একোনঅশীতিতম অধ্যায়
বৃষপর্ব্বার প্রতি শুক্রের ক্রোধ
শুক্র কহিলেন, “হে দেবযানী! যে ব্যক্তি ক্ষমাগুণে পরের তিরস্কারবাক্যে উপেক্ষা প্রদর্শন করেন, এই সচরাচর বিশ্ব তাঁহারই আয়ত্ত। সাধুলোকেরা অশ্বরশ্মি [বল্গাধারী] গ্রাহীকে সারথি না বলিয়া যিনি উত্তেজিত ক্রোধকে অশ্বের ন্যায় নিগ্রহ করিতে পারেন, তাঁহাকে যথার্থ সারথি বলিয়া থাকেন। যিনি উদ্রিক্ত ক্রোধানলে ক্ষমাবারি সেচন করিতে পারেন, এই স্থাবরজঙ্গমাত্মক জগৎ তাঁহারই জয় করা হয়। যেমন সর্প নির্ম্মোক [খোলস] পরিত্যাগ করে, তদ্রুপ যিনি ক্রোধ পরিত্যাগ করিতে পারেন, পণ্ডিতেরা তাঁহাকেই সৎপুরুষ কহেন। যিনি ক্রোধবেগ সংবরণ পূর্ব্বক তিরস্কারে উপেক্ষা প্রদর্শন করেন এবং সন্তপ্ত হইয়াও অন্যকে তাপিত করেন না, তাঁহারই সর্ব্বার্থসিদ্ধ হইয়া থাকে। যে-ব্যক্তি শত বৎসর ব্যাপিয়া প্রতিমা-সেবা বা যজ্ঞানুষ্ঠান করেন, আর যিনি কাহারও উপর কখনও ক্রুদ্ধ হয়েন না, এই উভয়ের মধ্যে অক্রোধন ব্যক্তিই অপেক্ষাকৃত উৎকৃষ্ট। বালক-বালিকারা বিবেকাভাবপ্রযুক্ত ক্রোধান্ধ হইয়া পরস্পর বিরোধ করিয়া থাকে; কিন্তু প্রাজ্ঞব্যক্তি সেরূপ করেন না।” দেবযানী কহিলেন, “তাত! আমি অল্পবয়স্কা বালিকা বটে, কিন্তু ধর্ম্মের মর্ম্ম বিবেচনা করিতে নিতান্ত অসমর্থ নহি এবং ক্রোধ ও ক্ষমা এই উভয়ের বলাবল-পরিজ্ঞানেও অক্ষম নহি। কিন্তু যে-ব্যক্তি শিষ্য হইয়া অশিষ্যের ন্যায় আচরণ করে, মঙ্গলার্থী ব্যক্তি তাহাকে কিছুতেই ক্ষমাপ্রদর্শন করিবে না। অতএব এই ভ্রষ্টাচার দেশে বাস করিতে আমার অভিলাষ নাই। যে-সকল পরনিন্দা করে, মঙ্গলার্থী ব্যক্তি সেই সকল পাপিষ্ঠ লোকের সংসর্গ করিবেন না; আর যেস্থানে বাস করিলে আচার ব্যবহার ও কৌলীন্যাদির গৌরব থাকে, সেই স্থানে বাস করাই শ্রেয়ঃকল্প। হে তাত! বৃষপর্ব্বতনয়া শর্ম্মিষ্ঠার সেই সকল দুর্ব্বাক্য আমার হৃদয় দগ্ধ করিতেছে। অধিক কি বলিব, যে হতভাগ্য ব্যক্তি যৎকিঞ্চিৎ লাভপ্রত্যাশায় ধনিগণের উপাসনা করে, বোধ হয়, তদপেক্ষা তাহার মৃত্যু হওয়া উত্তম।”