুষ-তীর্থে গমন করিবে, যে সরোবরে কৃষ্ণসার মৃগগণ ব্যাধশরপীড়িত হইয়া অবগাহনপূর্ব্বক মনুষ্যত্বলাভ করিয়াছিল; সংযতচিত্ত ও ব্রহ্মচারী হইয়া সেই তীর্থে স্নান করিলে সকল পাপ হইতে মুক্ত ও স্বৰ্গলোকপ্ৰাপ্ত হয়।
“মানুষ-তীর্থের একক্রোশ পূর্ব্বে সিদ্ধগণসেবিত আপগানামে সুবিখ্যাত এক নদী আছে। যে ব্যক্তি দেব ও পিতৃলোকের উদ্দেশে সেই নদীতে শ্যামাক [শ্যামা-শাক]-ভোজন প্ৰদান করে, সে সমধিক ধর্ম্মফল প্ৰাপ্ত হয়। তথায় একটিমাত্ৰ ব্ৰাহ্মণকে ভোজন প্ৰদান করিলে কোটি ব্রাহ্মণ-ভোজনের ফললাভ হয়। তথায় একরাত্রি বাস করিয়া স্নান এবং দেব ও পিতৃলোকের পূজা করিয়া অগ্নিষ্টোমের ফলপ্ৰাপ্ত হয়।
অনন্তর ব্রহ্মোড়ুম্বরনামে বিখ্যাত অত্যুত্তম ব্ৰহ্মস্থানে গমন করিবে। সংযতচিত্তে পবিত্রদেহে তত্ৰত্য সপ্তর্ষিকুণ্ডে ও মহাত্মা কপিলের কেদারে স্নান করিলে নর সর্ব্বপাপ-বিনিমুক্ত ও ব্ৰহ্মসাক্ষাৎকারলাভ ও ব্রহ্মলোকপ্ৰাপ্ত হয়। সুদূর্লভ কপিল-কেদারে গমন করিলে নর তপঃপ্রভাবে দগ্ধকালুষ হইয়া সেই স্থানেই লীন হয়।
“যে ব্যক্তি ভুবনবিখ্যাত সরক-তীর্থে গমন করিয়া কৃষ্ণাচতুর্দ্দশীতে বৃষভধ্বজের আরাধনা করে, সে ব্যক্তি পূর্ণকাম হইয়া স্বৰ্গলোকে গমন করে। হে কুরুনন্দন! সেই সরকস্থ রুদ্রকোটি কূপ ও হ্রদে তিন কোটি তীর্থ বিরাজমান আছে। তত্রত্য ইলাস্পদতীর্থে অবগাহন করিয়া পিতৃলোক ও দেবগণকে আরাধনা করিলে নিরাপদ ও বাজপেয়-যজ্ঞের ফললাভ হয়। যে ব্যক্তি কিন্দান ও কিঞ্জপ্য-তীর্থে স্নান করে, সে ব্যক্তি অপ্রমেয় দান ও জপের ফলপ্রাপ্ত হয়। জিতেন্দ্ৰিয় ও শ্রদ্ধাযুক্ত হইয়া কলসীতীর্থে স্নান করিলে অগ্নিষ্টোম-যজ্ঞের ফলপ্রাপ্ত হয়।
সরক-তীর্থের পূর্ব্বভাগে অম্বাজন্মনামে বিখ্যাত মহাত্মা নারদের তীর্থ। তথায় স্নান করিলে চরমে নারীদের অনুজ্ঞাত পরমোৎকৃষ্ট লোকলাভ হয়। যে ব্যক্তি শুক্লদশমীতে পুণ্ডরীকতীর্থে গমনপূর্ব্বক স্নান করে, সে পুণ্ডরীকফলপ্রাপ্ত হয়। তদনন্তর সকললোক-বিখ্যাত ত্ৰিপিষ্টপ-তীর্থে গমন করিবে; তত্ৰত্য পাপনাশিনী বৈতরণী নদীতে স্নান ও শূলপাণির অৰ্চনা করিলে সর্ব্বপাপ হতে বিমুক্ত ও পরমাগতিপ্রাপ্ত হয়।
