অষ্টষষ্টিতম অধ্যায়
শকুন্তলোপাখ্যান—দুষ্মন্ত-বৃত্তান্ত
জনমেজয় কহিলেন, হে ব্রহ্মণ্! দেব, দানব, গন্ধর্ব্ব; অপ্সরা ও রাক্ষসগণের অংশাবতরণ সবিশেষ শ্রবণ করিলাম। এক্ষণে কুরুদিগের বংশ-বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত শ্রবণ করিতে বাসনা করি; মহাশয়! অনুগ্রহ করিয়া এই সকল ব্রহ্মর্ষিগণ-সন্নিধানে বর্ণন করুন।
বৈশম্পায়ন কহিলেন, হে ভরতকুলপ্রদীপ! পূর্ব্বকালে পুরু বংশের আদিপুরুষ দুষ্মন্ত নামে এক মহাবলপরাক্রান্ত মহীপাল ছিলেন। সেই মহাত্মা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়াদি চতুর্ব্বর্ণাধিষ্ঠিত ও যবনাদি ম্লেচ্ছজাতি-সমাকীর্ণ সসাগরা ধরার প্রধান চারি খণ্ডে এবং নানাবিধ দ্বীপ ও উপদ্বীপে একাধিপত্য করিতেন। তাঁহার রাজ্য শাসনসময়ে বর্ণসঙ্কর এবং পরদারনিরত বা অন্য কোন প্রকার পাপাসক্ত লোক ছিল না। সকলেই ধর্ম্মপরায়ণ ছিলেন; কি চৌর্য্যভয়, কি ক্ষুধাভয়, কি ব্যাধিভয়, তৎকালে কিছুই ছিল না; তৎকালীন সমস্ত লোকই সেই মহীপালকে আশ্রয় করিয়া অকুতোভয় ও অনন্যকর্ম্মা হইয়া কেবল স্বধর্ম্মে ও দৈবকর্ম্মে তৎপর থাকিত। তাঁহার অধিকারকালে ঘনাবলী যথাকালে বারিবর্ষণ করিত, শস্যসকল অতি সুরস হইত এবং পৃথিবী নানাবিধ রত্নে ও পশুযূথে পরিপূর্ণ থাকিত। সেই অসাধারণ-বলবীর্য্যসম্পন্ন রাজার শরীর বজ্রের ন্যায় দৃঢ় ছিল। তিনি স্বহস্তে মন্দর-পর্ব্বত উত্তোলন করিয়া অনায়াসে বহন করিতে পারিতেন এবং চতুর্ব্বিধ গদাযুদ্ধে ও সর্ব্বপ্রকার শস্ত্রযুদ্ধে অসাধারণ্য লাভ করিয়াছিলেন। সেই সর্ব্বলোক-সুবিখ্যাত প্রজারঞ্জক ভূপতি বলে বিষ্ণুতুল্য, তেজে ভাস্করতুল্য, গাম্ভীর্য্যে সাগরতুল্য ও সহিষ্ণুতায় ধরাতুল্য ছিলেন। তিনি ন্যায়পরতা ও ধর্ম্মপরতা দ্বারা সকল লোকের মনস্তুষ্টি সম্পাদন করিতেন।