৬৩তম অধ্যায়
যযাতির মৃত্যুকথা
নারদ কহিলেন, হে সৃঞ্জয়! নহুষ তনয় যযাতিরেও মৃত্যুমুখে নিপতিত হইতে হইয়াছে। ঐ মহাত্মা শত রাজসূয়, শত অশ্বমেধ, সহস্র পুণ্ডরীক, শত বাজপেয়, সহস্র অতিরাত্র, অসংখ্য চতুর্ম্মাস্য, বহুবিধ অগ্নিষ্টোম ও অন্যান্য অসংখ্য ভূরিদক্ষিণ যজ্ঞের অনুষ্ঠান পূর্ব্বক পৃথিবীস্থ যাবতীয় ব্রাহ্মণদ্বেষী ম্লেচ্ছগণকে পরাজয় করিয়া তাহাদের সম্পত্তি সমুদায় বিপ্রসাৎ করিয়াছিলেন। ঐ মহাত্মা দেবাসুরের যুদ্ধ সময়ে দেবগণের সহায়তা করিয়া এই অবনী মণ্ডল চতুর্দ্ধা বিভাগপূর্ব্বক চারি জন ঋত্বিক্কে প্রদান, নানাবিধ যাগ যজ্ঞের অনুষ্ঠান এবং ধর্ম্মানুসারে দেবযানী ও শর্মিষ্ঠার গর্ভে অপত্যোৎপাদন করেন। ঐ অমরোপম মহীপাল দ্বিতীয় দেবরাজের ন্যায় আপনার ইচ্ছানুসারে সমুদায় দেবারণ্যে বিহার করিতেন।
পরিশেষে তিনি অশেষ ভোগ্য বস্তুর উপভোগেও বিষয়বাসনার শান্তি হইল না দেখিয়া, স্বীয় পুত্র পুরুরে রাজ্যে অভিষিক্ত করিয়া ভাৰ্য্যা সমভিব্যাহারে অরণ্যে প্রবেশ করেন। তিনি বন গমনকালে এই কথা কহিয়াছিলেন যে, এই ভূমগুলমধ্যে যাবতীয় ব্রীহি, যব, হিরণ্য, পশু ও স্ত্রী আছে, তৎসমুদায়ই যদি এক জনের উপভোগ্য হয়, তথাপি তাহার বিষয় বাসনা বিলুপ্ত হয় না; লোকে এই বিবেচনা করিয়া শান্তি পথ অবলম্বন করিবে। মহারাজ যযাতি এই রূপে সমুদায় বিষয় বাসনা পরিত্যাগ করিয়া ধৈর্য্য অবলম্বন পূর্ব্বক অরণ্যে প্রস্থান করিয়াছিলেন। হে সৃঞ্জয়! তোমা অপেক্ষা সমধিক তপ, সত্য, দয়া ও দানশালী এবং তোমার পুত্র অপেক্ষা অধিক পুণ্যবান্ সেই মহাত্মা যযাতিকেও কাল গ্রাসে নিপতিত হইতে হইয়াছে; অতএব তুমি অযাজ্ঞিক অধ্যয়নাদি রহিত স্বীয় পুত্রের নিমিত্ত আর অনুতাপ করিও না ।