জলপাইগুড়ি সার্কিট হাউসে আগেই খবর দেওয়া ছিল, সেখানে আমরা সেরে নিলাম মধ্যাহ্নভোজ। জলপাইগুড়ি পুরোনো শহর, আগে এসেছি কয়েকবার। একবার প্ল্যান্টার্স ক্লাবে ছিলাম, সেবারের কথাই মনে পড়ে বেশি। সেবারে সন্তোষকুমার ঘোষের সঙ্গে এসেছিলাম। এক দুপুরে সাহিত্যের সামান্য কোনও বিষয় নিয়ে তর্ক শুরু হল, তার থেকে প্রবল ঝগড়া, তারপর কথা বন্ধের প্রতিজ্ঞা। বিকেল থেকে সত্যি আমরা আর পরস্পরের সঙ্গে কথা বলিনি। পাশাপাশি ঘর, প্রত্যেকটি বিরাট, পুরোনো বাড়ি, অনেক দেওয়ালের প্লাস্টার খসে-খসে পড়ছে। রাত এগারোটায় শুতে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পরেই দরজায় ঠকঠক শব্দ। প্রথমে সন্তোষদার তর্জন গর্জন, তারপর কাকুতি-মিনতি। সন্তোষদার খুব ভূতের ভয়, এরকম পুরোনো বাড়িতে উনি রাত্তিরে একা ঘরে ঘুমোতে পারবেন না। অত বুদ্ধিমান, বিদ্বান, যুক্তিবাদী মানুষটির ভূতের ভয়। তারপর রাত দুটো পর্যন্ত জেগে গল্প করেছিলাম।
সে অনেকদিন আগেকার কথা। এবারে আর জলপাইগুড়ি শহরে থামা হবে না। যাওয়ার পথে কিছু চানাচুর, বিস্কুট, আলুভাজা ও বোতলের জল কিনে নেওয়া হল। এই বোতলের জল ব্যাপারটা কয়েক বছর ধরে চালু হয়েছে মাত্র। তার আগে আমরা কত জায়গায় গেছি, কত আঘাটা-কুঘাটার জল খেয়েছি, কিছু তো হয়নি!
গাড়ির চালকের নাম জগদীশ। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি, সে খুব কম কথা বলে। কিন্তু প্রশ্ন করলে একটি দুটি শব্দে উত্তর দেয়। তবু একজন মানুষ আমাদের সঙ্গে তিন-চারদিন থাকবে, তার পরিচয় জানব না? এইটুকু জানা গেল, তারা দেশভাগের শিকার, বাবা-মা এসেছে পূর্ব বাংলার এক গ্রাম থেকে, জগদীশ অবশ্য কোনওদিন বাংলাদেশ দেখেনি। জিগ্যেস করলাম, বাবা-মায়ের কাছে নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বপুরুষের ভিটে-মাটির গল্প শুনেছে। সেখানে একবার যেতে ইচ্ছে করে না? জগদীশ মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, নাঃ।
যাত্রী মাত্র তিনজন। বিলেত-প্রবাসী আমার বন্ধু ভাস্কর দত্ত, আমার স্ত্রী স্বাতী আর আমি। বিদেশে কয়েকবারই গাড়ি নিয়ে বেড়ানো হয়েছে। তখন সামনের সিটটা আমার বাঁধা, কারণ আমি ম্যাপ দেখি, যে চালায় তাকে নির্দেশ দিই। এখানে ম্যাপ দেখার প্রশ্ন নেই, জগদীশ রাস্তা চেনে।
এই হাইওয়ে চলে গেছে অসমের দিকে। মাঝে-মাঝে আর্মি ট্রাকের কনভয়, এ ছাড়া অন্য যানবাহন কম। উত্তরবঙ্গে যতবারই আসি, মনে হয় যেন গাছ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। সরল, উন্নত বৃক্ষগুলি সব কোথায় গেল?
ফালাকাটা, হাসিমারা এইসব চেনা চেনা নাম চোখে পড়ে। একটা নদী পেরিয়ে যাই, তার নাম ডায়না। ইংল্যান্ডের রাজকুমারের প্রাক্তন স্ত্রী ডায়নাকে নিয়ে সম্প্রতি কত কাণ্ডই হয়ে গেল। সেই রকমই এক মেমসাহেবের নামে উত্তর বাংলার এই নদী।
আলিপুরদুয়ারের কাছাকাছি এসে আমাদের গাড়ি মূল সড়ক ছেড়ে দিল। দুপাশের চা বাগানের মধ্য দিয়ে রাস্তা। ভাস্কর অল্প বয়সেই বিলেত চলে যায়, উত্তরবঙ্গ দেখেনি। মাত্র গত বছরই আমার সঙ্গে শিলচর গিয়ে ও প্রথম চা-বাগান দেখেছে। যতবার দেখি, ততবারই চা বাগানের দৃশ্য আমার চোখ জুড়িয়ে দেয়।
একেকটা চা-বাগানের নামও বেশ মজার। যেমন, এখানে একটির নাম তুরতুরি। কোনও বাচ্চা মেয়ের নাম হিসেবে বেশ মানিয়ে যায়। স্বাতী ঠিক করে ফেলল, এরপর চেনাশোনা কারও কন্যাসন্তান জন্মালে সে ওই নাম রাখতে বলবে।
চা-বাগানের পর জঙ্গল। মার্চ মাসের শেষ, অধিকাংশ গাছেরই পাতা ঝরে গেছে, তাই জঙ্গল তেমন ঘন মনে হয় না এবং এই জঙ্গলের মধ্যে মধ্যেও বসতি আছে। শোনা যায় গোরুর গলার ঘণ্টা।
এক জায়গায় রাস্তাটা দু-দিকে বেঁকে গেছে। একদিকে জয়ন্তী, অন্যদিকে ভুটানঘাট। জয়ন্তী আমার চেনা, বেশ কয়েক বছর আগে সেখানকার ডাকবাংলোয় স্বাতী আর আমি চমৎকার দুটি দিন কাটিয়ে গেছি। এবারে আমাদের গন্তব্য ভুটানঘাট।
যতটা কাছে মনে হয়েছিল, তা নয়, এর পরেও অনেকটা পথ। ভুটানঘাট বনবাংলোয় পৌঁছতে আমাদের সন্ধে হয়ে গেল।
আগে থেকে খবর না দেওয়া থাকলে খাবার-দাবার কিছুই পাওয়া যায় না। রিজার্ভেশন না থাকলে ফরেস্ট বাংলোতে কেউ হুট করে এসে জায়গাও পাবে না। আমাদের অভ্যর্থনা জানাবার জন্য কয়েকজন তৈরিই ছিল। চা পাওয়া গেল পৌঁছবার প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই।
আগাগোড়া কাঠ দিয়ে তৈরি দোতলা বাড়ি। ওপরের দুটি ঘরই বেশ প্রশস্ত। এই বাংলোটির প্রধান সৌন্দর্য এর স্থান নির্বাচন ও পরিপার্শ্ব। নিবিড় জঙ্গল, পাশেই নদী, ওপারে ভুটানের পাহাড়। অস্পষ্ট অন্ধকারে নদীটি অবশ্য দেখা যাচ্ছে না, একটা ঝরনার মতো শব্দ শোনা যাচ্ছে। খানিক বাদে পাহাড়ের মাথায় চাঁদ উঠল।
বাংলোটি বেশ যত্ন করে এবং কার্পণ্য না করে বানানো হয়েছে। দোতলায় দুটি ঘরের সামনেই বেশ চওড়া বারান্দা, আরও একটা বসবার জায়গা, ইচ্ছে হলে পঁচিশ-ত্রিশজন মানুষও বসতে পারে। আপাতত আমরা তিনটিমাত্র প্রাণী। ইলেকট্রিসিটির জন্য তার এবং বালব লাগানো আছে, কানেকশন নেই। কিন্তু জেনারেটরে আলো জ্বালানো যায়, সদলবলে কোনও মন্ত্রীটন্ত্রি এলে নিশ্চয়ই সেই ব্যবস্থা হয়, কিন্তু এখন ডিজেল ফুরিয়ে গেছে বলে জেনারেটর চালানো যাচ্ছে না, সেজন্য চৌকিদার এসে দুঃখ প্রকাশ করল। তাতে বরং খুশিই হলাম আমরা, জঙ্গলের মধ্যে ইলেকট্রিকের আলো বড় কর্কশ লাগে।
