স্বর্গে গেল সুরপতি, হইয়া সানন্দমতি,
যুধিষ্ঠির পঞ্চ সহোদর।
আপনার ভাগ্য জানি, সফল করিয়া মানি,
আনন্দ বিধানে পরস্পর।।
তবে ধর্ম্ম নরপতি, লোমশ ধৌম্যের প্রতি,
কহিলেন করি যোড়কর।
আজ্ঞা কর মাহশয়, যে কর্ম্ম করিতে হয়,
কহিলেন করি যোড়কর।
আজ্ঞা কর মহাশয়, যে কর্ম্ম করিতে হয়,
তাহা কহ, করি অতঃপর।।
বসতি কোথায় করি, কর আজ্ঞা শিরে ধরি,
তথাকারে করিব গমন।
কহিল লোমশ তবে, কাশ্যবনে চল সবে,
সার যুক্তি, লয় মম মন।।
ধৌম্য বলে কহ যত, সকলি মনের মত,
যুধিষ্ঠির মানিল সকল।
শুনিয়া ধর্ম্মের সেতু, গমন স্বচ্ছন্দ হেতু,
ঘটোৎকচে স্মরণ করিল।।
সত্যশীল ধর্ম্মমণি, হিড়িম্বা নন্দন জানি,
শীঘ্রগতি হৈল উপনীত।
সবারে প্রণাম করে, দাঁড়াইল যোড়করে,
দেখি রাজা আনন্দে পূরিত।।
তবে ঘটোৎকচ কয়, আজ্ঞা কর মহাশয়,
কি কারণে করিলা স্মরণ।
ধর্ম্ম কন শুন কথা, কাম্যক কানন যথা,
লয়ে চল করিব গমন।।
শুনি ভীম অঙ্গজনু, বাড়াইল নিজ তনু,
করিলেক বিস্তার যোজন।
তবে ধর্ম্ম নরপতি, সবান্ধবে শীঘ্রগতি,
করিলেন স্কন্ধে আরোহণ।।
ভীমের নন্দন ধীর, পরাক্রমে মহাবীর,
অনায়াসে করিল গমন।
নাহি মনে কিছু ভ্রম, তিলেক নাহিক শ্রম,
উত্তরিল কাম্যক কানন।।
মৃগ পশু বিহঙ্গম, বনস্থলে পূর্ণতম,
বৃক্ষগণ শোভে বনফুলে।
কৌতুক বিধানে তবে, আশ্রম করেন সবে,
পুণ্যতীর্থ প্রভাসের কূলে।।
সবার আনন্দ মন, বনে গিয়া ভীমার্জ্জুন,
মৃগয়া করিয়া নিত্য আনি।
কেবল সূর্য্যের বরে, ভুঞ্জায় সবার তরে,
রন্ধন করিয়া যাজ্ঞসেনী।।
এমন সানন্দ মনে, বসতি করেন বনে,
কৃষ্ণা সহ পঞ্চ সহোদর।
একদিন নিশাশেষে, আসিয়া ধর্ম্মের পাশে,
কহিছে লোমশ মুনিবর।।
শুন ধর্ম্ম নরপতি, যাইব অমরাবতী,
তুষ্ট হয়ে করহ বিদায়।
শুনি ভাই পঞ্চ জনে, আসিয়া রিবস মনে,
পড়িল প্রণাম করি পায়।।
লোচন-সলিলে রাজা, বিধিমতে করি পূজা,
বহু স্তুতি করিলেন শেষে।
কহিয়া সবার স্থানে, পরম সন্তোষ মনে,
মহামুনি গেল স্বর্গবাসে।।
ধর্ম্ম আগমন শুনি, আইল যতেক মুনি,
ক্রমে ক্রমে যত বন্ধুজন।
বনেতে ধর্ম্মের সভা, উপমা তাহার কিবা,
হস্তিনা হইল কাম্যবন।।
বলরাম জগন্নাথ, যতেক যাদব সাথ,
গেলেন ধর্ম্মের অন্বেষণে।
যত পরিবার সঙ্গে, আনন্দ প্রসঙ্গ রঙ্গে,
উপনীত রম্য কাম্যবনে।।
কৃষ্ণ আগমন শুনি, যুধিষ্ঠির নৃপমণি,