“তদান্তর ফলকী-বনে গমন করিবে, দেবগণ সে স্থানে বাস করিয়া বহুসহস্ৰ-বৰ্ষব্যাপী তপশ্চৰ্য্যা করেন। দৃষদ্বতীতে স্নান ও দেবগণের তর্পণ করিলে অগ্নিষ্টোম এবং অতিরাত্রের ফলপ্ৰাপ্ত হয়। সমস্ত দেবতীর্থে স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফল হয়। পাণিখাতে স্নান ও দেবগণের তর্পণ করিলে অগ্নিস্ঠোম, অতিরাত্ৰ ও রাজসূয় যজ্ঞের ফললাভ এবং ঋষিলোকপ্রাপ্ত হয়।
“তৎপরে মিশ্রকনামক প্রধান তীর্থে গমন করিবে। আমরা শুনিয়াছি, মহাত্মা বেদব্যাস দ্বিজগণের নিমিত্ত তথায় অনেক তীর্থ মিশ্রিত করিয়াছেন। যে ব্যক্তি সেই তীর্থে স্নান করে, তাহার সর্ব্বতীর্থস্নানের ফললাভ হয়। তদনন্তর সংযত ও নিয়তাশন হইয়া ব্যাসবনে গমন করিবে। তত্ৰস্থ মনোজবে স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফলপ্রাপ্ত হয়। শুদ্ধাত্মা হইয়া মধুবাটীতে গমনপূর্ব্বক দেবীতীর্থে স্নান করিয়া দেবলোক ও পিতৃলোকের তর্পণ করিলে দেবীর অনুজ্ঞাক্ৰমে গোসহস্রদানের ফল হয়। যে ব্যক্তি নিয়তাহার হইয়া কৌশিকী ও দৃষদ্বতীনদীর সঙ্গমস্থলে স্নান করে, সে সকল পাপ হইতে প্রমুক্ত হয়।
‘তদনন্তর ব্যাসস্থলীতে গমন করিবে; যে স্থানে ধীমান্য বেদব্যাস পুত্ৰশোকাভিসন্তপ্ত হইয়া প্ৰাণপরিত্যাগ করিবার মানসে আসীন হইয়াছিলেন; পরে দেবগণ আসিয়া তাঁহাকে উত্থাপিত করেন। তথায় গমন করিলে সহস্রগোদানের ফল হয়। যে ব্যক্তি কিন্দানকুপে একপ্রস্থ তিল প্রদান করে, সে ব্যক্তি ঋণমুক্ত হইয়া পরমসিদ্ধিপ্ৰাপ্ত হয়। বেদীতীর্থে স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফললাভ হয়। অহঃ ও সুদিনতীর্থে স্নান করিলে সূৰ্য্যলোকপ্ৰাপ্তি হয়।
‘অনন্তর ত্ৰিলোক-বিখ্যাত মৃগধূম-তীর্থে গমন করিবে। তত্ৰস্থ গঙ্গায় স্নান ও মহাদেবের অর্চনা করিলে অশ্বমেধফললাভ হয় এবং দেবীতীর্থে স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফল হয়।
‘তদনন্তর ত্ৰিলোকবিশ্রুত বামনক-তীর্থে গমন করিবে; তথায় বিষ্ণুপদে স্নান ও বামনদেবকে অৰ্চনা করিলে সর্ব্বপাপবিমুক্ত হইয়া বিষ্ণুলোকে গমন করে। কুলম্পূন-তীর্থে স্নান করিলে স্বীয় কল পবিত্র হয়।