আফ্রিকার সেরিংগেটি অরণ্যের একেবারে মাঝখানে আমি একটা হোটেলে ছিলাম একবার। হোটেল বটে, কিন্তু সেখানে ঘর নেই, সবই তাঁবু। জঙ্গলের মধ্যে অনেকখানি জায়গা জুড়ে একেকটা তাঁবু, পাশাপাশি নয়। একটা থেকে অন্যটা দেখাই যায় না। একটি সুইস কোম্পানি সেই হোটেলটা চালাচ্ছে, আধুনিক সব ব্যবস্থাই আছে, বড় তাঁবু সংলগ্ন একটা ছোট তাঁবুতে বাথরুম, সেখানে ঝকঝকে পরিষ্কার কমোড আছে, শাওয়ারে গরম জল-ঠান্ডা জল দুরকমই পাওয়া যায়। কিন্তু ইলেকট্রিক আলো রাখেনি। হ্যারিকেন। রাত্রিবেলা মনে হয়, গভীর জঙ্গলে
একা এক তাঁবুতে শুয়ে আছি, সন্ধেবেলা সেখানে নানারকম জন্তু-জানোয়ারের সঙ্গে একটা জলহস্তীকেও ঘুরে বেড়াতে দেখেছিলাম। রাত্রিবেলা কাছাকাছি বিভিন্ন ধরনের ফোঁসফোঁসানি শুনে এক মুহূর্তের জন্যও ঘুমোতে পারিনি।
উত্তরবঙ্গের জঙ্গল অবশ্য তেমন ভয়াবহ কিছু নয়। হাতির উপদ্রব আছে, হাতির সংখ্যা যথেষ্ট বেড়েছে। বাঘও কিছু আছে, কিন্তু আমাদের সুন্দরবনের বাঘের তুলনায় সেগুলি প্রায় গান্ধীবাদী। বরং লেপার্ডগুলো দুষ্ট প্রকৃতির। (বাংলায় আমরা লেপার্ডকে ভুল করে চিতাবাঘ বলি, কিন্তু এই দুটি প্রাণীতে অনেক তফাত। আসল চিতাবাঘ পৃথিবীর দ্রুততম প্রাণী হয়েও অনেক দেশ থেকেই লোপ পেয়ে গেছে। আমাদের দেশেও নেই)। উত্তরবঙ্গের লেপার্ডগুলো মাঝে-মাঝে চা-বাগানেও ঢুকে পড়ে, মানুষকে আক্রমণও করে। তবে একসঙ্গে দু-তিনটি মানুষ দেখলে তারা পালায়।
আমাদের অবশ্য রাত্রিবেলা বাংলোর বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল। তবু খাওয়া দাওয়ার পর ভাস্কর বলল, চল না নদীর ধারটা ঘুরে আসি, কী আর হবে? স্বাতীরও ভয়-ডর বলে কিছু নেই। না, কথাটা ঠিক হল না। স্বাতীর একটু-একটু ভূতের ভয় আছে, চোর-ডাকাতের ভয় আছে, কিন্তু রাত্রিবেলা জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবার ব্যাপারে প্রবল উৎসাহ। নীচে নেমে এসে দেখি, বাইরে বেরোবার সব দরজায় তালা বন্ধ।
সকালবেলা ঘুম ভাঙল ময়ূরের ডাকে। আবহাওয়া চমৎকার। গরম একেবারেই নেই, একটু একটু ঠান্ডা শিরশিরে ভাব, তা বেশ মনোরম। বারান্দায় বসে চা খেতে-খেতে দিনের আলোয় পরিপাটি ভালো করে দেখা গেল। সামনে তাকালে জঙ্গলে, কিছু কিছু গাছের পাতা আছে, অনেক গাছই পাতা-ঝরা। ডান পাশের নদীটাই চোখকে বেশি টানে। অনেকখানি চওড়া নদী, কিন্তু জল দেখা যায় না, বড় বড় পাথরের চাঁই শুধু। ওপারের দুটো পাহাড়ের মাঝখানে খানিকটা ফাঁক, সেই জায়গাটা বেশি আলোকিত মনে হয়। যেন পাহাড়ের আড়াল থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে আসছে আলো। সব মিলিয়ে একটা আকর্ষণীয় ছবি। প্রকৃতির ছবি যাঁরা আঁকেন, তেমন কোনও শিল্পী এই বিশেষ জায়গাটি দেখলে নিশ্চিত পছন্দ করতেন।
