ষষ্টিতম অধ্যায়
জনমেজয়-সভায় ব্যাসের আগমন
উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, “যিনি যমুনাদ্বীপে শক্তি পুৎত্র পরাশরের ঔরসে অবিবাহিতা সত্যবতীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন, যিনি জাতমাত্রে যাগক্রিয়া দ্বারা আপনার দেহপুষ্টি এবং নিখিল বেদ, বেদাঙ্গ ও ইতিহাস অধ্যয়ন করেন, তপোনুষ্ঠান, বেদাধ্যয়ন, ব্রত, উপবাস, সন্তান ও যজ্ঞ দ্বারা যাঁহাকে কেহই অতিক্রম করিতে পারেন নাই, যিনি এক বেদকে চতুর্দ্ধা বিভক্ত করেন, যিনি শান্তনু রাজার বংশরক্ষার্থে তদীয় ক্ষেত্রে পাণ্ডু, ধৃতরাষ্ট্র ও বিদুরকে উৎপাদন করেন, পাণ্ডবগণের পিতামহ সেই ত্রিলোকীবিশ্রুত মহাকবি মহর্ষি বেদব্যাস শিষ্যগণসমভিব্যাহারে পরীক্ষিৎপুৎত্র রাজা জনমেজয়ের সর্পযজ্ঞদর্শনার্থ সভামণ্ডপে প্রবেশপূর্ব্বক রাজগণ ও সদস্যগণে পরিবৃত সুখাসীন রাজা জনমেজয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন। জনমেজয় ঋষিকে সমাগত দেখিয়া সভ্যগণসহ সসম্ভ্রমে দণ্ডায়মান হইয়া উপবেশনার্থ সুবর্ণময় আসন প্রদান করিলেন। মহর্ষি আসনে অধ্যাসীন হইলে জনমেজয় বিধিপূর্ব্বক তাঁহার সৎকারাদি করিয়া পিতামহ ব্যাসদেবকে পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক দিলেন। মহর্ষি তদ্দত্ত পূজা প্রতিগ্রহ করিয়া পরম সন্তুষ্ট হইলেন। রাজা জনমেজয় এইরূপ ভক্তি-সহকারে পূজাবিধি সমাপন করিয়া সমীপে উপবেশনপূর্ব্বক তদীয় কুশলবার্ত্তা জিজ্ঞাসা করিলেন এবং মহর্ষিও রাজার অনাময়-প্রশ্ন [স্বাস্থ্যাদি কুশল-জিজ্ঞাসা] করিলেন। তৎপরে ভগবান্ বাদরায়ণি সভাস্থ ব্যক্তি কর্ত্তৃক পূজিত হইয়া তাঁহাদিগকে প্রতিপূজা করিলেন।
পরিশেষে রাজা জনমেজয় কৃতাঞ্জলিপুটে নিবেদন করিলেন, “ভগবান্! কুরু ওপাণ্ডব এই উভয়পক্ষের যাবতীয় বৃত্তান্ত আপনি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছেন, অতএব জিজ্ঞাসা করি, ইঁহাদিগের পরস্পর ভেদ ও তাদৃশ সর্ব্বভূতভয়ঙ্কর ঘোরতর সংগ্রাম-ঘটনার কারণ কি? এই সমস্ত বৃত্তান্ত আদ্যোপান্ত কীর্ত্তন করিয়া আমাদিগের একান্ত কৌতূহলাক্রান্ত চিত্তকে পরিতৃপ্ত করুন।” বেদব্যাস তাঁহার প্রার্থনাবাক্যে সন্তুষ্ট হইয়া সম্মুখোপবিষ্ট নিজ শিষ্য বৈশম্পায়নকে আদেশ করিলেন, “বৎস বৈশম্পায়ন! তুমি আমার নিকট কুরু ও পাণ্ডবদিগের ভ্রাতৃবিচ্ছেদ প্রভৃতি যাবতীয় বৃত্তান্ত শ্রবণ করিয়াছ, এক্ষণে তাহা কীর্ত্তন কর।” বিপ্রশ্রেষ্ঠ বৈশম্পায়ন উপাধ্যায়ের আদেশক্রমে রাজা, সদস্য ও অন্যান্য ভূপতিগণের সমক্ষে কুরু-পাণ্ডবদিগের গৃহবিচ্ছেদাদিঘটিত অতি প্রাচীন মহাভারতীয় ইতিহাস বলিতে আরম্ভ করিলেন।