‘পবনহ্রদ বায়ুগণের উত্তম তীর্থ, তথায় স্নান করিলে পবনলোকপ্ৰাপ্তি হয়। অমরগণের হ্রদে স্নান করিয়া অমররাজকে অৰ্চনা করিলে অমরপ্রভাবে অমরলোকে পূজিত হয়। শালিসূৰ্য্যপ্রদেশে শালিহোত্ৰতীর্থ আছে; তথায় স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফল হয়। সরস্বতীতীরে শ্ৰীকুঞ্জ-তীৰ্থ আছে; তথায় স্নান করিলে অগ্নিষ্টোমফললাভ হয়।
‘অনন্তর নৈমিষকুঞ্জে গমন করিবে। পূর্ব্বে নৈমিষারণ্যবাসী তপস্বীরা তীর্থযাত্রা-উপলক্ষে কুরুক্ষেত্রে গমন করিয়া সরস্বতী-কুঞ্জ নির্ম্মাণ করেন; সেই কুঞ্জে স্নান করিলে অগ্নিষ্টোমফলপ্রাপ্ত হয়।
‘তদনন্তর কন্যা-তীর্থে গমন করিবে। তথায় স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফলপ্ৰাপ্ত হয়। পরে ব্ৰহ্মাতীর্থে গমন করিবে। তথায় স্নান করিলে নীচবর্ণও ব্রাহ্মণত্বলাভ করিয়া পরমগতিপ্রাপ্ত হয়। তদনন্তর সোম-তীর্থে গমন করিবে; তথায় স্নান করিলে সোমলোকপ্ৰাপ্ত হয়।
‘তদনন্তর সপ্তসারস্বত-তীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে লোকবিশ্রুত তপঃসিদ্ধ মহর্ষি মঙ্কণক বাস করিতেন। আমরা শ্রবণ করিয়াছি, পূর্ব্বে কুশাগ্ৰদ্বারা সেই মহর্ষির করদেশ ক্ষত হওয়াতে শাকরস নিঃসৃত হইতে লাগিল।
মহর্ষি তাহা দৰ্শন করিয়া প্ৰফুল্লচিত্তে নৃত্য করিতে লাগিলেন। তখন স্থাবর ও জঙ্গম উভয়েই তাঁহার তেজে মোহিত হইয়া নৃত্য করিতে আরম্ভ করিল।ব্ৰহ্মাদি দেবতা ও ঋষিগণ মহর্ষির নৃত্য নিরীক্ষণ করিয়া মহাদেবের নিকট নিবেদন করিলেন, “হে দেব! যাহাতে এই ঋষি নৃত্য হইতে বিরত হয়েন, তাহার উপায় করুন।” মহাদেব দেবগণের হিতের নিমিত্ত হৃষ্টচিত্তে নৃত্যশলি ঋষিকে কহিলেন “হে মহর্ষে! আপনি কি নিমিত্ত নৃত্য করিতেছেন? অদ্য আপনার হৰ্ষের কি কারণ উপস্থিত হইল ?”
“মঙ্কণক কহিলেন, “আমি তপস্বী ও ধর্ম্মপথের পথিক; আমার কুশক্ষত কর হইতে শাকরস নির্গত হইতেছে; আপনি কিছু দর্শন করিতেছেন না? আমি উহাই অবলোকন করিয়া প্রচুর হর্ষভরে নৃত্য করিতেছি।”
‘মহাদেব সহাস্য-বদনে সেই রাগ-মোহিত ঋষিকে কহিলেন, “হে বিপ্ৰ! আমি ইহাতে বিস্ময়াবিষ্ট হই নাই; তুমি আমাকে অবলোকন কর।” এই বলিয়া ভগবান ভবানীপতি অঙ্গুলির অগ্রভাণদ্বারা স্বীয় অঙ্গুষ্ঠে আঘাত করিবামাত্র ক্ষত হইতে হিমসন্নিতঃ ভস্ম বিনির্গত হইতে লাগিল।
