আদি পুরুষের নাম হৈল নিরঞ্জন।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর পুত্র তিন জন।।
তিন পুত্র হইল তনয় এক জিনি।
সকলে তাঁহার নাম রাখিল কন্দিনী।।
জরৎকারু মুনিপুত্রে নারদ সে আনি।
তাঁহারে বিবাহ দিল কন্দিনী ভগিনী।।
সবে গায় বাজায় নারদ মুনি বেণু।
তাহাতে জন্মিল কন্যা নাম হৈল ভানু।।
তাঁহারে বিবাহ দিল জামগগ্ন্য বরে।
এক অংশে জন্মিলেন বিষ্ণু তাঁর ঘরে।।
ব্রহ্মার কাছেতে তাঁর পড়িলেক বীজ।
তাহাতে জন্মিল পুত্র নামেতে মরীচ।।
মরীচের নন্দন কশ্যপ নাম ধরে।
তাঁর পুত্র সূর্য্য, ইহা বিদিত সংসারে।।
সূর্য্যের হইল পুত্র মনু নাম তাঁর।
সুষেণ তাঁহার পুত্র রূপে চমৎকার।।
প্রসন্ন তাঁহার পুত্র অতি সে সুঠাম।
হইল তাঁহার পুত্র যুবনাশ্ব নাম।।
যুবনাশ্ব হৈল রাজা অযোধ্যা-নগরে।
বিবাহ করিতে গেল কন্দকের ঘরে।।
কালিনিমি নামে কন্যা কন্দক রাজার।
বিবাহ করিল যুবনাশ্ব গুণাধার।।
বিবাহ করিল মাত্র সম্ভোগ না করে।
লজ্জা ঘুচাইয়া কন্যা বলিল বাপেরে।।
বিশেষ জানিয়া সে কন্দক মহীপতি।
অভিশাপ করিলেন জামাতার প্রতি।।
তপস্যা করিয়া যবে আইল ভূপতি।
প্রণতি করিয়া দ্বিজে মাগিল সন্ততি।।
আশীর্ব্বাদ কর, মম হউক নন্দন।
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কহে দ্বিজগণ।।
পত্নী সহ তোমার নাহিক দরশন।
কেমনে বলিব তব হউক নন্দন।।
এক যুক্তি কর রাজা যদি লয় মন।
যজ্ঞ কর, তবে রাজা হইবে নন্দন।।
যজ্ঞ-জল করাইবা রাণীকে ভক্ষণ।
হইবে তোমার পুত্র অতি বিচক্ষণ।।
যজ্ঞ করি জল রাজা রাখে নিজ ঘরে।
শয়ন করিল রাজা খাটের উপরে।।
যখন হইল রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর।
জল আন বলি রাজা হইল কাতর।।
তৃষ্ণায় পীড়িত রাজা আকুল হইল।
পুংসবন জল ছিল মুখেতে ঢালিল।।
প্রভাতে প্রকাশ হৈল সূর্য্যের কিরণ।
জল আন বলি ডাকে যতেক ব্রাহ্মণ।।
রাজা বলে দ্বিজগণ করি নিবেদন।
রাত্রিকালে জল আমি করেছি ভক্ষণ।।
এ কথা শুনিয়া বলে যত মহামতি।
রাত্রিকালে জল খাইলে হবে গর্ভবতী।।
শ্বশুরের অভিশাপ তাহারে লাগিল।
যুবনাশ্ব মহারাজ গর্ভবতী হইল।।
দশ মাস গর্ভ পূর্ণ হইল রাজার।
বাহির হইল পেট চিরিয়া কুমার।।
নৃপতি ত্যজিল প্রাণ পেয়ে বড় ব্যথা।
আসিয়া বিধাতা নাম রাখিল মান্ধাতা।।
অযোধ্যা-নগরে রাজা হইল মান্ধাতা।
সপ্তদ্বীপ অধিপতি পুণ্যশীল দাতা।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিতের কবিত্ব সুঠাম।
আদিকাণ্ডে গান মান্ধাতার উপাখ্যান।।