অমৃতে সিঞ্চিল কলেবর।
সানন্দ মন্দির পুর, আগুসরি কত দূর,
সবান্ধবে পঞ্চ সহোদর।।
বহুদিন অদর্শনে, নমস্কার আলিঙ্গনে,
আশীর্ব্বাদ সুমঙ্গল ধ্বনি।
বসেন কৌতুক মতি, রাম কৃষ্ণ ধর্ম্মপতি,
সবান্ধবে আর যত মুনি।।
বলরাম নারায়ণ, সম্বোধিয়া পঞ্চ জন,
জিজ্ঞাসেন কুশল বারতা।
শুনিয়া কহেন ধম্ম, হইল যতেক কম্ম,
পূর্ব্বের বৃত্তান্ত সব কথা।।
শুনি রাম যদুপতি, আনন্দে প্রসন্ন মতি,
প্রশংসা করেন পার্থবীরে।
তবে তারা কতক্ষণে, চলিলেন সর্ব্বজনে,
স্নান হেতু প্রভাসের তীরে।।
জলক্রীড়া করি সবে, আসিয়া আশ্রমে তবে,
ভোজন করেন পরিতোষে।
যথাসুখে আচমন, করি শেষে সর্ব্ব জন,
বসিলেন হরিষ মানসে।।
হেনকালে যদুবীর, সম্বোধিয়া যুধিষ্ঠির,
কহিলেন সুমধুর বাণী।
তোমার ভাগ্যের কথা, এমনি করিল ধাতা,
বনেতে হস্তিনা তুল্য মানি।।
যতেক দেখহ কর্ম্ম, সকলের সার ধর্ম্ম,
ধর্ম্মবলে ধর্ম্মী অন্ত।।
ইহা জানি ধর্ম্মরাজ, সাধিবে আপন কাজ,
সত্যে নাহি হবে বিচলিত।
পূর্ব্বে মহাজন যত, সবাকার এক পথ,
কেহ নাহি করিল অনীত।।
সত্য জান মহাশয়, তোমার এ দুঃখ নয়,
বহু দুঃখে দুঃখী দুর্য্যোধন।
বিপুল বৈভব যত, নিশার স্বপন মত,
অল্পদিনে হইবে নিধন।।
কৃষ্ণের বচন শুনি, সত্য সত্য যত মুনি,
কহিল ধর্ম্মের সন্নিধানে।
নিশ্চিত জানিও তুমি, ভবিস্য কহিনু আমি,
অল্পদিনে ক্ষয় দুর্য্যোধনে।।
আশীর্ব্বাদ করি তবে, যথাস্থানে গেল সবে,
বন্ধুগণ লইয়া বিদায়।
আশ্বাসিয়া সর্ব্বজনে, গেল সবে নিজ স্থানে,
দুঃখিত অন্তর ধর্ম্মরায়।।
তবে রাম নারায়ণ, সম্বোধিয়া পঞ্চ জন,
চাহিলেন বিদায় বিনয়ে।
আজ্ঞা কর ধর্ম্মপতি, যাব তবে দ্বারাবতী,
কহ যদি প্রসন্ন হৃদয়ে।।
ধর্ম্ম কন মৃদুভাষে, অবশ্য যাইবে দেশে,
রাখিবে আমার প্রতি মন।
কি আর কহিব আমি, সকল জানহ তুমি,
দুই চক্ষু রাম নারায়ণ।।
হেন করি সম্বিধান, বিদায় লইয়া যান,
রেবতীশ সত্যভামা পতি।
রথে চড়ি সবান্ধবে, নানা বাক্য মহোৎসবে,
উপনীত যথা দ্বারাবতী।।
সবে গেল নিজ ঘর, আছে পঞ্চ সহোদর,
কাম্যবন করিয়া আশ্রয়।
জপ যজ্ঞ দান ব্রত, নানা ধর্ম্ম অবিরত,
করি নিত্য আনন্দ হৃদয়।।
বনেতে বিচিত্র কথা, ব্যাসের রচিত গাথা,
বর্ণিবারে কাহার শকতি।
গীতিচ্ছন্দে অভিলাষ, ভণে কাশীরাম দাস,
কৃষ্ণপদে মাগিয়া ভকতি।।