মহর্ষি মাঙ্কণক তদর্শনে লজ্জিত ও মহাদেবের পদতলে নিপতিত হইয়া স্তব করিতে লাগিলেন, “হে দেব! তোমা অপেক্ষা প্রধানতম আর কেহই নাই। তুমি শূলধারী, তুমি সুরাসুর প্রভৃতি সমস্ত জীবের গতি, তুমিই এই সচরাচর ত্ৰৈলোক্য সৃষ্টি করিয়াছ; তুমিই পুনরায় যুগাবসানে সমুদয় সংহার কর; দেবগণও তোমাকে জানিতে সমর্থ নহে; আমি কি প্রকারে তোমাকে জানিব; ব্ৰহ্মাদি সমুদয় দেবতা তোমাতে অবস্থান করিতেছেন; তুমিই সমুদয় লোকের কর্ত্তা ও নিযোক্তা, সুরগণ তোমারই প্ৰসাদে অকুতোভয়ে সুখে সময়াতিপাত করিতেছেন। হে মহাদেব! তোমার প্রসাদে যেন আমার তপোবৃদ্ধি হয়।”
‘মহাদেব কহিলেন, “হে ব্রহ্মর্ষে! আমার প্রসাদে তোমার তপস্যা সহস্ৰগুণে বৰ্দ্ধিত হউক। আমি এই আশ্রমে তোমার সহিত বাস করিব। যাহারা এই সপ্তসারস্বত-তীর্থে স্নান করিয়া আমার অর্চনা করিবে, ইহলোকে বা পরলোকে তাহাদের কিছুই অপ্ৰাপ্য থাকিবে না এবং সারস্বত-লোকে গমন করিবে সন্দেহ নাই।” মহাদেব এই কথা কহিয়া তথায় অন্তর্হিত হইলেন।
‘তৎপরে ভুবনবিখ্যাত ঔশনস-তীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে ব্ৰহ্মাদি দেবগণ, তপোধন ঋষিগণ ও ভগবান কার্ত্তিকেয় ভার্গবের হিতকামনায় নিরন্তর সন্নিহিত থাকেন। পাপবিমোচন কপালমোচন-তীর্থে স্নান করিলে সর্ব্বপাপবিমোচন হয়।
তদনন্তর অগ্নি-তীর্থে গমন করিবে। যে ব্যক্তি তথায় স্নান করে, সে ব্যক্তি অগ্নিলোকে গমন ও স্বীয় কুল উদ্ধার করে। তত্ৰত্য বিশ্বামিত্ৰ-তীর্থে স্নান করিলে ব্ৰাহ্মণত্ব লাভ করে। যে ব্যক্তি পবিত্ৰচিত্তে ব্ৰহ্মযোনি-তীর্থে স্নান করে, সে ব্ৰহ্মলোকপ্ৰাপ্ত হয় এবং তাহার সপ্তম কুল পৰ্য্যন্ত পবিত্র হয়, তাহাতে সন্দেহ নাই।
তদনন্তর অতি প্ৰসিদ্ধ পৃথুদকনামে কার্ত্তিকেয়-তীর্থে গমন করিবে; স্ত্রীলোক হউক আর পুরুষই হউক, জ্ঞানপূর্ব্বক বা অজ্ঞানপূর্ব্বক যে কিছু অশুভকর্ম্ম অনুষ্ঠান করে, তথায় স্নানমাত্রেই তৎসমুদয় বিনষ্ট হয় এবং অশ্বমেধযজ্ঞের ফললাভ ও স্বৰ্গলোকে গমন করে। কুরুক্ষেত্ৰ পুণ্যজনন-তীৰ্থ বলিয়া বিখ্যাত, কুরুক্ষেত্ৰ অপেক্ষাও সরস্বতী অধিকতর পুণ্যজননী; সরস্বতী অপেক্ষাও অন্যান্য তীর্থ-সকল অধিকতর ফলপ্ৰদ; সেই সকল তীর্থ অপেক্ষাও পৃথূদক-তীর্থসমধিক মহিমান্বিত ও সকল তীর্থের মধ্যে প্রধান। সনৎকুমার ও মহাত্মা ব্যাস কহিয়াছেন যে, যে ব্যক্তি পৃথূদকে জনপরায়ণ হইয়া দেহ পরিত্যাগ করে, তাহাতে পুনঃ পুনঃ মরণযন্ত্রণাভোগ করিতে হয় না। অতএব মনুষ্য অবশ্যই পৃথূদকে গমন করিবে। পৃথূদক অপেক্ষা সমধিক ফলপ্ৰদ তীর্থ আর নাই। ঐ তীর্থই অতিমাত্র পবিত্র ও অসীম ফলপ্রদ। এইরূপে মনীষিগণ পৃথূদক-তীর্থের মাহাত্ম্য কীর্ত্তন করিয়াছেন। তত্ৰত্য মধুস্রব-তীর্থে স্নান করিলে গোসহস্রদানের ফললাভ হয়।
তৎপরে অতিপবিত্র সরস্বতী-অরুণাসঙ্গম-তীর্থে গমন করিবে, তথায় ত্রিরাত্ৰ উপবাসী হইয়া স্নান করিলে ব্ৰহ্মহত্যাজনিত পাতক হইতে মুক্ত হয়, অগ্নিষ্টোম ও অতিরাত্র যজ্ঞের ফললাভ হয় এবং তাঁহার সপ্তম কুল পৰ্য্যন্ত পবিত্র হয়। মহর্ষি দর্ভী পূর্ব্বকালে বিপ্ৰগণের প্রতি অনুকম্পপরতন্ত্র হইয়া তথায় অৰ্দ্ধকীলনামে তীর্থ নির্ম্মাণ করিয়াছেন তথায় স্নান করিয়া, ব্ৰত, উপনয়ন, উপবাস, ক্রিয়া ও মন্ত্রপরায়ণ হইলে ব্ৰাহ্মণ হয়, সন্দেহ নাই। কিন্তু পুরাতন লোকেরা ক্রিয়ামন্ত্রবিহীন ব্যক্তিকেও তথায় স্নান করিয়া ধৃতব্ৰত ও বিদ্বান হইতে দেখিয়াছেন। মহাত্মা দর্ভী তথায় চতুঃসমুদ্রকে আনয়ন করিয়াছেন। য়ে ব্যক্তি তথায় স্নান করে, সে কখন দুরবস্থায় পতিত হয় না এবং চতুঃসহস্র গোদানের ফলপ্ৰাপ্ত হইয়া থাকে।
তদনন্তর শতসহস্ৰক ও সাহস্ৰক এই উভয় তীর্থে গমন করিবে; যে ব্যক্তি এই উভয় তীর্থে স্নান করে, তাহার গোসহস্রদানের ফললাভ হয় এবং তথায় একবার দান ও উপবাস করিলে তাহা সহস্ৰগুণে পরিবর্দ্ধিত হইয়া উঠে।
পরে রেণুকা-তীর্থে গমন করিবে। তথায় তীর্থভিষেকানন্তর পিতৃদেবাৰ্চনপরায়ণ হইলে অগ্নিষ্টোমফললাভ হয়। জিতক্রোধ ও জিতেন্দ্ৰিয় হইয়া তত্ৰত্য বিমোচনে স্নান করিলে প্ৰতিগ্রহজনিত সকল পাপ হইতে পরিমুক্ত হয়।
অনন্তর জিতেন্দ্ৰিয় ও ব্রহ্মচারী হইয়া পঞ্চবটীতে গমন করিবে। তথায় গমন করিলে পুণ্যশালী হইয়া সাধুলোকমধ্যে পূজিত হয়। যোগেশ্বর মহাদেব স্বয়ং তথায় বিরাজমান আছেন; সেইস্থানে গমনপূর্ব্বক তাঁহাকে পূজা করিলে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধিলাভ হয়। তৎপরে বরুণতেজে দীপ্যমান তৈজস-বরুণ-তীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে ব্ৰহ্মাদি দেবগণ ও তপোধন ঋষিগণ কীর্ত্তিকেয়কে দেবগণের সৈনাপত্যে অভিষিক্ত করিয়াছিলেন।
