৭৬তম অধ্যায়
নিন্দিত ব্রাহ্মণ-ক্ষণ
যুধিষ্ঠির কহিলেন, “পিতামহ! ব্রাহ্মণগণের মধ্যে কেহ কেহ স্বকৰ্ম্মনিরত ও কেহ কেহ বা কুকর্ম্মপরায়ণ হইতেছেন, আপনি তাঁহাদিগের বিষয় বিশেষভাবে কীৰ্ত্তন করুন।”
ভীষ্ম কহিলেন, “ধৰ্ম্মরাজ! বিদ্বান, সুলক্ষণসম্পন্ন ও সর্ব্বত্র সমদর্শী বিপ্রগণ ব্ৰহ্মতুল্য; ঋক্, যজুঃ ও সামবেদে দীক্ষিত স্বকার্য্যনিরত ব্রাহ্মণগণ দেবতুল্য আর স্বকার্য্যবিহীন ব্রাহ্মণগণ শূদ্রতুল্য বলিয়া পরিকীৰ্ত্তিত হইয়া থাকেন। যেসমস্ত ব্রাহ্মণগণ শ্রোত্রিয় নহেন এবং যাঁহাদিগের অগ্নি সঞ্চিত নাই, ধার্ম্মিক নরপতি তাঁহাদিগের নিকট করগ্রহণ ও তাঁহাদিগকে বিনা বেতনে কাৰ্য্যে নিয়োগ করিবেন। ধর্ম্মাধিকারী[ভাট], দেবল [বেতনগ্রহণে দেবপূজা], নক্ষত্রযাজক [বেতনগ্রহণে তিথি নক্ষত্রাদি জ্যোতির্গণনা], গ্রামযাজক[বহুসংখ্যক শূদ্রাদির যাজক] ও শুল্কগ্রাহক ব্রাহ্মণগণ চণ্ডালতুল্য। ঋত্বিক, পুরোহিত, মন্ত্রী ও বার্তাবহ ব্রাহ্মণগণ ক্ষত্রিয়তুল্য। অশ্বারোহী, গজারোহী, রথী ও পদাতি ব্রাহ্মণগণ বৈশ্যতুল্য। মহীপতি ধনহীন হইলে ব্ৰহ্মকল্প ও দেবকল্প ব্রাহ্মণ ভিন্ন আর সমস্ত ব্রাহ্মণের নিকট হইতেই করগ্রহণ করিবেন; তাদৃশ ব্রাহ্মণ ভিন্নবর্ণের ন্যায় স্বকার্য্যভ্রষ্ট ব্রাহ্মণের ধনেও রাজার অধিকার আছে। নরপতি ব্রাহ্মণগণকে স্বকর্ম্মচ্যুত দেখিয়া কদাচ উপেক্ষা করিবেন না, ধর্ম্মানুসারে তাঁহাদিগের দণ্ডবিধানপূর্ব্বক তাঁহাদিগকে স্বকৰ্ম্মস্থ ব্রাহ্মণশ্রেণী হইতে পৃথক করিয়া দিবেন। যে রাজার অধিকারে ব্রাহ্মণ তস্কর হয়, সেই রাজাকেই তদ্বিষয়ে অপরাধী বলিয়া গণনা করা যায়। বেদবেত্তা পণ্ডিতেরা কহেন যে, যদি বেদবিৎ স্নাতক ব্রাহ্মণ বৃত্তিহীন হইয়া চৌর্য্যবৃত্তি অবলম্বন করেন, তাহা হইলে রাজা তাঁহার বৃত্তিবিধানপূর্ব্বক ভরণপোষণ করিবেন। যদি তিনি তাহাতেও চৌর্য্যবৃত্তি পরিত্যাগ না করেন, তাহা হইলে তাঁহাকে সপরিবারে নিৰ্ব্বাসিত করাই রাজার কর্ত্তব্য।”