সূর্পণখা যায় খর দূষণের পাশে।
নাকে হাত দিয়া কান্দে, গাত্র রক্তে ভাসে।।
কহে খর দূষণ রাক্ষস-সেনাপতি।
কোন্ বেটা করিল ভগিনীর দুর্গতি।।
এ দেখি বাঘের ঘরে ঘোগের বসতি।
মরিবার ঔষধ কে বান্ধিল দুর্ম্মতি।।
দূষণ খরের থানা যমের সমান।
যোদ্ধা চৌদ্দ হাজার যাহাতে বলবান।।
রাবণেরে নাহি মানে, আমারে না জানে।
মরিবার উপায় সৃজিল কোন্ জনে।।
বসিয়া ত সূর্পণখা কহে ধীরে ধীরে।
আসিয়াছে দুই নর বনের ভিতরে।।
মুনি তুল্য বেশ ধরে কিন্তু নহে মুনি।
সঙ্গে লয়ে ভ্রমে এক সুন্দরী কামিনী।।
একা কার্য্যে গিয়া ভ্রষ্টা কহে আর কাজ।
মনের বাসনা সে কহিতে বাসে লাজ।।
গেলাম মনুষ্য-মাংস খাইবার সাধে।
নাক কাণ কাটে মোর এই অপরাধে।।
ছিল চৌদ্দজন যে প্রধান সেনাপতি।
যুঝিবারে খর সবে দিল অনুমতি।।
রামেরে মারিয়া আন লক্ষ্মণ সহিত।
গৃধ্র আর কাক খাক তাহার শোণিত।।
যার ঠাঁই ভগিনী পাইল অপমান।
তার রক্ত মাংস সবে কর গিয়া পান।।
লইয়া ঝক্ড়া শেল মুষল মুদগর।
সেনাপতি ধায় যেন যমের কিঙ্কর।।
মার মার করিয়া ধাইল নিশাচর।
কোলাহলে পূর্ণিত হইল দিগন্তর।।
সকলে আইল যথা শ্রীরাম লক্ষ্মণ।
বাহিরে আসিয়া রাম কহেন তখন।।
ফল মূল খাই মাত্র, বাস করি বনে।
এই মত বিনয়ে কহিল রঘুবর।
রামেরে ডাকিয়া বলে দুষ্ট নিশাচর।।
তপস্বীর মত থাক, কে করে বারণ।
ভগিনীর নাক কাণ কাট কি কারণ।।
যেই কর্ম্ম করিলি জীবনে নাহি সাধ।
কোন্ মুখে বলিস, না করি অপরাধ।।
তোমরা দুই মনুষ্য আমরা বহু জন।
আমাদের অস্ত্রাঘাতে মরিবি এখন।।
এই মত কহিয়া সে সকল রাক্ষস।
করে বস্ত্র বরিষণ করিয়া সাহস।।
এক বালে রামচন্দ্র কাটেন সকল।
খণ্ড খণ্ড হইল সে মুদগর মুষল।।
চতুর্দ্দশ বাণ রাম পূরেন সন্ধান।
চতুর্দ্দশ নিশাচর ত্যজিল পরাণ।।
নেউটিয়া বাণ আইল শ্রীরামের তূণে।
রাক্ষস বিনাশ হয় শ্রীরামের গুণে।।
কৃত্তিবাস পণ্ডিত বিদিত সর্ব্বলোকে।
পুরাণ শুনিয়া গীত রচিত কৌতুকে।।