‘তৈজস-তীর্থের পূর্ব্বদিকে কুরু-তীর্থ, মনুষ্য জিতেন্দ্রিয় ও ব্ৰহ্মচারী হইয়া কুরুতীর্থে স্নান করিলে সকল পাপ হইতে বিমুক্ত ও ব্ৰহ্মলোকপ্ৰাপ্ত হয়। তৎপরে নিয়তাশন হইয়া স্বৰ্গদ্বার-তীর্থে গমন করিলে স্বৰ্গলোক ও ব্ৰহ্মলোক প্রাপ্ত হয়। তদনন্তর তীর্থসেবী ব্যক্তি অনরক-তীর্থে গমন করিবে। তথায় স্নান করিলে তাহার দুৰ্গতি হয় না; ব্ৰহ্মা, নারায়ণ ও অন্যান্য দেবগণ নিয়ত বাস করেন এবং ভগবতী রুদ্রপত্নী তথায় সন্নিহিত আছেন; তাঁহাকে দর্শন করিলে দুৰ্গতিভোগ করিতে হয় না। তথায় বিশ্বেশ্বরকে দর্শন করিলে সকল পাতক হইতে মুক্ত হয়। নারায়ণকে প্রাপ্ত হইলে কান্তিমান হইয়া বিষ্ণুলোকে গমন করে। সর্ব্বদেব-তীর্থে স্নান করিলে সকল দুঃখ হইতে মুক্ত হইয়া শশীর ন্যায় দীপ্তিমান হয়। অনন্তর তীর্থসেবী ব্যক্তি স্বস্তিপুরে গমন করিবে; তথায় প্রদক্ষিণ করিলে গোসহস্রদানের ফলপ্ৰাপ্ত হয়। যে ব্যক্তি পাবন-তীর্থে গমন করিয়া পিতৃলোক ও দেবগণের তর্পণ করে, সে ব্যক্তি অগ্নিষ্টোমযজ্ঞের ফললাভ করে। সেই স্থানেই গঙ্গাহ্রদনামে কূপ আছে, সেই কূপে তিন কোটি তীর্থ বিরাজমান আছে, মনুষ্য তথায় স্নান করিলে স্বৰ্গলোকপ্ৰাপ্ত হয়।
“আপগা-তীর্থে স্নান ও মহেশ্বরের অর্চনা করিলে গাণপত্যলাভ ও স্বীয় কুল উদ্ধার হয়। তৎপরে ত্ৰিভুবনবিখ্যাত স্থাণুবাটে গমন করিবে। যে ব্যক্তি তথায় স্নান করিয়া একরাত্রি বাস করে, সে ব্যক্তি রুদ্রলোকপ্ৰাপ্ত হয়। অনন্তর বশিষ্ঠের আশ্রম বন্দরীপাচনে গমন করিয়া ত্রিরাত্ৰ উপবাস ও বদরী ভক্ষণ করিবে। যে ব্যক্তি তথায় দ্বাদশ বৎসর বদরী ভক্ষণ করিয়া ত্রিরাত্ৰ উপবাস করে, সে ব্যক্তি বশিষ্ঠের তুল্য হয়।
‘তীৰ্থসেবী ব্যক্তি রুদ্রমাগে গমন করিয়া অহোরাত্ৰ উপবাস করিলে ইন্দ্ৰলোকে পূজাপ্রাপ্ত হয়। ধূতনিয়ম ও সত্যবাদী হইয়া একরাত্র তীর্থে গমনপূর্ব্বক একরাত্রি উপবাস করিলে ব্ৰহ্মলোকপ্রাপ্ত হয়। তদনন্তর যে স্থানে মহাত্মা তেজোরাশি আদিত্যদেবের আশ্রম, সেই ভুবনবিখ্যাত তীর্থে গমন করিয়া সূর্যদেবকে পূজা করিলে সূৰ্য্যলোকে গমন ও স্বীয় কুল উদ্ধার হয়। তীৰ্থসেবী মানব সোম-তীর্থে স্নান করিলে সোমলোকপ্ৰাপ্ত হয়, তাহাতে সন্দেহ নাই।