বাংলোর সামনে দিয়ে গেলে নদীটিতে জল চোখে পড়ে না। অথচ জলের শব্দ শোনা যাচ্ছে ঠিকই। বাংলোর পিছন দিক দিয়ে আরেকটা পথ আছে, মিনিট পাঁচ-সাত হাঁটতে হয়, তারপর হঠাৎ নদীটি চোখে পড়ে। হ্যাঁ, মাঝখান দিয়ে খানিকটা জলের প্রবাহ আছে ঠিকই, স্রোত আছে
বেশ, একটা জায়গায় ছোটখাটো একটা প্রপাতের মতো হয়ে আছে, সেই শব্দই বাংলো থেকে শোনা যায়।
সমতল বাংলায় আমরা যে ধরনের নদী দেখি, তার চেয়ে উত্তরবাংলার পাহাড়ি নদীগুলির চরিত্র একেবারে আলাদা। এইসব নদীর খাত বেশ বড়, কিন্তু সারা বছরের খুব কম সময়ই জল থাকে। বর্ষার সময় হঠাৎ ভরে যায়, আবার জল সরে যেতেও দেরি লাগে না। এমনও দেখেছি, এরকম একটা নদী, প্রায় শুকনো, দুয়েকদিন প্রবল বৃষ্টিতে একেবারে ভরে গেল, জল টগবগ করে ফুটছে, স্রোতে ভেসে যাচ্ছে গাছের ডালপালা। পাঁচ-ছ’দিন পরেই আবার আগের অবস্থা। এসব পাহাড়ে বরফ নেই, তাই নদীগুলি প্রায় বৃষ্টির বাহন। খাত বেশ চওড়া হলেও জলের ধারা একেক সময় একেক দিক থেকে বয়ে যায়। তাই দেখতে বড় হলেও আসলে এরা ছোট নদী।
নদীটার নাম কী? চৌকিদার, পাচক, দারোয়ান, কেউ কিছু বলতে পারে না। এ ওর মুখের দিকে তাকায়। এদের জীবনের গণ্ডি ছোট। সারাদেশে কত নদ-নদী আছে তা নিয়ে মাথা ঘামায় না। বাড়ির পাশে একটা নদীকেই ভালো করে জানে, চেনে সারা জীবন। সে নদী নদীই, তার আবার নামের কী দরকার।
একটু বেলায় আমরা গাড়ি নিয়ে বেরোলাম আরও জঙ্গলের দিকে।
জগদীশ একটা ব্যাপারে চিন্তিত। হঠাৎ হাতির পাল এসে পড়লে কী করা হবে? সরু রাস্তা, চট করে সব জায়গায় গাড়ি ঘোরানোও যায় না। হাতির পাল যদি গাড়িটাকে খেলনা ভেবে লোফালুফি শুরু করে দেয়? একটু আগেই আমাদের গভীর জঙ্গলের একটা জলাশয় ও সল্ট লিক দেখানো হয়েছে, যেখানে হাতি ও অন্যান্য জন্তু-জানোয়াররা আসে। সুতরাং হঠাৎ রাস্তা জুড়ে গাদাখানেক হাতি দেখতে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
আমি জগদীশকে ভরসা দিয়ে বললাম, তখন তুমি খুব জোরে-জোরে হর্ন বাজাবে। হাতিরা আওয়াজ পছন্দ করে না। নিজেরাই সরে যাবে।
ছোট-ছোট পাহাড় পেরিয়ে যাওয়া। পাশ দিয়ে নদীটা চলছে। কখনও চোখে পড়ে, কখনও হারিয়ে যায়। জঙ্গল মাঝে-মাঝে ফুরিয়ে গিয়ে অনেকখানি দিগন্ত। সেখানকার রুক্ষ পাহাড়ের ঢাল আর পাথুরে নদী দেখে মনে হয়, অনেক ওয়েস্টার্ন ছবিতে ঠিক এইরকম দৃশ্য দেখেছি। ওরা অনায়াসে এখানে এসে শু্যটিং করতে পারে।
এক সময় রাস্তাটা একদিকে বেঁকে শেষ হয়ে গেল নদীর ধারে। সেখানে কয়েকটা বাড়িঘর, ফরসা-ফরসা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা দৌড়াদৌড়ি করছে। নদীটার ওপারে একটা ঝুলন্ত সেতু, সেটা দোলে। এই সেতু পেরিয়ে ভুটানের মানুষজন যাওয়া আসা করে। এখানে নদীতে বেশ জল, বেশ স্রোত।
