০৬৭. কৃষ্ণমাহাত্ম্য

৬৭তম অধ্যায়

কৃষ্ণমাহাত্ম্য

“দুৰ্য্যোধন কহিলেন, “হে পিতামহ! সকল লোকে যাঁহাকে মহাভূত বলিয়া কীর্ত্তন করিয়া থাকে, এক্ষণে সেই বাসুদেব কোন স্থান হইতে পৃথিবীতে প্রাদুর্ভূত হইয়াছেন এবং কোথায় বা অবস্থান করিতেছেন, তাহা শ্রবণ করিতে অভিলাষ করি।”

“ভীষ্ম কহিলেন, “রাজন! বাসুদেব মহাভূত ও সকল দেবতার দেবতা; তাহা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নিরীক্ষিত হয় না। মহর্ষি মার্কণ্ডেয় তাঁহাকে মহৎ ও অদ্ভুত বলিয়া কীর্ত্তন করিয়া থাকেন; তিনি সমুদয় ভূত, ভূতাত্মা, মহাত্মা ও পুরুষোত্তম। সেই মহাত্মা পুরুষোত্তম পৃথিবী, জল, বায়ু ও তেজ এইসকল পদার্থ সৃষ্টি করিয়া সলিলে শয়ন করিয়াছিলেন। সেই সর্ব্বতেজোময় পুরুষ যোগবলে সলিলে শয়ন করিয়া মুখ হইতে অগ্নি, প্রাণ হইতে বায়ু এবং মন হইতে সরস্বতী ও বেদসমুদয় সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনি অগ্ৰে দেবতা, ঋষি ও লোকসকল সৃষ্টি করিয়া তাঁহাদিগের উৎপত্তি, প্ৰলয় ও সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনি ধর্ম্ম, ধর্ম্মজ্ঞ, বরদ ও সর্ব্বকামদাতা, তিনি কর্ত্তা ও কাৰ্য্য। তিনি প্রথমত জগতের স্রষ্টাকে সৃষ্টি করিয়া ভূত, ভবিষ্যৎ ও বর্ত্তমান—এই কালত্রয় কল্পনা করিয়াছেন; তিনি সকল ভূতের অগ্রজ সঙ্কর্ষণ ও শেষনাগকে সৃষ্টি করিয়াছেন; সকলে এই শেষনাগকে অনন্ত বলিয়া বিদিত আছেন, উনিই পর্ব্বত ও প্রাণীগণসমাকীর্ণ ধরা ধারণ করিতেছেন। জ্ঞানিগণ ধ্যানযোগে ইঁহাকে অবগত হইয়া মহাতেজঃ বলিয়া কীর্ত্তন করিয়া থাকেন। বাসুদেব ও ব্ৰহ্মাকে [অনন্তশয্যাশায়ী বিষ্ণুর কৰ্ণমালজাত মধু ও কৈটভতদীয় নাভিকমলস্থিত ব্ৰহ্মার বধে উদ্যত হইলে তিনি উহাদিগকে বিনাশ করেন।] বিনাশ করিতে উদ্যত, স্বীয় কৰ্ণেন্দ্ৰিয় সমুদ্ভব, ভয়ঙ্কর, ভীমকর্ম্মা, উগ্রযুদ্ধিসম্পন্ন, মধু[৫]নামক অসুরকে সংহার করিয়াছিলেন। দেব, দানব ও মনুষ্যেরা মধুনামক অসুরকে বিনাশ করিয়াছেন বলিয়া বাসুদেবকে মধুসূদন ও মহর্ষিরা তাঁহাকে জনার্দ্দন বলিয়া আহ্বান করিয়া থাকেন। তিনি বরাহ, নৃসিংহ ও বামন রূপ পরিগ্রহ করিয়াছিলেন, তিনি প্রাণীগণের পিতা, মাতা ও দুঃখহর; তাঁহা ভিন্ন সর্ব্বদুঃখসংহারক আর কেহ হয় নাই এবং হইবেও না। তিনি মুখ হইতে ব্ৰাহ্মণ, বহুযুগল হইতে ক্ষত্রিয়, উরুদ্বয় হইতে বৈশ্য এবং চরণযুগল হইতে শূদ্র উৎপাদন করিয়াছেন। তপানুষ্ঠানে নিরত হইয়া সকল দেহীর বিধাতা, ব্ৰহ্ম ও যোগস্বরূপ কেশবকে অমাবস্যা ও পূর্ণিমাতে অৰ্চনা করিলে অবশ্যই মহৎফল প্রাপ্ত হয়। মহর্ষিগণ তাঁহাকে পরমতেজ ও সর্ব্বলোকপিতামহ বলিয়া নির্দেশ করেন; তাঁহাকে আচাৰ্য্য, পিতা ও গুরু বলিয়া অবগত হইবে। কৃষ্ণ যাহার প্রতি প্ৰসন্ন হয়েন, তিনি অক্ষয় লোকসকল জয় করিয়া থাকেন। যিনি শঙ্কা উপস্থিত হইলে কেশবের শরণাপন্ন হয়েন এবং যিনি এই বিষয় পাঠ করেন, তাঁহার মঙ্গল ও সুখলাভ হয়। কৃষ্ণকে প্রাপ্ত হইলে মানবগণ কদাচ মুগ্ধ হয় না। হে মহারাজ! কেশব ভীত ব্যক্তিদিগকে প্রতিনিয়ত রক্ষা করিয়া থাকেন, ইহা সম্যক্‌ অবগত হইয়া ধর্ম্মরাজ যুধিষ্ঠির সর্ব্বপ্রকারে তাঁহার শরণাপন্ন হইয়াছেন।” ”