তৎপরে মহাত্মা দধীচি-মুনির ভুবনবিখ্যাত পাবনতম তীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে তপোনিধি সারস্বত অঙ্গিরা গমন করিয়াছিলেন; সেই তীর্থে স্নান করিলে অশ্বমেধযজ্ঞের ফললাভ ও সারস্বতীগতিপ্ৰাপ্তি হয়, সন্দেহ নাই। তৎপরে নিয়মপূর্ব্বক ব্ৰহ্মচৰ্য্য অবলম্বন করিয়া কন্যাশ্রমে গমন করিবে; তথায় ত্রিরাত্ৰ উপবাস ও শাস্ত্ৰবিহিত নিয়মানুসারে ভোজন করিলে শতসংখ্যক দিব্যকন্যা ও স্বৰ্গলোকলাভ হয়।
তৎপরে সন্নিহতী-তীর্থে গমন করিবে; যে স্থানে ব্ৰহ্মাদিদেবতা ও তপোধনগণ সাতিশয় পুণ্যাবলে মাসে মাসে আগমন করিয়া থাকেন। সেই হেতু গ্রহণসময়ে তথায় স্নান করিলে শত শত অশ্বমেধযজ্ঞের অক্ষয় ফললাভ হয়। পৃথিবী ও অন্তরীক্ষে যে সমস্ত তীর্থ, নদী, হ্রদ, তড়াগ, প্রস্রবণ, কূপ, বাপী ও আয়তন আছে, তৎসমুদয় প্রতিমাসের অমাবস্যাতে সন্নিহতী-তীর্থে আগমন করে, সন্দেহ নাই। তথায় সমুদয় তীর্থের সন্নিহিন অর্থাৎ সমাবেশ হয় বলিয়া তাহার নাম সন্নিহিতী হইয়াছে। তথায় স্নান ও তত্ৰত্য জলপান করিলে স্বৰ্গলোক-প্ৰাপ্তি হয়। যে ব্যক্তি অমাবস্যায় সূৰ্যগ্রহণসময়ে তথায় শ্ৰাদ্ধ করে, তাহার ফল শ্রবণ কর; তথায় স্নান ও শ্ৰাদ্ধ করিবামাত্র সম্যক অনুষ্ঠিত সহস্ৰ অশ্বমেধযাগের ফলপ্রাপ্ত হয়। কি স্ত্রী, কি পুরুষ, যে কিছু দুষ্কর্ম্ম করে, তথায় স্নান করিবামাত্র তৎসমুদয় বিনষ্ট হয়, সন্দেহ নাই। তৎপরে মচক্রুকনামে দ্বারপাল যক্ষকে অভিবাদন করিলে পদ্মবৰ্ণ যানে আরোহণ করিয়া ব্ৰহ্মলোকে গমন করে। তদনন্তর কোটি-তীর্থে স্নান করিলে বহুসুবর্ণ লাভ হয়। তত্রত্য গঙ্গাহ্রদে স্নান করিলে রাজসূয় ও অশ্বমেধযজ্ঞের ফললাভ হয়।
‘পৃথিবীর মধ্যে নৈমিষ, অন্তরীক্ষের মধ্যে পুষ্কর এবং ত্ৰিলোকীর মধ্যে কুরুক্ষেত্র প্রধান তীর্থ। কুরুক্ষেত্রের বায়ু-সমুত্থিত ধূলিও সকল পাপাত্মাকে পরমগতি প্ৰদান করে। যে ব্যক্তি একবার কহে যে, “আমি কুরুক্ষেত্রে গমন ও বসতি করিব”, সে ব্যক্তি সকল পাপ হইতে মুক্ত হয়। ব্ৰহ্মবেদী কুরুক্ষেত্র অতিপবিত্র ও ব্রহ্মর্ষি সেবিত স্থান; যে-সকল মনুষ্য তথায় বাস করে, তাঁহারা কদাচি শোচনীয় হয় না। তরন্তুক, অরন্তুক, রামহ্রদ ও অচক্ৰক, এই কয়েক স্থানের মধ্যবর্ত্তী স্থান কুরুক্ষেত্ৰ-সমন্ত-পঞ্চক; উহাই পিতামহের উত্তরবেদী বলিয়া বিখ্যাত।’ ”