আমরা সেতু পেরিয়ে ওদিকে গেলাম। কিন্তু নদী তো শুধু ওপর থেকে দেখলেই হয় না, কাছে গিয়ে জল ছুঁতে হয়। এখানে সেরকম ঠিক সুবিধে নেই। আগেই ঠিক করেছি ফিরে গিয়ে বাংলোর পিছনদিক দিয়ে নদীর ঘাটে চা কিংবা আরও কড়া গোছের কিছু পানীয় নিয়ে বসতে হবে। যে-কোনও নদীর জলে খানিকক্ষণ পা ডুবিয়ে বসে থাকা স্বাতীর প্রিয় ব্যসন।
সেতুর ওপারে বিশেষ কিছু নেই, বরং এপারেই কয়েকটা দোকানপাট আছে। অতি সাধারণ দোকান, অন্য বিশেষ কিছুই নেই, শুধু কিছু মদের বোতল সাজানো আছে।
একটা দোকানে দোকানদার নিজেই বসে-বসে ছাং খাচ্ছে। পেট মোটা বাঁশের কোঁড়ার মধ্যে সর্ষের দানার মতো কীসের যেন বীজ ঢেলে দেয়, তারপর তাতে গরম জল ঢালতে হয়। পাইপ দিয়ে টানলে অনেকটা হালকা বিয়ারের মতো লাগে। মাঝে-মাঝে আরও গরম-গরম জল ঢালতে হয়।
ভাস্কর এসব কখনও দেখেনি। জিগ্যেস করল, ওগুলো কী রে? ব্যাপারটা শুনে বলল, আমি টেস্ট করে দেখব।
তিনজনেই বসে গেলাম দোকানের বারান্দায়। দোকানদারটি অতি সুপুরষ। মেদবর্জিত, দীর্ঘ শরীর। সে ভাঙা-ভাঙা হিন্দি জানে, তার সঙ্গে গল্প হতে লাগল। সে এরকম একটা অখ্যাত স্থানে অতি সামান্য দোকান চালায় বটে, কিন্তু, তার এক ছেলে জাপানে চাকরি করতে গেছে, সেজন্য তার বেশ গর্ব। ছেলের ছবি দেখাল। কথায়-কথায় সে আরও জানাল, সকাল থেকেই সে এই ছাং পান করে। সন্ধের সময় থামে। তার পরেই বিছানা।
একজন বয়স্কা মহিলা দোকানের মধ্যে টুকটাক কাজ করে যাচ্ছে আপনমনে। খানিক পরে একজন বেশ ফুটফুটে যুবতী সেখানে দাঁড়াল, আর আমাদের দিকে তাকিয়ে ফিকফিক করে হাসতে লাগল, স্বাতী সম্পর্কেই তার কৌতূহল বেশি। যেন সে জানতে চায়, দুজন পুরুষের সঙ্গে একজন মাত্র নারী কেন?
দোকানদারটিকে ভাস্কর জিগ্যেস করল, এ মেয়েটি কে?
সে বলল, আমার বউ।
ভাস্কর ঠিক বুঝতে না পেরে বলল, ভেতরে ওই যে একজন, সে তা হলে কে?
দোকানদারটি বলল, দুজনেই আমার বউ।
দোকানদারটি বলল, আরও বেশি করা যায়। আমাদের রাজার চারটে বউ। রাজার চেয়ে বেশি বউ কেউ রাখতে পারবে না। চারটে পর্যন্ত ঠিক আছে।
ভাস্কর জিগ্যেস করল, আমি যদি এখানে একটা বাড়ি ভাড়া করে থাকতে চাই, পারব?
দোকানদারটি উৎসাহের সঙ্গে বলল, হ্যাঁ, পারবেন না কেন? ইন্ডিয়ানরা থাকতে পারে।
ভাস্কর আবার জিগ্যেস করল, বিয়ে করতে চাইলে বউ পাব?
লোকটি একগাল হেসে বলল, তাও পাবেন। আমি জোগাড় করে দেব। থাকুন না।
ভাস্কর বলল, আমি তা হলে এখানেই থাকব ঠিক করলাম। আমার চারটে বউ চাই।
আমি স্বাতীর দিকে তাকালাম। নিজের স্ত্রী সামনে থাকলে এই ধরনের রসিকতা করার সাহসও আমার নেই।