হইয়া সাগর পার অতি কুতূহলী।
সেই রাত্রে কটকে আইল মহাবলী।।
কার্য্য সিদ্ধি করিয়া আইল হনুমান।
শ্রীরামের নিকটে পাইল বহু মান।।
বসেছেন বানর বেষ্টিত রঘুনাথ।
উপস্থিত হনুমান যোড় করি হাত।।
কক্ষতলে তাহার দেখিয়া দিনকরে।
জিজ্ঞাসা করেন রাম পবন-কুমারে।।
কি অদ্ভুত দেখি বাপু পবন-নন্দন।
তোমার শরীরে কেন রবির কিরণ।।
হনুমান বলে প্রভু কর অবগতি।
আনিবারে ঔষধি গেলাম রাতারাতি।।
ঔষধি খুঁজিয়া আমি শিখরে বেড়াই।
পূর্ব্বদিকে দিনপতি দেখিয়া ডরাই।।
পর্ব্বত হইতে গেনু ভাস্করের ঠাঁই।
যোড়হাত করি স্তব করিনু গোঁসাই।।
তোমার সন্তান অতি কাতর শ্রীরাম।
ক্ষণেক কশ্যপ পুত্র করহ বিশ্রাম।।
যাবৎ লক্ষ্মণ বীর না পান জীবন।
তাবৎ উদয় নাহি হইও তপন।।
আমার এ বাক্য না শুনেন দিনপতি।
ধরিয়া এনেছি তাই না পোহাতে রাতি।।
শ্রীরাম বলেন বাপু একি চমৎকার।
না পোহায় রজনী না ঘোচে অন্ধকার।।
সূর্য্যের উদয় জন্য সংসার প্রকাশে।
ছাড়হ ভাস্করে উনি উঠুন আকাশে।।
রামের বচনে বীর তোলে দুই হাত।
বাহির হইল তবে জগতের নাথ।।
সূর্য্যেরে প্রণাম করে পবন-নন্দন।
যতেক বানর করে চরণ-বন্দন।।
আদি কর্ত্তা আপনি বংশের দিবাকর।
শত শত প্রণাম করেন রঘুবর।।
উদয়-পর্ব্বতে ভানু করেন গমন।
পোহাইল বিভাবরী প্রকাশে ভুবন।।
কপিগণ কহে ধন্য ধন্য হনুমান।
ত্রিভুবনে নাহি দেখি তোমার সমান।।
শ্রীরাম বলেন ধন্য ধন্য হনুমান।
তোমার প্রসাদে ভাই পাইলেক প্রাণ।।
তোমারে প্রসাদ দিব কি আছে এমন।
যদি চাহ লহ, করি আত্ম-সমর্পণ।।
এতেক কহিয়া রাম দেন আলিঙ্গন।
কৃতার্থ বানরবংশ মানে কপিগণ।।
বারমাসী ফল ছিল সুগ্রীবের পাশে।
সুগ্রীব প্রসাদ দিল যত মনে আসে।।
দিলেন দাড়িম্ব পক্ব বিদারিয়া সন্ধি।
নারিকেল ফল দিল সহস্রেক কান্দি।।
হাঁড়িয়া হাঁড়িয়া তাল দিলেন মধুর।
অমৃত-সমান দিল খাইতে খর্জ্জুর।।
বড় বড় আম্র দিল খাইতে রসাল।
বিঘত প্রণাম কোষ দিলেন কাঁঠাল।।
নানাবর্ণে ফল দিল শ্বেত কালো রাঙ্গা।
মধুপান করিবারে দিল বহু ডোঙ্গা।।
ফুল ফল বিস্তর প্রসাদ দিল রাজা।
লক্ষ বানরেতে বহে ফুল ফল বোঝা।।
রাজপ্রসাদ বহু ফল পেয়ে হনুমান।
প্রাচীন বানরগণে কত হৈল দান।।
বাহক বানরে কিছু কিছু দিয়া তোষে।
লঙ্কাকাণ্ড গাইল পণ্ডিত কৃত্তিবাসে।।