দ্বৈত্যবনে একদিন ঘুরিতে ঘুরিতে।
অজগর সর্পে ভীম পাইল দেখিতে।।
ভীমের বিলম্ব দেখি রাজা যুধিষ্ঠির।
তাঁর অন্বেষণে যান হইয়া অস্থির।।
দেখিলেন, অজগর ভীমেরে ধরিয়া।
রাখিয়াছে দৃঢ়ভাবে তাঁরে সাপটিয়া।।
অজগরে যুধিষ্ঠির কহেন বচন।
আমার ভ্রাতার কর বন্ধন মোচন।।
সর্প বলে, ছেড়ে দিব ওহে নরবর।
যদি তুমি দাও মোর প্রশ্নের উত্তর।।
স্বর্গসুখ-ভোগে আমি নহুষ নৃপতি।
ঋষিগণ স্কন্ধে চড়ি করিতাম গতি।।
ঋষিরা করিত মম শিবিকা বহন।
অগস্ত্যের দেহে মম ঠেকিল চরণ।।
অগস্ত্যের অভিশাপে আমি যে ভূতলে।
অজগর সর্পরূপে রহিনু বিরলে।।
পুনশ্চ অগস্ত্য ঋষি দিলা মোরে বর।
উদ্ধারিবে সেই, দিবে যে তব উত্তর।।
মহারাজ যুধিষ্ঠির পাণ্ডব রাজন।
করিয়া দিবেন তব শাপ বিমোচন।।
যুধিষ্ঠির কহিলেন প্রশ্ন কর তুমি।
যথাজ্ঞানে তাহার উত্তর দিব আমি।।
* অজগরের প্রশ্ন
যথার্থ ব্রাহ্মণ তুমি বলিবে কাহারে।
জ্ঞাতব্য বিষয় কিবা বল এ সংসারে।।
যুধিষ্ঠিরের উত্তর।
সত্য, দান, ক্ষমা, শীল, তপ, দয়া যাঁর।
তাঁরেই ব্রাহ্মণ বলি করিবে বিচার।।
যাঁহারে জানিলে সুখ দুঃখ নাহি রয়।
সুখ-দুঃখ শূন্য যিনি সকল সময়।।
সেই এক ব্রহ্ম শুধু জ্ঞাতব্য বিষয়।
অপর জ্ঞাতব্য আর নাহি মহাশয়।।
* অজগরের প্রশ্ন
শূদ্রেও সত্যাদি ধর্ম্ম থাকিলে নিহিত।
সে জন ব্রাহ্মণ বলি হয় কি বিদিত।।
যুধিষ্ঠিরের উত্তর।
শূদ্রেও থাকিতে পারে ব্রাহ্মণ-লক্ষণ।
ব্রাহ্মণেও শূদ্র-চিহ্ন করি নিরীক্ষণ।।
শূদ্রই যে শূদ্র হয় ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণ।
এরূপ নিয়ম কিছু না দেখি কখন।।
সে ব্রাহ্মণ, যাঁহে দেখি বৈদিক আচার।
সেই শূদ্র, যাহে দেখি বিপরীত তার।।
* অজগরের প্রশ্ন।
প্রশ্ন করিতেছি আমি, ওহে মহামতি।
কি কর্ম্ম করিলে হয় জীবের সদগতি।।
যুষ্ঠিরের উত্তর।
যে জন অহিংসা পর হইয়া সংসারে।
সত্য প্রিয় বাক্যে সৎপাত্রে দান করে।।
সেই জন স্বর্গলাভ করে সুনিশ্চয়।
এই মোর বাক্য কভু অন্যথা না হয়।।
* অজগরের প্রশ্ন।
মন, বুদ্ধি, দুইটীর কিরূপ লক্ষণ।
বুঝাইয়া কহ মোরে ধর্ম্মের নন্দন।।
যুধিষ্ঠিরের উত্তর।
দেহেরে সহিত মন জন্মলাভ করে।
কায্য হতে বুদ্ধি কিন্তু জন্মে এ সংসারে।।
মন ত সগুণ, আর বুদ্ধিত নির্গুণ।
বলিনু দুয়ের ভেদ, মন দিয়া শুন।।
আপনি সুবিদ্ধিমান, তবে কি কারণ।
করিলেন ঋষি দেহে চরণ অর্পণ।।
সর্প কহে বিদ্যা বুদ্ধি থাকুক না যত।
ধন যদি থাকে তার, মোহ জন্মে তত।।
ধনমদে মত্ত হয়ে আমিও রাজন্।
করিয়াছি অগস্ত্যের দেহে পদার্পণ।।
অজগর কহিলেন, হে ধর্ম্ম নন্দন।
ভাগ্যে আজি মিলিয়াছে তব দরশন।।
আমার প্রশ্নের দিলে উত্তর এখন।
এতদিনে হল মোর শাপ বিমোচন।।
কাশী কহে, অজগর তব বংশধর।
শাপমুক্ত করি তব জুড়াল অন্তর।।