কুড়ি চক্ষে বারিধারা লঙ্কা অধিকারী।
ইন্দ্রজিৎ মৈল বার্ত্তা পায় মন্দোদরী।।
আছাড় খাইয়া পড়ে মন্দোদরী রাণী।
উচ্চৈঃস্বরে কান্দে দশ হাজার সতিনী।।
স্পন্দহীনা মন্দোদরী ধরাতলে পড়ে।
শিরে জল ঢালে, কেহ দেখে নেড়েচেড়ে।।
নাসিকাতে হস্ত দিয়া দেখিছে সবাই।
কেহ বলে বেঁচে আছে কেহ বলে নাই।।
এলোথেলো কবরী-বন্ধন কেশপাশ।
চক্ষে বহে বারিধারা ঘন বহে শ্বাস।।
চৈতন্য পাইয়া বলে কোথা ইন্দ্রজিৎ।
দেখা দিয়া প্রাণ রাখ মায়ের ত্বরিত।।
আমি নানা উপাচারে, পূজিয়া যে মহেশ্বরে,
তোমা পুত্র পাইলাম কোলে।
কিছু দিন ছিল সুখ, এখন ঘটিল দুখ,
হেন পুত্র পড়ে রণস্থলে।।
কি মোর বসতি বাস, জীবনে কি ছার আশ,
কি করিবে ছত্র নবদণ্ড।
কি ছার পুষ্পক-রথ, বীরভাগ আছে যত,
তোমা বিনা সব লণ্ডভণ্ড।।
ভূমিতলে লোটাইয়া, পুত্রশোকে বিনাইয়া,
ক্রন্দন করিছে মন্দোদরী।
হায় পুত্র মেঘনাদ, কেন এত পরমাদ,
আজি যে মজিল লঙ্কাপুরী।।
শচী সহ শচীপতি, সুখেতে করুন স্থিতি,
স্বচ্ছন্দে ভুঞ্জুক দিনপতি।
ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর, হরষিত সুরবর,
লঙ্কার দেখিয়া এ দুর্গতি।
ইন্দ্রআদি দেবগণে, জিনিয়াছি তুমি রণে,
তব ডরে কেহ নহে স্থির।
কি কহিব বিভীষণে, শত্রু আনে যজ্ঞস্থানে,
তেঁই সে বধিল রঘুবীর।।
নানা গুণে রূপে ধন্যা, যক্ষ বিদ্যাধর-কন্যা,
বিবাহ দিলাম তোমা সহ।
তারা না পাইল সুখ, ভুঞ্জিবে কতেক দুখ,
কত সবে পতির বিরহ।।
অযোনি-সম্ভবা কন্যা, রামের সুন্দরী ধন্যা,
হরিয়া আনিল তোর বাপে।
সতী পতিব্রতা রাণী, ব্যর্থ নহে তাঁর বাণী,
এ লঙ্কা মজিল তাঁর শাপে।।
যজ্ঞ যবে পুত্র করে, দেবগণ কাঁপে ডরে,
কোন লোক না যায় সেখানে।
হেন পুত্র মরে যার, সকলি অসার তার,
হায় পুত্র কি মোর জীবনে।।
শ্রীরামের রূপ ধরি, সংসারে আইলা হরি,
করিতে রাক্ষসকুল নাশ।
নর নয় সীতাপতি, হেন লয় মোর মতি,
নাচাড়ী রচিল কৃত্তিবাস।।